ترجمة سورة البقرة

الترجمة البنغالية للمختصر في تفسير القرآن الكريم

ترجمة معاني سورة البقرة باللغة البنغالية من كتاب الترجمة البنغالية للمختصر في تفسير القرآن الكريم.

১. (الـــم) এ জাতীয় অক্ষরগুলোর মাধ্যমে কুরআনের কিছু কিছু সূরা শুরু করা হয়েছে। এগুলো এমন কিছু বর্ণ যেগুলোকে (أ، ب، ت) এর মতো পৃথক পৃথকভাবে উচ্চারণ করতে হয়। আসলে এ সবের কোন অর্থ হয় না। তবুও এগুলোর কিছু রহস্য এবং মর্ম তো অবশ্যই রয়েছে। কারণ, কুরআনে এমন কিছু পাওয়া যায় না যার কোন রহস্যই নেই। এখানে এগুলো উল্লেখ করার একটি বিশেষ রহস্য হলো এ কুরআনের মাধ্যমে আরবদেরকে এভাবে চ্যালেঞ্জ করা যে, এ কুরআন তো তোমাদের পরিচিত অক্ষরগুলো দিয়েই রচিত হয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে তোমরা নিজেরা সর্বদা কথাবার্তা বলে থাকো। এ জন্যই এ অক্ষরগুলো উল্লেখের পরপরই কুরআনুল-কারীমের কথাই উল্লেখ করা হয়। যেভাবে তা এ সূরাটিতেও উল্লিখিত হয়েছে।
২. এটি হলো এমন এক মহান কুরআন যাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। না তার নাযিল হওয়ার দিক থেকে, না তার শব্দ ও অর্থের দিক থেকে। অতএব, এটি আল্লাহর বাণী। যা মুত্তাকীদেরকে এমন এক পথের সন্ধান দেয় যা সরাসরি তাঁর নিকটই তাদেরকে পৌঁছিয়ে দেয়।
৩. মুত্তাকী হচ্ছে ওরা যারা গায়েবের প্রতি ঈমান আনে। আর তা হলো প্রত্যেক এমন জিনিস যে ব্যাপারে আল্লাহ কিংবা তাঁর রাসূল সংবাদ দিয়েছেন। কিন্তু মানুষের বাহ্যেন্দ্রীয় দিয়ে তা অনুধাবন করা যায় না। উপরন্তু তা থাকে মানুষের চোখের আড়ালে। যেমন: শেষ দিবস। যারা শরীয়তসম্মতভাবে শর্ত, রুকন, ওয়াজিব ও সুন্নতসহ সালাত আদায় করে। যারা আল্লাহর দেয়া রিযিক থেকে ফরয যাকাত কিংবা নফল সাদাকা আদায়ের মাধ্যমে তাঁরই প্রতিদানের আশায় তাঁর পথে খরচ করে।
৪. যারা কোন ধরনের তারতম্য না করে হে নবী! আপনার উপর আল্লাহর অবতীর্ণ ওহীতে ঈমান আনে। অনুরূপভাবে আপনার পূর্বের সকল নবীর উপর অবতীর্ণ কিতাব এবং সহীফাতেও। যারা আখিরাতের উপর দৃঢ় ঈমান রাখে এবং তাতে যে সাওয়াব ও আযাব হবে তার উপরও ঈমান রাখে।
৫. উক্ত গুণে গুণান্বিত ব্যক্তিরাই হিদায়েতের পথে সুপ্রতিষ্ঠিত। আর তারাই দুনিয়ায় শান্তি ও আখিরাতে তাদের কাক্সিক্ষত বিষয় তথা জান্নাত পেয়ে এবং অনাকাক্সিক্ষত বিষয় তথা জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে সফল হবে।
৬. যারা কাফির তারা সর্বদা ভ্রষ্টতা ও হঠকারিতারই উপর অবিচল। সুতরাং তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা, না করা উভয়ই সমান।
৭. কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন এবং বাতিলসহ তাকে তালাবদ্ধ করেছেন। এমনকি তিনি তাদের শ্রবণশক্তিতেও মোহর মেরে দিয়েছেন। ফলে তারা গ্রহণ ও আনুগত্যের নিয়তে কোন সত্য কথা শুনে না। তেমনিভাবে তিনি তাদের দৃষ্টিশক্তির উপরও পর্দা টেনে দিয়েছেন। তাই তারা সত্য অত্যন্ত সুস্পষ্ট হওয়ার পরও তা দেখতে পায় না। তাদের জন্য রয়েছে পরকালের কঠিন শাস্তি।
৮. কিছু মানুষ এমন রয়েছে যে, তারা বলে: “আমরা মু’মিন”। বস্তুতঃ তারা এ কথাটি তাদের জীবন ও সম্পদগুলো রক্ষার জন্য বলে বেড়ায়। এটা তাদের মুখের কথা; অন্তরের নয়। আসলে তারা মনেপ্রাণেই কাফির।
৯. তারা ঈমানকে প্রকাশ করে ও কুফরিকে লুকিয়ে রেখে আল্লাহ ও মু’মিনদেরকে ধোঁকা দিতে চায়। মূলতঃ তারা নিজেরা নিজেদেরকেই ধোঁকা দিচ্ছে। অথচ তারা তা বুঝতে পারছে না। আল্লাহ তা‘আলা তাদের গোপন ও গোপনতর সবই জানেন। উপরন্তু তিনি মু’মিনদেরকে তাদের অবস্থা ও বৈশিষ্ট্যাবলী জানিয়ে দিচ্ছেন।
১০. তাদের অন্তরে সন্দেহ বাসা বেঁধেছে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের সন্দেহ আরো বাড়িয়ে দেন। কারণ, প্রতিদান সাধারণত যে কারো আমল অনুযায়ীই হয়ে থাকে। তাদের জন্য জাহান্নামের তলদেশে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। কারণ, তারা আল্লাহ ও তাঁর বান্দাদের সাথে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। উপরন্তু তারা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আনীত বিধানের প্রতি মিথ্যারোপ করেছে।
১১. তাদেরকে যখন বলা হয়: কুফরি ও গুনাহর মাধ্যমে আল্লাহর জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করো না তখন তারা তা অস্বীকার করে। উপরন্তু তারা উল্টো ধারণা করে যে, তারাই সমাজ সংস্কারক ও সৎপরায়ণ ব্যক্তি।
১২. বস্তুতঃ তারাই ফাসাদ সৃষ্টিকারী। অথচ তারা তা বুঝে না। তারা এটাও বুঝে না যে, তাদের কর্মকাÐই মূলতঃ ফাসাদ।
১৩. তাদেরকে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাহাবীদের মতো ঈমান আনতে আদেশ করা হলে তারা ঠাট্টাচ্ছলে বলে: আমরা কি বোকাদের মতো ঈমান আনবো?! বস্তুতঃ তারাই বোকা। অথচ তারা সেটা উপলব্ধি করতে পারছে না।
১৪. তারা মু’মিনদের সাথে মিলিত হলে বলে: তোমরা যে ব্যাপারে ঈমান এনেছো আমরাও সেটাকে বিশ্বাস করি। বস্তুতঃ তারা উক্ত কথাটি মু’মিনদের ভয়েই বলে থাকে। কারণ, তারা মু’মিনদের থেকে পৃথক হয়ে নেতৃস্থানীয়দের সাথে একান্তে মিলিত হলে তারা ওদের অনুসরণের ক্ষেত্রে অবিচল থাকার কথা নিশ্চিত করে বলে: আমরা তো তোমাদের সাথেই আছি এবং তোমাদের মত ও পথেরই অনুসারী। তবে আমরা মু’মিনদের সাথে ঠাট্টাচ্ছলে প্রকাশ্যে একাত্মতা ঘোষণা করছি মাত্র।
১৫. আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদের সাথে তাদের ঠাট্টার বিনিময়ে তাদের সাথে ঠাট্টাই করছেন। আর এটিই হলো কাজের ধরন অনুযায়ী শাস্তি। এ জন্যই আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়াতে তাদের উপর মুসলমানদের বিধান জারি করলেন। আর পরকালে তিনি তাদেরকে তাদের কুফরি ও মুনাফিকির জন্য শাস্তি দিবেন। এভাবেই আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতি খানিকটা অবকাশ দিচ্ছেন। যাতে তারা ভ্রষ্টতা ও হঠকারিতায় আরো সীমা ছাড়িয়ে যায়। ফলে তারা অস্থির ও দ্বিধাগ্রস্থ অবস্থায় জীবন যাপন করে।
১৬. এরাই মূলতঃ বোকা। কারণ, তারা ঈমানের পরিবর্তে কুফরিকে গ্রহণ করেছে। ফলে তাদের ব্যবসা তথা কর্মকাÐ সফল হয়নি। যেহেতু তারা আল্লাহর প্রতি ঈমান খুইয়েছে এবং তারা সত্যেরও দিশা পায়নি।
১৭. আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকদের দু’টি দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। একটি আগুনের। আরেকটি পানির। আগুনের দৃষ্টান্তটি হলো, তারা সেই ব্যক্তির ন্যায় যে আগুন জ্বালিয়েছে আলো সংগ্রহের জন্য। যখন তার আলোটুকু ফুটে উঠেছে আর সে ধারণা করছে যে, সে তা দিয়ে উপকৃত হবে তখনই আগুনটা নিভে গেলো। তখন আগুনের আলো চলে গেলো ঠিকই। কিন্তু সে যা জ্বালানোর তা তো জ্বালিয়ে গেলো। ফলে তারা অন্ধকারেই থেকে গেলো। কিছুই তারা দেখতে পেলো না। না তারা কোন সঠিক পথের দিশা পেলো।
১৮. তারা বধির। সাদরে গ্রহণের মানসিকতা নিয়ে তারা কখনো কোন সত্য শুনতে পায় না। তারা মূক। সত্য কথাটি তারা কখনো বলতে পারে না। তারা অন্ধ। সত্য ব্যাপারটি তারা কখনো দেখতে পায় না। তাই তারা ভ্রষ্টতা থেকে কখনোই ফিরে আসতে পারছে না।
১৯. আর তাদের পানির দৃষ্টান্তটি হলো, তারা প্রচুর বৃষ্টির ন্যায় যা বর্ষিত হয় এমন মেঘমালা থেকে যাতে রয়েছে প্রচুর অন্ধকার, বজ্র ও বিজলি। যা কোন সম্প্রদায়ের উপর নাযিল হলে তারা চরম আতঙ্কিত হয়ে আঙ্গুলের মাথা দিয়ে নিজেদের কানগুলো বন্ধ করে রাখে। যাতে বজ্রধ্বনির বিকট শব্দ শুনে তাদের মরতে না হয়। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদেরকে বেষ্টন করেই আছেন। তারা কখনো তাঁকে কোনভাবে অক্ষম করতে পারবে না।
২০. বিজলির কঠিন চমকের দরুন তাদের চোখগুলো নষ্ট হওয়ার উপক্রম হলো। বিজলি চমকালে তারা সেটার আলোতে কিছুটা সামনে অগ্রসর হয়। আর যখন বিজলি চমকায় না তখন তারা অন্ধকারেই পড়ে থাকে। তখন তারা কোন দিকে নড়াচড়া করতে পারে না। আল্লাহ চাইলে তাঁর সার্বিক ক্ষমতা বলে সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার দরুন তাদের শ্রবণ ও দৃষ্টি শক্তি হরণ করতে পারতেন। ফলে তারা আর সে শক্তিগুলো ফিরে পেতো না। উক্ত দৃষ্টান্তে বৃষ্টি হলো কুরআন। আর বজ্রধ্বনির আওয়াজ হলো কুরআনের ধমকসূলভ বাণীসমূহ। আর বিজলির চমক হলো মাঝে মাঝে সত্য তাদের সামনে পরিস্ফুটিত হওয়া। এদিকে বজ্রধ্বনির বিকট শব্দ শুনে কান বন্ধ করা মানে সত্যকে অগ্রাহ্য করা ও তার ডাকে সাড়া না দেয়া। বস্তুতঃ মুনাফিক ও উক্ত দৃষ্টান্ত দু’টোর মাঝে সাদৃশ্য হলো লাভজনক জিনিস দিয়ে লাভবান না হওয়া। আগুনের দৃষ্টান্তে আগুন প্রজ্বলনকারীরা অন্ধকার আর দহন ছাড়া আর কিছুই পেলো না। আর পানির দৃষ্টান্তে বৃষ্টি পাওয়া লোকগুলো শুধু বজ্রধ্বনি আর বিজলিই পেলো যা তাদেরকে আতঙ্কিত ও বিরক্তই করলো। এ ছাড়া আর কিছুই নয়। ঠিক একইভাবে মুনাফিকরা ইসলামে কঠোরতা আর কড়াকড়ি ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায় না।
২১. হে মানুষ! তোমরা একমাত্র নিজেদের প্রভুর ইবাদাত করো। তিনি ভিন্ন অন্য কারো নয়। কারণ, তিনিই তো তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তী সকল জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। আশা করা যায় যে, তোমরা তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁর শাস্তি থেকে নিজেদের আত্মরক্ষা করতে পারবে।
২২. তিনিই তোমাদের জন্য জমিনকে বিস্তৃত বিছানা তথা বসবাস উপযোগী বানিয়েছেন। আর আকাশকে তার উপরে মজবুত ছাদ হিসেবে বানিয়ে রেখেছেন। তিনিই তোমাদের উপর বৃষ্টি অবতীর্ণ করেন নিয়ামত হিসেবে। যার মাধ্যমে তিনি জমিন থেকে বহু ধরনের ফল-ফলাদি তোমাদের রিযিক হিসেবে উৎপন্ন করেন। তাই তোমরা আল্লাহর সাথে কোন শরীক ও সমকক্ষ স্থাপন করবে না। অথচ তোমরা জানো যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ¯্রষ্টা নেই।
২৩. হে মানুষ! তোমরা যদি আমার বান্দা মুহাম্মাদের উপর নাযিলকৃত কুরআনের ব্যাপারে সন্দিহান হও তাহলে আমি তোমাদেরকে চ্যালেঞ্জ করছি সে কুরআনের সূরাগুলোর ন্যায় একটি সূরা বানিয়ে দেখাও। যদিও তা একান্ত ছোটই হোক না কেন। এমনকি এ ব্যাপারে সহযোগিতার জন্য তোমরা যথাসম্ভব নিজেদের সহযোগীদেরকে ডাকো যদি তোমরা নিজেদের দাবিতে সত্যবাদী হয়ে থাকো।
২৪. যদি তোমরা তা করতে না পারো - আর তোমরা তা কখনো করে দেখাতে পারবেও না - তাহলে তোমরা সে আগুনকে ভয় করো যা প্রজ্বলিত হবে শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরকে দিয়ে এবং তাদের পূজনীয় পাথর ও অন্যান্য পাথর দিয়ে। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা এ আগুনকে তৈরি করেছেন কাফিরদের জন্যই।
২৫. পূর্ববর্তী আয়াতে কাফিরদের প্রতি ধমক ও শাস্তির বর্ণনার পর এখানে মু’মিনদের পুরস্কারের ঘোষণা দিতে যেয়ে বলা হলো: হে নবী! আপনি সুসংবাদ দিন সেই মু’মিনদেরকে যারা নেক আমল করে। তাদেরকে এমন জান্নাত দিয়ে খুশি করানো হবে যার গাছ ও অট্টালিকার তলদেশ দিয়ে অনেকগুলো নদী প্রবাহিত হয়। যখন তাদেরকে সেখানকার পবিত্র ফলগুলো থেকে কিছু রিযিক হিসেবে দেয়া হবে তখন তারা দুনিয়ার ফলের সাথে অতি সাদৃশ্যের দরুন এ কথা বলে উঠবে: এগুলো তো সেগুলোর ন্যায় যেগুলো আমাদেরকে ইতোপূর্বে রিযিক হিসেবে দেয়া হয়েছে। বস্তুতঃ তাদেরকে সেই ফলগুলোই দেয়া হয়েছে যেগুলোর সাথে দুনিয়ার ফলগুলোর নাম ও বর্ণে মিল রয়েছে। যাতে তারা পূর্ব থেকে চিনেই সেগুলো গ্রহণ করতে পারে। তবে সেগুলোর স্বাদ ও মজা ভিন্ন হবে। উপরন্তু তাদের জন্য জান্নাতে রয়েছে পূতপবিত্র স্ত্রীগণ। যারা এমন সকল দোষ থেকে পবিত্র যেগুলোকে মানুষ এমনিতেই ঘৃণা করে এবং দুনিয়ার স্ত্রীদের মাঝে যেগুলোকে বিশ্রী বলেই ধারণা করা হয়। তারা সেখানে চিরস্থায়ী নিয়ামতের মাঝে থাকবে; যা কখনো শেষ হবে না। তা দুনিয়ার নিয়ামতের মতো নয়, যা একদিন ফুরিয়ে যাবে।
২৬. নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা যে কোন ধরনের দৃষ্টান্ত দিতে লজ্জাবোধ করেন না। তিনি কখনো মশার দৃষ্টান্তও দেন। তেমনিভাবে তার চেয়ে আরো বড় কিংবা ছোট কোন কিছুর। আর মানুষজন এ ব্যাপারে দু’ প্রকার: কেউ মু’মিন আবার কেউ কাফির। যারা মু’মিন তারা বিশ্বাস করে এবং এ কথা বলে যে, এ দৃষ্টান্তের পেছনে অবশ্যই আল্লাহর কিছু হিকমত রয়েছে। আর কাফিররা ঠাট্টাচ্ছলে একে অপরকে জিজ্ঞাসা করে যে, আল্লাহ তা‘আলার এ নি¤œ শ্রেণীর প্রাণীগুলো যেমন: মশা, মাছি, মাকড়শা ইত্যাদি দিয়ে দৃষ্টান্ত দেয়ার মানে কী? তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে উত্তর আসে। এ দৃষ্টান্তগুলোর মাঝে অনেক ধরনের হিদায়েত ও উপদেশ বাণী নিহিত রয়েছে। উপরন্তু তাতে রয়েছে মানুষের জন্য পরীক্ষা। বস্তুতঃ তাদের মাঝে এমন কিছু লোক রয়েছে যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা এ দৃষ্টান্তগুলোর মাধ্যমে পথভ্রষ্ট করেন। কারণ, তারা এগুলোকে নিয়ে বিশেষভাবে চিন্তা করা থেকে নিজেদের মুখ ফিরিয়ে নেয়। মূলতঃ তাদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। আবার মানুষের মাঝে এমন কিছু লোকও রয়েছে যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা এগুলোর মাধ্যমে হিদায়েত দিয়ে থাকেন। কারণ, তারা এগুলোর মাধ্যমে সঠিক উপদেশটি গ্রহণ করে থাকে। তারাও সংখ্যায় কম নয়। তবে আল্লাহ তা‘আলা এগুলোর মাধ্যমে তাদেরকেই পথভ্রষ্ট করেন যারা এর উপযুক্ত। আর তারা হলো যারা তাঁর আনুগত্যের বাইরে। যেমন: মুনাফিকরা।
২৭. যারা আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা সুদৃঢ় করার পর ভঙ্গ করে। যেমন: একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করা এবং সে রাসূলের অনুসরণ করা যার সংবাদ ইতোপূর্বে অন্যান্য রাসূলগণ দিয়েছেন। আর যারা এমন সম্পর্ককে নষ্ট করে যা রক্ষা করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা আদেশ করেছেন। যেমন: আত্মীয়তার বন্ধন। মূলতঃ তারাই অন্যায়-অবিচারের মাধ্যমে জমিনে ফাসাদ বিস্তারের প্রচেষ্টা চালায়। তাই তারাই দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্ভাগা।
২৮. হে কাফিররা! তোমাদের ব্যাপারটি খুবই আশ্চর্যজনক। তোমরা কীভাবে আল্লাহর সাথে কুফরি করছো? অথচ তোমরা তাঁর শক্তিমত্তার নিশানাসমূহ তোমাদের নিজেদের মধ্যেই দেখতে পাচ্ছো। তোমরা তো একদা কিছুই ছিলে না। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং জীবন দিয়েছেন। এরপর তিনি আবারো তোমাদেরকে মৃত্যু দিবেন। অতঃপর তিনি আবারো তোমাদেরকে জীবিত করবেন এবং তিনি তোমাদের কর্মকাÐের হিসাব নেয়ার জন্য তোমাদেরকে অবশেষে তাঁর কাছেই ফিরিয়ে আনবেন।
২৯. আল্লাহ তা‘আলা এককভাবেই তোমাদের জন্য দুনিয়ার সবকিছু তৈরি করেছেন। যেমন: নদ-নদী, গাছপালা ইত্যাদি। যা কখনো গুনে শেষ করা যাবে না। এসবকিছু দ্বারা তোমরা সর্বদা উপকৃত হচ্ছো। বস্তুতঃ তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীর সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন। ফলে তোমরা সেসব নিজেদের কাজে লাগাতে পারছো। অতঃপর তিনি উপরের দিকে উঠে সেখানে সুদৃঢ় সাতটি আকাশ প্রতিষ্ঠা করলেন। উপরন্তু তাঁর জ্ঞান সবকিছুকেই বেষ্টন করে আছে।
৩০. আল্লাহ তা‘আলা এ সংবাদ দিলেন যে, তিনি একদা ফিরিশতাদেরকে বললেন: তিনি পৃথিবীতে এমন এক মানব জাতি সৃষ্টি করতে চান যারা একে অপরের প্রতিনিধি হবে। যেন তারা আল্লাহর আনুগত্যের ভিত্তিতেই এ পৃথিবী পরিচালনার দায়িত্ব নিতে পারে। তখন ফিরিশতাগণ তাঁদের প্রতিপালককে এ ক্ষেত্রে তাঁর সঠিক উদ্দেশ্যটি জানার জন্য জিজ্ঞাসা করলেন যে, আদম সন্তানদেরকে একে অপরের প্রতিনিধি বানানোর পেছনে তাঁর কী হিকমত বা রহস্য রয়েছে; অথচ তারা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করবে। অবৈধভাবে রক্তপাত ঘটাবে। তাঁরা একথাও বললেন: আমরা তো আপনার অনুগত। আমরা সর্বদা আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনার মহত্ত¡ ও পরিপূর্ণতার মর্যাদা দিচ্ছি। এ ব্যাপারে আমরা কোন ত্রæটি করছি না। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের প্রশ্নের উত্তরে বললেন: নিশ্চয়ই আমি যা জানি তোমরা তা জানো না। আমি জানি তাদেরকে সৃষ্টি করায় কী মহান রহস্য অন্তর্নিহিত আছে এবং তাদেরকে একে অপরের প্রতিনিধি বানানোর মধ্যে কত মহৎ উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে।
৩১. আদম (আলাইহিস-সালাম) এর মর্যাদা বর্ণনার জন্য আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে প্রতিটি বস্তুর নাম শিক্ষা দিয়েছেন। চাই তা পশু হোক কিংবা জড় পদার্থ। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে সেসবগুলোর নাম ও অর্থ শিখিয়েছেন। অতঃপর তিনি সেসব বস্তুকে ফিরিশতাদের সামনে উপস্থাপন করে বললেন: তোমরা এগুলোর নাম আমাকে বলো। যদি তোমরা নিজেদের দাবিতে সত্যবাদী হয়ে থাকো যে, তোমরা এ সৃষ্টির চেয়ে অনেক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত।
৩২. তখন ফিরিশতাগণ নিজেদের ত্রæটির কথা স্বীকার করে এবং সকল শ্রেষ্ঠত্ব আল্লাহর দিকে ন্যস্ত করে বললেন: আমরা আপনার পবিত্রতা ও মহত্ত¡ বর্ণনা করছি হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার ফায়সালা ও শরীয়তের ব্যাপারে কোন ধরনের আপত্তি তোলা অশোভনীয়। কারণ, আমরা তো আপনার পক্ষ থেকে কোন কিছু জানানো ছাড়া বস্তুতঃ কিছুই জানি না। নিশ্চয়ই আপনি সর্বজ্ঞাতা। আপনার নিকট কোন কিছুই লুক্কায়িত নয়। আপনি প্রজ্ঞাময়। আপনি প্রতিটি জিনিসকে আপনার বৈষয়িক সিদ্ধান্ত ও শরীয়ত অনুযায়ী যথাস্থানেই রাখেন।
৩৩. তখন আল্লাহ তা‘আলা আদম (আলাইহিস-সালাম) কে বললেন: তুমি তাদেরকে এগুলোর নাম বলে দাও। যখন আদম (আলাইহিস-সালাম) তাঁদেরকে তাঁর প্রতিপালকের দেয়া জ্ঞানানুযায়ী সব বলে দিলেন তখন আল্লাহ তা‘আলা ফিরিশতাদেরকে বললেন: আমি কি তোমাদেরকে ইতোপূর্বে এ কথা বলিনি যে, নিশ্চয়ই আমি আকাশ ও জমিনের সকল বস্তু সম্পর্কে জানি। আর আমি জানি তোমরা নিজেদের যে অবস্থাগুলো প্রকাশ করেছো। আর যা তোমরা মনে মনে পোষণ করছো।
৩৪. আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেন যে, তিনি একদা ফিরিশতাদেরকে আদেশ করেছেন আদম (আলাইহিস-সালাম) কে সম্মানের সাজদা দিতে। ফলে তাঁরা আল্লাহর আদেশ পালনার্থে দ্রæত সাজদা করলেন। তবে জিন জাতীয় ইবলিস কিন্তু তা করেনি। সে আল্লাহর সাজদাহর আদেশের উপর আপত্তি জানিয়ে এবং আদম (আলাইহিস-সালাম) এর উপর অহংকার করে তাঁকে সাজদাহ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ফলে সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলো।
৩৫. আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আমি বললাম: হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী “হাওওয়া” জান্নাতে বসবাস করো। আর সেখান থেকে তোমরা ইচ্ছা মাফিক স্বাচ্ছন্দের সাথে খাদ্য গ্রহণ করো। যাতে কোন ধরনের অনিষ্ট কিছু নেই। উপরন্তু তোমরা জান্নাতের যে কোন জায়গায় বিচরণ করো। তবে তোমরা কখনো সে গাছের নিকটবর্তী হয়ো না। যে গাছের ফল খেতে আমি তোমাদেরকে ইতোপূর্বে নিষেধ করেছি। তা না হলে তোমরা আমার আদেশ অমান্য করে জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
৩৬. অতঃপর শয়তান তাঁদেরকে কুমন্ত্রণা দিতে আরম্ভ করলো। ব্যাপারটিকে তাঁদের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করলো। সে তাঁদেরকে প্রলোভন দেখিয়ে আমার নির্দেশ অমান্য করতে প্রবৃত্ত করলো। পরিশেষে তাঁরা সে গাছের ফল খেয়েই ফেললো। যা খেতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁদেরকে নিষেধ করেছেন। এর ফলশ্রæতিতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁদেরকে শাস্তিস্বরূপ জান্নাত থেকে বের করে দিলেন। যাতে তাঁরা অবস্থান করছিলেন। উপরন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাঁদেরকে ও শয়তানকে বললেন: তোমরা সবাই পৃথিবীতে নেমে যাও। নিশ্চয়ই তোমরা একে অপরের শত্রæ। আর এ পৃথিবীর বুকেই রয়েছে তোমাদের অবস্থান, স্থিতি ও সেখানকার সকল কল্যাণ উপভোগের ব্যবস্থা। যতক্ষণনা তোমাদের আয়ু শেষ হয় এবং কিয়ামত প্রতিষ্ঠা হয়।
৩৭. অতঃপর আদম (আলাইহিস-সালাম) আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁকে দেয়া কালিমাগুলো শিখে নিলেন। উপরন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে এগুলো দ্বারা দু‘আ করার বিষয়টি অন্তরে গেঁথে দিলেন। যা নি¤েœাক্ত আয়াতে উল্লিখিত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ]قَالاَ: رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَّـمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُوْنَنَّ مِنَ الْـخَاسِرِيْنَ[ [الأعراف: ٢٣] “তারা বললো: হে আমাদের রব্ব! আমরা তো নিজেদের উপর জুলুম করে ফেলেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা ও দয়া না করেন তাহলে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো”। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর তাওবা কবুল করলেন এবং তাঁকে ক্ষমা করে দিলেন। মূলতঃ তিনি তাঁর বান্দাদের দু‘আ বেশি বেশি কবুল করেন এবং তাদের প্রতি প্রচুর দয়া করেন।
৩৮. আমি তাদেরকে বললাম: তোমরা সবাই জান্নাত থেকে পৃথিবীতে নেমে যাও। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যারা আমার রাসূলদের মাধ্যমে পাঠানো আমার হিদায়েতের অনুসরণ করবে এবং আমার রাসূলদের উপর ঈমান আনবে পরকালে তাদের কোন ভয় থাকবে না। না দুনিয়ার জীবনের বঞ্চনার জন্য তারা কোন ধরনের চিন্তিত হবে।
৩৯. আর যারা আমার আয়াতগুলোর সাথে কুফরি করবে তারা হবে জাহান্নামী। যেখানে তারা চিরকাল থাকবে।
৪০. হে ইয়াকুব নবীর সন্তানরা! তোমরা নিজেদের উপর ধারাবাহিক নাযিলকৃত নিয়ামতসমূহকে স্মরণ করো এবং সেগুলোর কৃতজ্ঞতা আদায় করো। উপরন্তু আমার সাথে কৃত ওয়াদাগুলো তোমরা ভালোভাবে পূরণ করো। আর তা হলো আমার ও আমার রাসূলদের উপর ঈমান আনা এবং আমার দেয়া শরীয়তসমূহের উপর আমল করা। তোমরা যদি তা পূরণ করো তাহলে আমিও আমার দেয়া ওয়াদাটুকু পূরণ করবো। যা হবে দুনিয়ার সুসমৃদ্ধ জীবন ও পরকালের উত্তম প্রতিদান। আর তোমরা আমাকেই ভয় করো এবং আমার সাথে কৃত ওয়াদা কখনো ভঙ্গ করো না।
৪১. তোমরা সে কুরআনের উপর ঈমান আনো যা আমি মুহাম্মাদের উপর নাযিল করেছি। যার সাথে অবিকৃত তাওরাতের মিল রয়েছে আল্লাহর তাওহীদ ও মুহাম্মাদের নবুওয়াতের ক্ষেত্রে। তোমরা এর প্রথম অস্বীকারকারী হওয়া থেকে বিরত থাকো। আর তোমরা নেতৃত্ব ও পদের ন্যায় সামান্য কিছুর বিনিময়ে আমার আয়াতসমূহ বিক্রয় করে দিও না। বরং তোমরা আমার আযাব ও গযবকে ভয় করো।
৪২. আর তোমরা আমার রাসূলদের উপর নাযিলকৃত সত্যকে তোমাদের বানানো মিথ্যার সাথে একাকার করে দিও না। এমনিভাবে তোমাদের কিতাবে থাকা সত্যকে তোমরা লুকিয়ে রেখো না। আর তা হলো মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর গুণাবলী। অথচ তার ব্যাপারে তোমাদের রয়েছে যথেষ্ট জ্ঞান ও সত্যতার দৃঢ় বিশ্বাস।
৪৩. আর তোমরা রুকন, ওয়াজিব ও সুন্নতসহ পরিপূর্ণভাবে সালাত আদায় করো। উপরন্তু তোমাদের অধীনে থাকা সম্পদগুলোর যাকাত দাও। আর মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উম্মতদের মধ্য থেকে যারা আল্লাহর সামনে বিনয়ী হয় তাদের মতো তোমরাও তাঁর সামনে বিনয়ী হও।
৪৪. এ কাজটি কতই না নিকৃষ্ট যে, তোমরা অন্যদেরকে ঈমান ও নেক আমলের আদেশ করছো। কিন্তু তোমরা নিজেরাই তা করছো না। অথচ তোমরাই তাওরাত পড়ছো এবং সেখানে যে আল্লাহর দীনের অনুসরণ ও তাঁর রাসূলদেরকে সত্য মানার আদেশ করা হয়েছে তাও তোমরা ভালোভাবেই জানো। তোমরা কি নিজেদের বুদ্ধি খাটিয়ে লাভবান হওয়ার একটু চেষ্টাও করবে না?!
৪৫. তোমরা দীন ও দুনিয়ার সর্বাবস্থায় ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করো। যা তোমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করবে ও তাঁর কাছে পৌঁছিয়ে দিবে। ফলে আল্লাহ তোমাদের সহযোগিতা করবেন এবং তোমাদেরকে বিপদাপদ থেকে রক্ষা করবেন। তোমাদের কোন সমস্যা হলে তা দূর করবেন। তবে মনে রাখবে, নিশ্চয়ই সালাত খুবই ভারী ও কঠিন কাজ। তবে ওদের জন্য কঠিন নয় যারা নিজেদের প্রতিপালকের নিকট বিনয়ী।
৪৬. কারণ, তারা এ কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে যে, তাদেরকে একদা তাদের প্রতিপালকের নিকট যেতে হবে এবং কিয়ামতের দিন তাঁর সামনে উপস্থিত হতে হবে। সেখানে তিনি তাদেরকে তাদের আমলগুলোর প্রতিদান দিবেন।
৪৭. হে আল্লাহর নবী ইয়া’ক‚ব (আলাইহিস-সালাম) এর সন্তানরা! তোমরা আমার ধর্মীয় ও বৈষয়িক নিয়ামতগুলোর কথা স্মরণ করো। যা আমি তোমাদেরকে ইতিপূর্বে দিয়েছি। আর এ কথাও স্মরণ করো যে, আমি তোমাদেরকে নবুওয়াত ও ক্ষমতা দিয়ে তোমাদের যুগের লোকদের উপর তোমাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।
৪৮. আর তোমরা আল্লাহর সমূহ আদেশ-নিষেধ মেনে তোমাদের ও কিয়ামত দিবসের আযাবের মাঝে এক শক্ত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করো। যেদিন কেউ কারো কোন উপকারে আসবে না। না সেদিন আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কারো কোন উপকার করা যাবে কিংবা কাউকে কোন সমস্যা থেকে উদ্ধারের জন্য কারো কোন সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। না সেদিন কোন মুক্তিপণ গ্রহণ করা হবে। যদিও তা পৃথিবীর সমপরিমাণ স্বর্ণ হোক না কেন। সেদিন তাদের কোন সাহায্যকারীও থাকবে না। বস্তুতঃ সেদিন যদি কোন সুপারিশকারী কারো কোন কাজে না আসে, না কোন মুক্তিপণের ব্যবস্থা থাকে, না কোন সাহায্যকারী পাওয়া যায় তাহলে পালাবে কোথায়?!
৪৯. হে বনী ইসরাঈল! তোমরা স্মরণ করো সেই দিনের কথা যখন আমি তোমাদেরকে ফিরআউনের বংশের দাসত্ব থেকে মুক্তি দিলাম যারা তোমাদেরকে হরেক রকমের শাস্তি দিয়ে যাচ্ছিলো। তারা তোমাদের পুত্র সন্তানদেরকে জীবিত জবাই করতো। যাতে তোমাদের অস্তিত্ব টিকে না থাকে। উপরন্তু তারা তোমাদের কন্যা সন্তানদেরকে জীবিত রাখতো। যাতে তারা ওদের খিদমত করতে পারে। এটি ছিলো মূলতঃ তোমাদের জন্য অত্যন্ত লাঞ্ছনা ও অবমাননাকর। বস্তুতঃ তোমাদেরকে ফিরআউন ও তার সাঙ্গপাঙ্গের হাত থেকে রক্ষা করার মাঝে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য চরম একটি পরীক্ষা রয়েছে। যেন তোমরা তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো।
৫০. তোমরা আমার নিয়ামতগুলোর কথা স্মরণ করো যখন আমি তোমাদের জন্য সাগরের বুক চিরে কয়েকটি শুকনো রাস্তা বের করে দিয়েছি। যাতে তোমরা তা দিয়ে চলে যেতে পারো। এভাবেই আমি তোমাদেরকে বাঁচিয়ে দিলাম। আর আমি তোমাদের শত্রæ ফিরআউন ও তার বাহিনীকে তোমাদের চোখের সামনেই ডুবিয়ে সারলাম। তোমরা তা নিজেদের চোখেই দেখতে পেয়েছো।
৫১. তেমনিভাবে তোমরা স্মরণ করো সে নিয়ামতের কথা যখন আমি মূসার সাথে চল্লিশ রাতের ওয়াদা করেছিলাম। যাতে সে সময়ের মাঝে তাওরাতকে নূর ও হিদায়েত হিসেবে নাযিল করা সম্পন্ন হয়। অতঃপর তোমরা সে সময়ে গো-বাছুরের পূজা করলে। বস্তুতঃ তোমরা এ কাজ করে নিজেদের উপর অন্যায় ও অত্যাচার করছিলে।
৫২. অতঃপর আমি তোমাদের তাওবার পর তা ক্ষমা করে দিলাম। তোমাদেরকে সে জন্য কোন ধরনের পাকড়াও করলাম না। যেন তোমরা আল্লাহর সুন্দর ইবাদাত ও আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারো।
৫৩. অনুরূপভাবে তোমরা স্মরণ করো সে নিয়ামতের কথা যখন আমি মূসাকে তাওরাত দিয়েছিলাম। সত্য ও মিথ্যার মাঝে প্রভেদ সৃষ্টিকারী এবং হিদায়েত ও ভ্রষ্টতার মাঝে পার্থক্যকারী হিসেবে। যাতে তোমরা এরই মাধ্যমে সত্যের দিশা পেতে পারো।
৫৪. তেমনিভাবে তোমরা স্মরণ করো সে নিয়ামতের কথা যখন আমি তোমাদেরকে তথা তোমাদের পূর্বপুরুষদেরকে গো-বাছুর পূজা থেকে তাওবা করার তাওফীক দিয়েছিলাম। যখন মূসা (আলাইহিস-সালাম) তোমাদেরকে বলেছিলো: বস্তুতঃ তোমরা গো-বাছুর পূজা করে নিজেরাই নিজেদের উপর যুলুম করেছো। তাই তোমরা তাওবা করো এবং নিজেদের ¯্রষ্টার দিকে ফিরে যাও। আর সেটা এভাবে হবে যে, তোমরা একে অপরকে হত্যা করবে। এই তাওবা তোমাদের কুফরির মাঝে অবস্থান করা থেকে অনেক উত্তম যে কুফরি তোমাদেরকে চিরন্তন জাহান্নামের দিকে পৌঁছিয়ে দিবে। পরিশেষে তোমরা আল্লাহর সহযোগিতা ও তাওফীক পেয়ে তা করতে পেরেছো। আর আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের তাওবা কবুল করেছেন। কারণ, তিনি বেশি বেশি তাওবা গ্রহণকারী ও নিজের বান্দাদের প্রতি অতি দয়ালু।
৫৫. অনুরূপভাবে তোমরা সেদিনের কথাও স্মরণ করো যখন তোমরা মূসা (আলাইহিস-সালাম) এর সাথে বেয়াদবি করে বলেছিলো: আমরা কখনো তোমার উপর ঈমান আনবো না যতক্ষণ না আমরা প্রকাশ্য-দিবালোকে আল্লাহকে সরাসরি দেখতে পাবো। তাঁর মাঝে আর আমাদের মাঝে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। তখন জ্বলন্ত আগুন তোমাদেরকে পাকড়াও করে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিলো। আর তোমরা এক প্রচÐ বজ্রাঘাতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণহীন হয়ে গেলে। আর তোমরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে দেখছিলে।
৫৬. অতঃপর আমি তোমাদেরকে মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করলাম। যেন তোমরা এ নিয়ামতের জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারো।
৫৭. তেমনিভাবে আমি তোমাদেরকে আরো নিয়ামত দিয়েছি এভাবে যে, আমি তোমাদের উপর মেঘমালা প্রেরণ করে তোমাদেরকে সূর্যের তাপ থেকে ছায়া দিয়েছি। যখন তোমরা পৃথিবীতে ভবঘুরের মতো ঘুরছিলে। অনুরূপভাবে আমি তোমাদের উপর নাযিল করেছি মধুর ন্যায় সুমিষ্ট পানীয় এবং ছোট পাখির সুস্বাদু গোস্তের নিয়ামতগুলো যা দেখতে মরুভ‚মির কোয়েল পাখির ন্যায়। আর আমি তোমাদেরকে বলেছিলাম: তোমরা আমার দেয়া পবিত্র রিযিকগুলো খাও। কিন্তু তারা একসময় আমার এ অনুগ্রহগুলো অস্বীকার করেছিলো। তবে তারা এ অনুগ্রহগুলো অস্বীকার করে আমার কোন ক্ষতি করতে পারেনি। বরং তারা নিজেরাই নিজেদের উপর অবিচার করেছে। তারা এর কারণে নিজেদেরকে নেকী থেকে বঞ্চিত করেছে ও নিজেদেরকে শাস্তির সম্মুখীন করেছে।
৫৮. তোমরা সে নিয়ামতের কথা স্মরণ করো যখন আমি তোমাদেরকে বললাম: তোমরা বাইতুল-মাকদিসে প্রবেশ করো এবং তোমরা অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যে সেখানকার পবিত্র রিযিকগুলো ভক্ষণ করো। যেখান থেকেই তোমরা খেতে চাওনা কেন। আর তোমরা প্রবেশের সময় আল্লাহর নিকট অবনত হয়ে মাথা নিচু করে প্রবেশ করো। উপরন্তু আল্লাহর নিকট এভাবে প্রার্থনা করো যে, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দিন। তখন আমি তোমাদের প্রার্থনাগুলো কবুল করবো। আর যারা নিষ্ঠার সাথে সৎকর্ম করেছে তাদেরকে তাদের নিষ্ঠার ভিত্তিতে সাওয়াব দেবো।
৫৯. অতঃপর জালিমরা কথা ও কাজ সবটাই উল্টো করেছে। তারা সেখানে প্রবেশ করেছে জমিনে পাছা ঠেকিয়ে। আর বলেছে, আমরা যবের দানা চাই। বস্তুতঃ তারা এর দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার আদেশের সাথেই ঠাট্টা করেছে। তাই তার প্রতিদান স্বরূপ আল্লাহ তা‘আলা তাদের মধ্যকার জালিমদের উপর আকাশ থেকে শাস্তি নাযিল করেছেন। কারণ, তারা শরীয়তের সীমা অতিক্রম করেছে এবং আল্লাহর আদেশ লঙ্ঘন করেছে।
৬০. তোমরা সে নিয়ামতের কথা স্মরণ করো যখন তোমরা পথ হারিয়ে অস্থিরতা ও কঠিন তৃষ্ণায় ভুগছিলে। তখন মূসা (আলাইহিস-সালাম) তাঁর প্রভুর নিকট অতি বিনয়ের সাথে তোমাদের জন্য পানি চেয়েছিলেন। আর তখনই আমি তাঁকে আদেশ করলাম তাঁর লাঠি দিয়ে পাথরে আঘাত করতে। যখন তিনি পাথরে আঘাত করলেন তখনই সেখান থেকে তোমাদের বংশগুলোর সংখ্যানুযায়ী বারোটি ঝর্ণা ধারা সৃষ্টি হলো। আর সেগুলো থেকে পানি বের হওয়া শুরু করলো। তখন আমি তোমাদের প্রত্যেক বংশের জন্য তার নির্দিষ্ট পানি পান করার জায়গা বাতলিয়ে দিলাম। যাতে তোমাদের মাঝে কোন ধরনের দ্ব›দ্ব সৃষ্টি না হয়। আর আমি তোমাদেরকে বললাম: তোমরা আল্লাহর দেয়া রিযিক খাও ও পান করো। যা বিনা শ্রম ও পরিশ্রমে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের নিকট পাঠিয়েছেন। তোমরা এ পৃথিবীতে কোন ধরনের ফাসাদ সৃষ্টি করো না।
৬১. আর সে সময়ের কথাও স্মরণ করো যখন তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের নিয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়েছিলে। তোমরা তাঁর নাযিল করা মধুর ন্যায় সুমিষ্ট পানীয় এবং সুস্বাদু গোস্তের ছোট কোয়েল পাখি খাওয়ার ব্যাপারে বিরক্তি প্রকাশ করে বললে: আমরা এক জাতীয় খাবার আর সহ্য করতে পারছি না। অতঃপর তোমরা মূসা (আলাইহিস-সালাম) এর নিকট আবেদন করে বললে: হে মূসা! আপনি আল্লাহ তা‘আলার নিকট দু‘আ করুন যেন তিনি জমিনের ফসল থেকে তোমাদের জন্য শাক-সবজি, শসা - যা ক্ষীরার ন্যায় তবে ক্ষীরার চেয়ে একটু বড় - ডাল, পিয়াজ ও দানা জাতীয় খাদ্যের ব্যবস্থা করেন। তখন মূসা (আলাইহিস-সালাম) তোমাদের আবেদনের প্রতি তিরস্কার করে বললেন: তোমরা কি এ নি¤œ ও অনুন্নত জিনিস দিয়ে উত্তম ও সম্মানজনক তথা মধুর ন্যায় সুমিষ্ট পানীয় এবং সুস্বাদু গোস্তের ছোট কোয়েল পাখিকে পরিবর্তন করতে চাও। অথচ তা তোমাদের নিকট বিনা কষ্ট ও পরিশ্রমে আসতো। তোমরা এখান থেকে যে কোন এলাকার দিকে বের হয়ে যাও। সেখানকার ক্ষেতে ও বাজারে তোমরা যা চেয়েছো তা পাবে। তবে নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ এবং আল্লাহর নির্বাচিত বস্তু থেকে তাদের বার বার মুখ ফিরিয়ে নেয়ার দরুন তাদেরকে দরিদ্রতা, লাঞ্ছনা ও দুরবস্থা দীর্ঘস্থায়ীভাবে পেয়ে বসেছে। উপরন্তু তারা আল্লাহর রোষানলে পতিত হয়েছে। কারণ, তারা তাঁর ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তাঁর আয়াতসমূহের সাথে কুফরি করেছে। এমনকি তাঁর নবীদেরকে জুলুম ও অত্যাচার করে হত্যা করেছে। বস্তুতঃ তারা আল্লাহর অবাধ্য হয়েছে এবং তাঁর দেয়া সীমাগুলো লঙ্ঘন করেছে।
৬২. এ উম্মতের মধ্য থেকে যারা ঈমান এনেছে, তেমনিভাবে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর রিসালাতের পূর্বের উম্মতগুলোর মধ্যকার ইহুদি ও খ্রিস্টানদের মু’মিনরা এবং সাবিয়া তথা যারা কোন এক নবীর যুগে তাঁর অনুসরণ করেছে তারা যদি আল্লাহ ও পরকালের উপর ঈমান এনে থাকে তাহলে তাদের প্রতিপালকের নিকট তাদের জন্য সাওয়াব রয়েছে। উপরন্তু পরকালে তাদের কোন ভয় থাকবে না। এমনকি দুনিয়ার কোন ব্যাপার নিয়েও তারা চিন্তিত হবে না।
৬৩. আর তোমরা সে সময়ের কথাও স্মরণ করো যখন আমি তোমাদের কাছ থেকে দৃঢ় প্রতীজ্ঞা নিয়েছি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের উপর ঈমান আনার ব্যাপারে। আর তোমাদের মাথার উপর পাহাড় উঁচিয়ে ধরেছি তোমাদেরকে ভয় দেখানো এবং অঙ্গীকার অনুযায়ী আমল পরিত্যাগ করার শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করার জন্য। এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে আদেশ করেছি তোমাদের উপর নাযিলকৃত তাওরাতকে শক্ত ও মজবুত করে আঁকড়ে ধরার জন্য। যাতে এ ব্যাপারে কোন ধরনের অলসতা কিংবা অবহেলা করা না হয়। সুতরাং তাতে যা রয়েছে তা হিফাজত করো এবং তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করো তবেই তোমরা আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচতে পারবে।
৬৪. এ কঠিন অঙ্গীকারের পরও তোমরা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছো এবং আল্লাহর অবাধ্য হয়েছো। যদি আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে ক্ষমা না করতেন এবং তাওবা কবুল করে তোমাদের প্রতি বিশেষ দয়া না দেখাতেন তাহলে তোমরা এ অবাধ্যতা ও মুখ ফিরিয়ে নেয়ার দরুন অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হতে।
৬৫. তোমরা নিজেদের পূর্ববর্তীদের একটি ঘটনা নিশ্চয়ই ভালোভাবে ও সন্দেহাতীতভাবে জেনেছো। আর তা হলো, তারা শনিবারের দিন মাছ শিকার করে সীমালঙ্ঘন করেছে। অথচ মাছ শিকার করা সেদিন তাদের উপর হারাম করা হয়েছিলো। তারা শনিবারের আগের দিন জাল ফেলে এবং রবিবারের দিন তা উঠিয়ে নিয়ে মূলতঃ চালাকি করেছে। এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা এ চালাকদেরকে তাদের চালাকির শাস্তি স্বরূপ লাঞ্ছিত বানরে রূপান্তরিত করেছেন।
৬৬. আমি এ সীমালঙ্ঘনকৃত এলাকাটিকে এর আশপাশের এলাকাগুলোর জন্য শিক্ষণীয় বানিয়েছি। এমনকি যারা এর পরে আসবে তাদের জন্যও। যাতে কেউ তাদের ন্যায় আমল করে জাহান্নামের উপযুক্ত না হয়ে যায়। উপরন্তু আমি এটিকে আল্লাহভীরুদের জন্যও উপদেশ বানিয়েছি। যারা আল্লাহর শাস্তি এবং সীমালঙ্ঘনকারীদের থেকে তাঁর কঠিন প্রতিশোধ নেয়াকে ভয় পায়।
৬৭. তোমরা নিজেদের পূর্বপুরুষদের সেই ব্যাপারটিকেও স্মরণ করো যা তাদের ও মূসা (আলাইহিস-সালাম) এর মাঝে ঘটেছিলো। একদা মূসা (আলাইহিস-সালাম) তাদেরকে বললেন: আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে যে কোন একটি গাভী জবাই করতে বলেছেন। তারা তখন এ কাজটি দ্রæত না করে বরং গাদ্দারি করে বললো: আপনি কি আমাদেরকে ঠাট্টার পাত্র পেয়েছেন। তখন মূসা (আলাইহিস-সালাম) বললেন: না, তা কখনোই নয়। বরং আমি আল্লাহ তা‘আলার নিকট এ ব্যাপারে আশ্রয় কামনা করছি যে, আমি যেন কখনো তাঁর সম্পর্কে মিথ্যা না বলি এবং মানুষকে নিয়ে ঠাট্টা না করি।
৬৮. তারা বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য মূসা (আলাইহিস-সালাম) কে বললো: আপনি নিজ প্রতিপালকের নিকট এ আবেদন করেন যে, তিনি যেন আমাদেরকে গাভীটির ধরন বলে দেন। তা কেমন হবে? তখন তিনি তাদেরকে বললেন: আল্লাহ তা‘আলা বলছেন: সেটি এমন এক গাভী হবে যা বেশি বড়ও হবে না; আবার ছোটও হবে না। বরং তা এ দু’য়ের মধ্যবর্তী সাইজের হবে। অতএব, তোমাদের প্রভুর আদেশ দ্রæত পালন করো।
৬৯. তারা কিন্তু তাদের ঝগড়া ও হঠকারিতা দেখিয়েই যাচ্ছিলো। তারা মূসা (আলাইহিস-সালাম) কে বললো: আপনি নিজ প্রতিপালকের নিকট এ আবেদন করেন যে, তিনি যেন আমাদেরকে গাভীটির রং বলে দেন। তা কেমন হবে? তখন তিনি তাদেরকে বললেন: আল্লাহ তা‘আলা বলছেন: সেটি হলো খুব গাঢ় হলুদ বর্ণের একটি গাভী। যা প্রতিটি দর্শককে মোহিত করবে।
৭০. আবারো তারা হঠকারিতা দেখিয়ে বললো: আপনি আপনার প্রতিপালককে গাভীটির আরো কিছু বৈশিষ্ট্য বলতে বলুন। কারণ, উক্ত বৈশিষ্ট্যমÐিত গাভী তো অনেকই আছে। আর আমরা সেগুলো থেকে বস্তুতঃ কোন একটিকে নির্দিষ্ট করতে পারছি না। তবে তারা একথাটি নিশ্চিত করেই বললো যে, আল্লাহ চাহে তো তারা এবার নির্দিষ্ট গাভীটি চিনতে পারবে।
৭১. তখন মূসা (আলাইহিস-সালাম) তাদেরকে বললেন: আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, গাভীটি এমন হতে হবে যে, তা দিয়ে কখনো চাষাবাদ করা হয়নি। এমনকি তা দিয়ে কখনো পানিও সেচ দেয়া হয়নি। তাতে কোন ধরনের খুঁত থাকতে পারবে না। এমনকি হলুদ বর্ণ ছাড়া অন্য বর্ণের কোন চিহ্নও থাকতে পারবে না। তখন তারা বলে উঠলো, এইমাত্র আপনি গাভীটির সূ² বর্ণনা দিয়েছেন। এখন আমরা সত্যিই পুরোপুরিভাবে গাভীটি চিহ্নিত করতে পারবো। পরিশেষে তারা গাভীটি যবাই করলো। অথচ তাদের ঝগড়া ও হঠকারিতার দরুন গাভীটি যবাই না করারই উপক্রম হয়েছিলো।
৭২. স্মরণ করো তোমরা সে সময়ের কথা যখন তোমরা নিজেদেরই একজনকে হত্যা করেছিলে। অতঃপর তোমরা প্রত্যেকেই নিজের উপর থেকে উক্ত হত্যার অপবাদকে অস্বীকার করলে। এমনকি তোমরা সে জন্য একে অপরকে দুষতেও থাকলে। পরিশেষে তা ঝগড়ার রূপ ধারণ করলো। অথচ আল্লাহ তা‘আলা সে নিরপরাধ ব্যক্তির হত্যার ব্যাপারটি বের করে দিতে পারেন যা তোমরা লুকিয়ে রেখেছো।
৭৩. অতঃপর আমি তোমাদেরকে বললাম: তোমরা যবাইকৃত গাভীটির একাংশ দিয়ে মৃত ব্যক্তিকে আঘাত করো। এতে করে আল্লাহ তা‘আলা তাকে দ্রæত জীবিত করে দিবেন যাতে সে হত্যাকারীর পরিচয় দিতে পারে। তারা তা করার পর লোকটি তার হত্যাকারীর সংবাদ দিয়ে দিলো। বস্তুতঃ এ মৃতকে জীবিত করার ন্যায় আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন সকল মৃতকেই জীবিত করবেন। মূলতঃ তিনি তোমাদেরকে তাঁর কুদরতের সুস্পষ্ট প্রমাণাদিই দেখাচ্ছেন। যাতে তোমরা তা বুঝে তাঁর উপর সত্যিকারার্থে ঈমান আনতে পারো।
৭৪. এ সকল হৃদয়স্পর্শী উপদেশ এবং অকাট্য অলৌকিক বিষয়াদি শুনা ও দেখার পরও তোমাদের অন্তর নরম হলো না। বরং তা আরো কঠিন হয়ে গেলো। এমনকি তা পাথরের ন্যায় বা তার চেয়েও আরো শক্ত হয়ে গেলো। ফলে তা নিজ অবস্থান থেকে একটুও নড়ে না। অথচ পাথর নিজ জায়গা থেকে সরে যায় এবং নিজ অবস্থান পরিবর্তন করে। কারণ, পাথরের মাঝে এমন কিছু পাথর রয়েছে যা থেকে পানির নদ-নদী বের হয়ে। আবার সেগুলোর মাঝে কিছু এমনও রয়েছে যেগুলো ফেটে জমিনে পানির চলমান ঝর্ণা তৈরি হয়। যা দিয়ে মানুষ ও পশু উপকৃত হয়। আবার সেগুলোর মাঝে এমন কিছু পাথরও রয়েছে যা আল্লাহর ভয়ে পাহাড়ের উপর থেকে পড়ে যায়। অথচ তোমাদের অন্তরগুলো তেমন নয়। বস্তুতঃ তোমাদের কর্মকাÐ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা গাফিল নন। বরং তিনি তা সবই জানেন এবং তিনি তোমাদেরকে সেগুলোর হিসেবে অচিরে প্রতিদানও দিবেন।
৭৫. হে মু’মিনরা! তোমরা কি ইহুদিদের হঠকারিতা এবং তাদের সঠিক অবস্থা জানার পরও এ কথার আশা করছো যে, তারা সত্যিই ঈমান আনবে এবং তোমাদের কথায় সাড়া দিবে। অথচ তাদের আলিমগণের একদল লোক তাওরাতে নাযিলকৃত আল্লাহর বাণীসমূহ শুনার পরও সেগুলোর শব্দ ও অর্থগুলোকে জেনেবুঝে পরিবর্তন করেছে। অথচ তারা এ অপরাধের ভয়াবহতা সম্পর্কে সম্যক অবহিত।
৭৬. ইহুদিদের বৈপরিত্য ও ষড়যন্ত্রের একটি রূপ হলো এই যে, তাদের কেউ যখন মু’মিনদের সাথে একত্রিত হয় তখন তারা নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সত্যতা এবং তাঁর রিসালাতের বিশুদ্ধতার কথা স্বীকার করে। আর এটাই বস্তুতঃ তাদের তাওরাতও সাক্ষ্য দেয়। তবে তারা যখন নিজেরা একে অপরের সাথে একত্রিত হয় তখন তারা এ স্বীকৃতিগুলোর ব্যাপারে একে অপরকে তিরস্কার করে। কারণ, মুসলমানরা তাদের এ নবুওয়াতের সত্যতার স্বীকারোক্তির দরুন তাদের উপরই সময় মতো প্রমাণ দাঁড় করায়।
৭৭. ইহুদিরা লাগাতার এ নিকৃষ্ট পথেই চলছে। মনে হয় তারা আল্লাহ যে তাদের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল কথা-কাজই জানেন সে ব্যাপারে গাফিল। অচিরেই তিনি তাদের এ সকল কর্মকাÐ তাঁর বান্দাদের কাছে প্রকাশ করে তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন।
৭৮. ইহুদিদের মাঝে এমন একটি দল রয়েছে যারা তাওরাত শুধু পড়তেই জানে তবে তার অর্থ ও উদ্দেশ্য তারা বুঝে না। তাদের কাছে শুধু কিছু মিথ্যা কথা রয়েছে যা তারা তাদের পূর্ব পুরুষ থেকে পেয়েছে। অথচ তারা মনে করে এগুলোই তাওরাত যা আল্লাহ তাদের উপর নাযিল করেছেন।
৭৯. তাই ধ্বংস ও কঠিন শাস্তি ওদের অপেক্ষায় রয়েছে যারা নিজের হাতে লিখে মিথ্যাভাবে বানিয়ে বলে: এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। তারা এর দ্বারা সত্য ও হিদায়েতের অনুসরণের পরিবর্তে দুনিয়ার সামান্য কিছু বিনিময় চায়। যেমন: সম্পদ ও ক্ষমতা। সুতরাং ধ্বংস ও কঠিন শাস্তি ওদের জন্য যারা আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বানিয়ে লিখেছে। তেমনিভাবে ধ্বংস ও কঠিন শাস্তি ওদের জন্যও যারা এগুলোর বিনিময়ে সম্পদ ও ক্ষমতা কামিয়েছে।
৮০. তারা মিথ্যা ও অহংকারবশতঃ বলে: অল্প কিছু দিনের জন্যই জাহান্নামের আগুন আমাদেরকে স্পর্শ করবে অথবা আমরা তাতে প্রবেশ করবো। হে নবী! আপনি তাদেরকে বলে দিন: তোমরা কি এ ব্যাপারে আল্লাহর কাছ থেকে নিশ্চিত ওয়াদা নিয়েছিলে। যদি ব্যাপারটি এমনই হয় তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ওয়াদা ভঙ্গ করবেন না। না কি তোমরা না জেনে আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলো।
৮১. ব্যাপারটি তারা যেমন মনে করে তেমন নয়। বরং আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক ওই ব্যক্তিকে শাস্তি দিবেন যে কুফরির ন্যায় পাপ করেছে এবং যাকে তার গুনাহসমূহ চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের সবাইকে চিরস্থায়ী জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন এবং তারা সেখানে চিরকাল থাকবে।
৮২. আর যারা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান এনেছে এবং সৎ আমল করেছে তাদের প্রতিদান হবে চিরস্থায়ী জান্নাত। যেখানে তারা চিরকাল থাকবে।
৮৩. হে বনী ইসরাঈল! তোমরা সে সুদৃঢ় চুক্তির কথা স্মরণ করো যা আমি তোমাদের থেকে গ্রহণ করেছি। যা ছিলো এই যে, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদাত করবে। তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। উপরন্তু তোমরা নিজেদের মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন ও অভাবগ্রস্তদের প্রতি সদাচরণ করবে। আর তোমরা মানুষের সাথে সুন্দর কথা বলবে। তথা তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ করবে আর অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে। তাতে কোন ধরনের কঠোরতা দেখাবে না। তোমরা নামাযকে পরিপূর্ণভাবে আদায় করবে যেভাবে তোমাদেরকে আদায় করতে বলা হয়েছে। তোমরা যাকাত দিবে তথা খুশিমনে যথাযথ প্রাপকদের নিকট তা বিতরণ করবে। অথচ তোমরা সে ওয়াদা পূরণ না করে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে।
৮৪. তোমরা সে সুদৃঢ় চুক্তির কথা স্মরণ করো যা তাওরাতে আমি তোমাদের থেকে গ্রহণ করেছি। আর তা হলো, তোমরা একে অপরের রক্তপাত করো না এবং একে অপরকে তার নিজ ঘর থেকে বের করে দিও না। যা মূলতঃ হারাম কাজ। তোমরা সে চুক্তির কথা অকপটে স্বীকার করেছিলে এবং তোমরা নিজেরাই এর সাক্ষী।
৮৫. অতঃপর তোমরা সে চুক্তি ভঙ্গ করলে। তোমরা একে অপরকে হত্যা করলে এবং তোমরা নিজেদেরই এক জনগোষ্ঠীকে তাদের ঘর থেকে বের করে দিলে। এমনকি তোমরা যুলুম ও অত্যাচারবশতঃ সে ব্যাপারে নিজেদের শত্রæরও সহযোগিতা নিলে। আবার তারা শত্রæর হাতে বন্দী হয়ে তোমাদের নিকট আসলে তাদেরকে ফিদিয়া দিয়ে শত্রæর হাত থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলে। অথচ তাদেরকে ঘর থেকে বের করে দেয়াই তোমাদের উপর হারাম ছিলো। কিভাবে তোমরা তাওরাতের কিছু অংশ তথা বন্দীদেরকে ফিদয়ার মাধ্যমে শত্রæর হাত থেকে ছাড়ানো ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারটিকে বিশ্বাস করলে আবার তারই কিছু অংশ তথা মানুষের রক্তের সুরক্ষা এবং তাদেরকে নিজেদের ঘর থেকে বের করে না দেয়ার ব্যাপারটিকে অস্বীকার করলে?! যারা এমন করবে তাদের জন্য দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ও অবমাননা রয়েছে। আর পরকালে তাদেরকে কঠিন শাস্তির দিকে নিক্ষেপ করা হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের কর্মকাÐ সম্পর্কে গাফিল নন। বরং তিনি সবই জানেন এবং অচিরেই তিনি এসবের প্রতিদানও দিবেন।
৮৬. এরাই আখিরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনকে গ্রহণ করেছে। বস্তুতঃ তারা নশ্বরকে অবিনশ্বরের উপর প্রাধান্য দিয়েছে। তাই পরকালে তাদের শাস্তি একটুও কমানো হবে না এবং সেদিন তাদের কোন সাহায্যকারীও থাকবে না।
৮৭. আমি মূসাকে তাওরাত দিয়েছি এবং তার পরপরই তার পরবর্তী অনেক রাসূল পাঠিয়েছি। আর ঈসাকে তাঁর সত্যতা প্রমাণের জন্য সুস্পষ্ট নিদর্শন দিয়েছি। যেমন: মৃতকে জীবিত করা এবং কুষ্ঠ ও জন্মান্ধকে ভালো করে দেয়া। উপরন্তু তাকে জিব্রীল ফিরিশতা দিয়ে শক্তিশালী করেছি। হে বনী ইসরাঈল! যখনই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের মনের বিপরীত কোন রাসূল আসে তখনই তোমরা সত্যকে অস্বীকার করো এবং আল্লাহর রাসূলদের চাইতে তোমরা নিজেদেরকে বড় মনে করো। তখন তোমরা তাদের কারো প্রতি মিথ্যারোপ করো। আবার কাউকে হত্যা করো।
৮৮. মুহাম্মাদকে অনুসরণ না করার ব্যাপারে ইহুদিদের এ অজুহাত ছিলো যে, তারা বলতো: আমাদের অন্তর সুরক্ষিত আছে। তাই তাতে না তোমার কোন কথা পৌঁছায়, না তা তোমার কোন কথা উপলব্ধি করে। বস্তুতঃ ব্যাপারটি তেমন নয় যা তারা ধারণা করছে। বরং আল্লাহ তা‘আলা তাদের নিজেদের কুফরির দরুন তাদেরকে তাঁর রহমত থেকে বিতাড়িত করেছেন। তাই তারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান খুব সামান্যই বিশ্বাস করে।
৮৯. যখন তাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে কুর‘আন এসেছে যা বিশুদ্ধ মূলনীতিতে তাওরাত ও ইঞ্জিলের সপক্ষে, আর তারা তা নাযিল হওয়ার পূর্বে বলতো: যখন কোন নবী পাঠানো হবে তখন আমরা তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন করে ও তাঁর অনুসরণের মাধ্যমে মুশরিকদের উপর বিজয়ী হবো। অথচ যখন তাদের নিকট তাদের চেনা-জানা বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), কুর‘আন ও সত্য এসেছে তখন তারা সেগুলোকে মেনে নিতে পারেনি। বরং তারা সেগুলোর সাথে কুফরি করেছে। অতএব, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি অবিশ্বাসীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ নাযিল হোক।
৯০. সত্যিই সে জিনিস অত্যন্ত নিকৃষ্ট যা তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনার পরিবর্তে গ্রহণ করেছে। আর তা হলো তারা যুলুম ও হিংসাবশতঃ আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান ও তাঁর রাসূলদের সাথে কুফরি করেছে। কারণ, কুরআন ও নবুওয়াত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর নাযিল হয়েছে। যেহেতু তারা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে কুফরি করেছে, আর ইতিপূর্বে তাওরাতকেও বিকৃত করেছে। তাই তারা আল্লাহর কঠিন রোষানলে পতিত হয়েছে। বস্তুতঃ যারা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নবুওয়াতের সাথে কুফরি করেছে তাদের জন্য কিয়ামতের দিন রয়েছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি।
৯১. যখন ইহুদিদেরকে বলা হয়, তোমরা আল্লাহর রাসূলের উপর নাযিলকৃত সত্য ও হিদায়েতের উপর ঈমান আনো তখন তারা বলে: আমরা নিজেদের নবীদের উপর নাযিলকৃত বিধানে বিশ্বাসী। তারা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর নাযিলকৃত বিধানে অবিশ্বাস করে। অথচ এ কুর‘আনই হলো সত্য যা তাদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিকৃত বিধানের সপক্ষে। আসলে তারা যদি সত্যিই তাদের উপর নাযিলকৃত বিধানের উপর বিশ্বাসী হতো তাহলে তারা এ কুর‘আনকেও বিশ্বাস করতো। হে নবী! আপনি তাদের উত্তরে বলে দিন: তাহলে তোমরা কেন ইতিপূর্বে আল্লাহর নবীদেরকে হত্যা করেছো যদি তোমরা তাঁদের নিয়ে আসা সত্যেই বিশ্বাসী ছিলে?!
৯২. নিশ্চয়ই তোমাদের রাসূল মূসা (আলাইহিস-সালাম) তোমাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছেন। যা তাঁর সত্যতা প্রমাণ করে। এরপরও তোমরা গো-বাছুরকে উপাস্য বানিয়ে নিলে। মূসা (আলাইহিস-সালাম) তাঁর প্রতিপালকের সাক্ষাতে যাওয়ার পর তোমরা যার পূজা করেছো। নিশ্চয়ই তোমরা আল্লাহর সাথে শিরক করে নিজেদের উপর অন্যায়-অবিচার করেছো। অথচ তিনিই হলেন ইবাদাতের একমাত্র উপযুক্ত; অন্য কেউ নয়।
৯৩. তোমরা সে সময়ের কথা স্মরণ করো যখন আমি মূসা (আলাইহিস-সালাম) এর অনুসরণ ও আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর নিয়ে আসা বিধানকে গ্রহণ করার ব্যাপারে তোমাদের থেকে সুদৃঢ় ওয়াদা নিয়েছি। আর তোমাদের মাথার উপর পাহাড় উঁচু করে তোমাদেরকে ভয় দেখিয়ে বলেছি: তোমরা আমার দেয়া তাওরাতকে সত্যতার সাথে ও মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো। আর তা গ্রহণ ও আনুগত্যের নিয়তে শ্রবণ করো। না হয় আমি তোমাদেরকে পাহাড় চাপা দেবো। তখন তোমরা বললে: আমরা কানে শুনলাম কিন্তু কাজে-কর্মে অমান্য করলাম। বস্তুতঃ কুফরির দরুন তোমাদের অন্তরে গো-বাছুর পূজা বিশেষভাবে জায়গা করে নিয়েছে। হে নবী! আপনি বলে দিন: তোমাদের ঈমান সত্যিই নিকৃষ্ট যদি তা আল্লাহর সাথে কুফরি শিখায়। কারণ, সত্যিকার ঈমান হলো যার সাথে কুফরির লেশমাত্রও নেই।
৯৪. হে নবী! আপনি বলে দিন: হে ইহুদিরা! যদি পরকালের জান্নাত তোমাদের জন্যই নির্দিষ্ট হয়ে থাকে; যাতে অন্য কোন মানুষ প্রবেশ করবে না এবং এ দাবিতে তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো তাহলে তোমরা মৃত্যু কামনা করো। যাতে তোমরা দ্রæত উক্ত মর্যাদা ও দুনিয়ার কষ্ট-ক্লেশ থেকে মুক্তি পেতে পারো।
৯৫. বস্তুতঃ তারা কস্মিনকালেও মৃত্যু কামনা করবে না। কারণ, তারা দুনিয়াতে আল্লাহর সাথে কুফরি করেছে। তাঁর রাসূলগণকে অবিশ্বাস করেছে। উপরন্তু তাঁর কিতাবসমূহকে বিকৃত করেছে। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাদের মধ্যকার যালিমদের সম্পর্কে ভালোভাবেই জানেন এবং তিনি অচিরেই সে অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার প্রতিদান দিবেন।
৯৬. হে নবী! আপনি অবশ্যই ইহুদিদেরকে দুনিয়ার ব্যাপারে অতি কঠিন লোভী হিসেবেই পাবেন। সেটা যত লাঞ্ছনাকর বা তুচ্ছই হোক না কেন। বরং তারা মুশরিকদের চেয়েও বেশি লোভী। যারা পুনরুত্থান ও প্রতিদান দিবসে বিশ্বাসী নয়। অথচ এরা কিতাবধারী। এমনকি তারা পুনরুত্থান এবং প্রতিদান দিবসেও বিশ্বাসী। বস্তুতঃ তাদের কেউ কেউ হাজার বছর বাঁচতে চায়। অথচ তার জানা নেই যে, তার বয়স যতই বাড়–ক না কেন তা কিন্তু আল্লাহর শাস্তি থেকে তাকে একটুও দূরে সরাতে পারবে না। বরং আল্লাহ তা‘আলা তাদের কর্মকাÐ সবই জানেন ও দেখছেন। তাঁর নিকট কোন কিছুই লুকায়িত নয়। অচিরেই তিনি তাদেরকে সেগুলোর প্রতিদান দিবেন।
৯৭. হে নবী! আপনি সেই ইহুদিকে জানিয়ে দিন যে বলে: নিশ্চয়ই ফিরিশতাদের মধ্যকার জিব্রীলই আমাদের বড় শত্রæ। আপনি বলুন: যে ব্যক্তি জিব্রীলের সাথে শত্রæতা পোষণ করে তার অবশ্যই জানা উচিত যে, ইনিই তো সে জিব্রীল যিনি আল্লাহর আদেশে আপনার অন্তরে কুর‘আন নাযিল করেছেন। যা পূর্ববর্তী সকল ঐশী কিতাবের সপক্ষে। যেমন: তাওরাত ও ইঞ্জীল। যা কল্যাণের পথ প্রদর্শনকারী। যা মু’মিনদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ামতের সুসংবাদ দেয়। সুতরাং যে ব্যক্তি এমন ফিরিশতার সাথে শত্রæতা পোষণ করে সে অবশ্যই পথভ্রষ্ট।
৯৮. যে ব্যক্তি আল্লাহ, তাঁর ফিরিশতা ও রাসূলগণের সাথে শত্রæতা পোষণ করে বিশেষ করে নিকটতম দু’ ফিরিশতা তথা জিব্রীল ও মিকাঈলের সাথে, তার এ কথা অবশ্যই জানা উচিত যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের ও অন্যান্যদের মধ্যকার সকল কাফিরের শত্রæ। আর আল্লাহ তা‘আলা যার শত্রæ হন সে অবশ্যই সুস্পষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত।
৯৯. হে নবী! আমি আপনার উপর নাযিল করেছি কিছু সুস্পষ্ট নিদর্শন। যা আপনার নিয়ে আসা নবুওয়াত ও ওহীর সত্যতা প্রমাণ করে। একমাত্র ধর্মদ্রোহী বা ধর্মত্যাগী ছাড়া আর কেউ এসব প্রামাণিক ও সুস্পষ্ট বিষয়গুলোকে অস্বীকার করতে পারে না।
১০০. ইহুদিদের অবস্থা এতোটাই নিকৃষ্ট যে, যখনই তাদের কাছ থেকে কোন অঙ্গীকার নেয়া হয় যেমন: তাদের কাছ থেকে তাওরাত কিতাবে অঙ্গীকার নেয়া হয়েছে: যখনই মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের মাঝে আসবেন তখন তাঁরই অনুসরণ করতে হবে। কিন্তু তারা তা করেনি। বরং যখনই মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের মাঝে এসেছেন তখনই তারা তাওরাতের সে চুক্তি ভঙ্গ করলো। বস্তুতঃ তাদের অনেকেই আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানে বিশ্বাস করে না। কারণ, সত্যিকার ঈমান চুক্তি রক্ষা করতে অবশ্যই বাধ্য করে।
১০১. যখন মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের নিকট আল্লাহর রাসূল হিসেবে আসলেন, আর তাওরাতে বর্ণিত বৈশিষ্ট্যের সাথে তাঁর হুবহু মিলও রয়েছে তারপরও তাদের এক দল তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তারা সেটাকে তাদের পেছনে ফেলে দিয়েছে। তার প্রতি তারা একটুও ভ্রƒক্ষেপ করেনি। তাদের দৃষ্টান্ত হলো এমন এক মূর্খের ন্যায় যে কিতাবে বর্ণিত কোন সত্য ও হিদায়েত দ্বারা লাভবান হয় না। এমনকি সে তার প্রতি যৎসামান্যও ভ্রƒক্ষেপ করে না।
১০২. যখন তারা তথা ইহুদিরা আল্লাহর ধর্ম ছেড়ে দিয়েছে তখন তারা এমন কিছুর অনুসরণ করেছে শয়তানরা তথা শয়তানের অনুসারীরা সুলাইমান (আলাইহিস-সালাম) এর যুগে মিথ্যাভাবে যার প্রচলন ঘটিয়েছিলো। শয়তানরা মনে করে যে, যাদুর মাধ্যমেই সুলাইমান (আলাইহিস-সালাম) তাঁর সিংহাসনকে স্থিতিশীল করেছিলেন। ইহুদিদের ধারণা, এর মাধ্যমে সুলাইমান (আলাইহিস-সালাম) কুফরি করেছেন। অথচ সুলাইমান (আলাইহিস-সালাম) কোনদিনই যাদুর আদান-প্রদান করার মতো কোন কুফরি করেননি। বরং শয়তানরাই কুফরি করেছে। তারা মানুষদেরকে যাদু শিক্ষা দিতো। বস্তুতঃ তারা মানুষদেরকে সে যাদুই শিক্ষা দিতো যা ইরাকের বাবেল শহরে হারূত-মারূত ফিরিশতাদ্বয়ের উপর নাযিল করা হয়েছিলো মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য। তাঁরা কাউকে যাদু শিক্ষা দেয়ার সময় এ বলে সুস্পষ্টভাবে সতর্ক করতো যে, আমরা তো কেবল মানুষের জন্য পরীক্ষা মাত্র। তাই তুমি যাদু শিখে কুফরি করো না। যারা তাঁদের উপদেশ গ্রহণ করতো না তারাই কেবল তাঁদের থেকে যাদু শিখতো। আর যাদুর মাঝে এমন একটি প্রকার রয়েছে যার আশ্রয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিপূর্বক তাদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটানো যায়। তবে যাদুকররা কখনোই আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কারো কোন ক্ষতি করতে পারে না। মূলতঃ তারা যা শিখে তা তাদের ক্ষতিই করবে বৈ কোন উপকার করতে পারবে না। ইহুদিরা এ কথা নিশ্চয়ই জানে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের পরিবর্তে যাদুকে গ্রহণ করেছে পরকালে তার জন্য কিছুই থাকবে না। বস্তুতঃ তারা নিজেদেরকে যার বিনিময়ে বিক্রি করেছে তা খুবই নিকৃষ্ট। তারা আল্লাহর ওহী ও শরীয়তের পরিবর্তে যাদুকে গ্রহণ করেছে। তারা যদি জানতো তাদের লাভ কিসে তাহলে তারা এমন নিকৃষ্ট কাজ ও সুস্পষ্ট ভ্রষ্টতায় ব্রতী হতো না।
১০৩. ইহুদিরা যদি আল্লাহর উপর সত্যিকার ঈমান আনতো এবং তাঁর অবাধ্যতা ছেড়ে তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁকে ভয় করতো তাহলে আল্লাহ তা‘আলার প্রতিদানই তাদের জন্য উত্তম হতো। যদি তারা তাদের লাভ কিসে তা বুঝতো তাহলে তারা এ পথই অবলম্বন করতো।
১০৪. আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে সুন্দর শব্দ চয়নের উপদেশ দিয়ে বলেন: হে ঈমানদারগণ! তোমরা رَاعِنَا তথা “আমাদের অবস্থার কথা চিন্তা করুন” এমন শব্দ বলোনা। কারণ, ইহুদিরা এতে বিকৃতি ঘটিয়ে এর খারাপ অর্থে তথা বোকা ও কথায় জড়তাগ্রস্ত অর্থে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে তা দিয়ে সম্বোধন করে। তাই আল্লাহ তা‘আলা এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। যাতে তারা এমন সুযোগ না পায়। বরং আল্লাহ তা‘আলা এর পরিবর্তে তাঁর বান্দাদেরকে বলতে বলেছেন: انْظُرْنَا অর্থাৎ আমাদেরকে দেখুন! তথা “একটু অপেক্ষা করুন; আমরা আপনার কথাটুকু বুঝে নেই”। কেননা, এ শব্দটি কোন সমস্যা ছাড়াই দ্ব্যর্থহীনভাবে সঠিক অর্থটি বুঝাচ্ছে। আর কাফিরদের জন্য রয়েছে কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
১০৫. কাফিররা তথা আহলে কিতাব ও মুশরিকরা কেউই চায় না যে, তোমাদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন কল্যাণ নাযিল হোক। কম-বেশি যাই হোক না কেন। তবে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রহমত তথা নবুওয়াত, ওহী ও ঈমান দিয়ে যাকে ইচ্ছা তাকেই বিশেষায়িত করে থাকেন। কারণ, তিনিই হলেন মহান অনুকম্পাশীল। তাঁর ইচ্ছা ব্যতিরেকে কোন সৃষ্টির নিকট কোন প্রকার কল্যাণ পৌঁছাতে পারে না। তাঁর নিজ অনুগ্রহেই তিনি রাসূল পাঠিয়েছেন এবং কিতাব নাযিল করেছেন।
১০৬. আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, তিনি যখনই কোন আয়াতের বিধান রহিত করেন কিংবা তার শব্দ উঠিয়ে দেন তথা মানুষকে তা ভুলিয়ে দেন তখনই তিনি উভয় জাহানের জন্য অতি লাভজনক এমন কিছু নিয়ে আসেন অথবা তার সমপর্যায়ের কোন কিছু নিয়ে আসেন। আর এটি হচ্ছে তাঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ভিত্তিতে। হে নবী! আপনি তো জানেনই, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সর্ব বিষয়ে শক্তিমান। তিনি যা চান তাই করেন। আর যা চান তাই আদেশ করেন।
১০৭. হে নবী! আপনি তো জানেনই, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আকাশ ও জমিনের মালিক। তিনি যা চান তাই ফায়সালা করেন। তিনি যা চান তাঁর বান্দাদেরকে তাই আদেশ করেন। আর যা চান তা থেকে তাদেরকে নিষেধ করেন। তিনি শরীয়তের যা রাখতে চান তাই রাখেন। আর যা রহিত করতে চান তাই রহিত করেন। আল্লাহ ছাড়া তোমাদের এমন কোন অভিভাবক নেই যে তোমাদের ব্যাপারগুলো তত্ত¡াবধান করবে। আর এমন কোন সাহায্যকারী নেই যে তোমাদের সমস্যা দূর করবে। বরং আল্লাহই তোমাদের সব বিষয়ের একমাত্র সক্ষম অভিভাবক।
১০৮. হে মু’মিনরা! তোমাদের স্বভাব এমন হওয়া উচিত নয় যে, তোমরা নিজেদের রাসূলের নিকট অবাস্তব এমন কিছু প্রশ্ন করবে যেমনিভাবে মূসা (আলাইহিস-সালাম) এর সম্প্রদায় তাঁকে প্রশ্ন করেছিলো। যেমন: তারা বলেছিলো: “আপনি আমাদেরকে সরাসরি আল্লাহর সাক্ষাৎ দিন” (নিসা: ১৫৩)। বস্তুতঃ যে ঈমানের পরিবর্তে কুফরিকে গ্রহণ করবে সে মধ্যম পন্থা তথা সোজা রাস্তা থেকে দূরে সরে যাবে।
১০৯. ইহুদি ও খ্রিস্টানদের অনেকেই হিংসাবশতঃ এ আশা করে যে, যেন তারা তোমাদেরকে ঈমান আনার পর আবার কুফরির দিকে ফিরিয়ে নিতে পারে। যেমন তোমরা ইতিপূর্বে মূর্তিপূজা করেছিলে। তারা এটি আশা করছে; অথচ তারা এ কথা সুস্পষ্টভাবে জানে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর পক্ষ থেকে যা নিয়ে এসেছেন তা নিশ্চিত সত্য। অতএব, হে মু’মিনরা! তোমরা তাদের এ কর্মকাÐকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে যাও এবং তাদের এ মূর্খতা ও নিকৃষ্ট চিন্তার প্রতি সামান্যও ভ্রƒক্ষেপ করো না যতক্ষণ না তাদের ব্যাপারে আল্লাহর ফায়সালা নেমে আসে। যাহোক, তাদের ব্যাপারে ইতিমধ্যে আল্লাহর বিধান নেমে এসেছে। আল্লাহর এ আদেশ ও ফায়সালা আসার পর একজন কাফিরকে এখতিয়ার দেয়া হয়েছে যে, সে ইসলাম গ্রহণ করবে, না হয় জিযয়াহ কর দিবে, আর না হয় তার সাথে যুদ্ধ চলবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুর উপর ক্ষমতাশীল। তাদের কেউ তাঁকে পরাজিত করতে পারে না।
১১০. তোমরা নিজেদের নামাযকে তার রুকন, ওয়াজিব ও সুন্নাতসহ পরিপূর্ণভাবে আদায় করো এবং তোমাদের সম্পদের যাকাত হকদারদেরকে দিয়ে দাও। কেননা, তোমরা নিজেদের জীবদ্দশায় যতো নেক আমল করবে এবং তোমাদের মৃত্যুর পূর্বে জমা হিসেবে পরকালের জন্য যা কিছু পাঠাবে কিয়ামতের দিন সেগুলোর সাওয়াব অবশ্যই তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের নিকট পাবে। তা দিয়ে তিনি তোমাদেরকে প্রতিদান দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সকল কর্মকাÐ দেখছেন। তাই তিনি সে অনুযায়ী তোমাদের সকলকে তার আমলের প্রতিদান দিবেন।
১১১. ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সকলেই এ কথা বলে যে, জান্নাত শুধু তাদেরই জন্য। ইহুদিরা বলে: ইহুদি ছাড়া আর কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। খ্রিস্টানরাও বলে: খ্রিস্টান ছাড়া আর কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এগুলো মূলতঃ তাদের অলীক স্বপ্ন ও অমূলক ধারণা। হে নবী! আপনি বলে দিন, যদি তোমরা নিজেদের দাবিতে সত্যবাদী হয়ে থাকো তাহলে তার প্রমাণ নিয়ে আসো।
১১২. বস্তুতঃ জান্নাতে প্রবেশ করবে সে ব্যক্তি যে সত্যিই আল্লাহমুখী ও তাঁর প্রতি নিষ্ঠাবান। উপরন্তু সে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিয়ে আসা বিধানের অনুসরণে যথানিয়মে উত্তম পন্থায় ইবাদাত করে যাচ্ছে। এমন লোকই জান্নাতী হবে। সে যে দল-উপদলেরই হোক না কেন। তার প্রতিপালকের নিকট সে অবশ্যই তার আমলের প্রতিদান পাবে। ভবিষ্যত তথা পরকাল নিয়ে তাদের কোন ভয় নেই। অনুরূভাবে দুনিয়ার জীবনের উপরও তাদের কোন দুশ্চিন্তা নেই। এ গুণাবলী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আগমনের পর কেবল মুসলমানদের মধ্যেই পাওয়া যায়।
১১৩. ইহুদিরা বলে: খ্রিস্টানরা সঠিক ধর্মের উপর নেই। তেমনিভাবে খ্রিস্টানরা মনে করে ইহুদিরা সঠিক ধর্মের উপর নেই। অথচ তারা সবাই আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাব পড়ে। তাতে রয়েছে কোন পার্থক্য ছাড়াই সকল নবীর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। এ কাজে তারা মূলতঃ অজ্ঞ মুশরিকদের ন্যায়। তারাও রাসূলগণ এবং তাঁদের উপর নাযিলকৃত কিতাবকে অস্বীকার করেছে। আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন এ সকল বিবদমান সম্প্রদায়ের মাঝে ন্যায় ভিত্তিক ফায়সালা করবেন। তিনি তাঁর বান্দাদেরকে এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন যে, আল্লাহর পুরো বিধানকে মানা ছাড়া কখনো সফলতা মিলবে না।
১১৪. ওর চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে? যে আল্লাহর মসজিদসমূহে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে বাধা দেয়। সে তাতে নামায, যিকির ও কুরআন তিলাওয়াত করতে বাধা দেয়। এমনকি সে ওইগুলোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং ওইগুলো ধ্বংসের জন্য মুখ্য ভ‚মিকা পালন করে থাকে। যাতে সেখানে কেউ ইবাদাত করতে না পারে। সুতরাং যারা মসজিদসমূহ ধ্বংসের পাঁয়তারা করে তারা এসব উপাসনালয়ে প্রবেশের যোগ্যতা রাখে না। তবে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে প্রবেশ করতে চাইলে তা ভিন্ন কথা। কারণ, তারা কুফরি করছে এবং আল্লাহর মসজিদগুলোতে ইবাদাত করতে বাধা দিচ্ছে। তাদের জন্য দুনিয়াতে রয়েছে মু’মিনদের হাতের লাঞ্ছনা ও অবমাননা। আর পরকালে তো রয়েছেই তাদের জন্য কঠিন শাস্তি। যেহেতু তারা মানুষদেরকে আল্লাহর মসজিদে যেতে বাধা দিয়েছে।
১১৫. পূর্ব-পশ্চিম ও এতদুভয়ের মধ্যকার সবকিছুরই মালিক হলেন আল্লাহ। তিনি তাঁর বান্দাদেরকে যা চান আদেশ করেন। তাই তোমরা যেদিকেই মূখ ফিরাও না কেন বস্তুতঃ তোমরা আল্লাহর দিকেই মুখ ফিরাচ্ছো। অতএব, তিনি যদি তোমাদেরকে বাইতুল-মাকদিস কিংবা কা’বার দিকে ফিরতে আদেশ করেন অথবা তোমরা কিবলার ব্যাপারে ভুল করে ফেলো কিংবা তোমাদের জন্য কিবলামূখী হওয়া কষ্টকর হয়ে যায় তাহলে তাতে কোন অসুবিধে নেই। কারণ, সকল দিকই তো আল্লাহর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রহমত ও করুণার মাধ্যমে তাঁর সকল সৃষ্টিকে ব্যাপৃত করে রেখেছেন। তিনি সকলের নিয়ত ও কর্মকাÐ সম্পর্কে সম্যক অবগত।
১১৬. ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুশরিকরা বলে: আল্লাহ তা‘আলা নিজের জন্য ছেলে গ্রহণ করেছেন। অথচ তিনি এগুলো থেকে পূত ও পবিত্র। কারণ, তিনি তাঁর সৃষ্টির প্রতি অমুখাপেক্ষী। আর সন্তান সেই নেয় যে তার প্রতি মুখাপেক্ষী। বরং তিনি আকাশ ও জমিনের সবকিছুরই মালিক। সকল সৃষ্টি তাঁরই গোলাম এবং তাঁরই সামনে অবনত। তিনি তাদের ব্যাপারে যা চান তাই করেন।
১১৭. আল্লাহ তা‘আলা আকাশ ও জমিন এবং এতদুভয়ের মাঝে যা কিছু আছে তা সবই বিনা নমুনায় সৃষ্টি করেছেন। তিনি যখন কোন জিনিস বানানোর ইচ্ছা পোষণ করেন এবং সে ব্যাপারে বাস্তব সিদ্ধান্ত নেন তখন তিনি সে জিনিসকে বলেন: “হয়ে যাও”। তখন তা আল্লাহর ইচ্ছা অনুপাতেই হয়ে যায়। তাঁর আদেশ ও ফায়সালা প্রতিরোধ করার কেউ নেই।
১১৮. আহলে কিতাব ও মুশরিকদের মধ্যকার মূর্খরা হঠকারিতা দেখিয়ে বলে: কেন আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সাথে প্রকাশ্যে কথা বলেন না অথবা আপনি কেন আমাদের জন্য বিশেষ কোন সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে আসেন না? এদের মতোই পূর্ববর্তী অস্বীকারকারী সম্প্রদায়ও তাদের রাসূলদেরকে এমন কথাই বলেছে। সময় ও স্থানের ভিন্নতা থাকলেও সবার কথা ও মানসিকতা একই। আমি সত্য বিশ্বাসীদের জন্য নিদর্শনগুলো সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছি। সত্য সুস্পষ্ট হলে তাদের আর কোন সন্দেহ থাকে না এবং তারা তা গ্রহণ করতে হঠকারিতাও দেখায় না।
১১৯. হে নবী! আমি আপনাকে সত্য ধর্ম দিয়ে পাঠিয়েছি। যাতে কোন সন্দেহ নেই। যাতে আপনি মু’মিনদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ এবং কাফিরদেরকে জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শন করতে পারেন। আপনার দায়িত্ব শুধু সুস্পষ্ট প্রচার। আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে কখনো বেঈমান জাহান্নামীদের ব্যাপারে জবাবদিহি করবেন না।
১২০. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে উপদেশ দিয়ে ও সতর্ক করে বলেন: ইহুদি ও খ্রিস্টানরা কখনোই তোমার উপর সন্তুষ্ট হবে না যতক্ষণ না তুমি ইসলামকে ছেড়ে দাও এবং তাদের ধর্মের অনুসরণ করো। সত্য সুস্পষ্ট হওয়ার পর তুমি ও তোমার অনুসারীদের কারো পক্ষ থেকে এমনটি ঘটলে সে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন ধরনের সাহায্য ও সহযোগিতা পাবে না। এটি হলো সত্য প্রত্যাখ্যান করে বাতিলপন্থীদের সাথে তাল মিলানোর ভয়াবহতার সুস্পষ্ট বর্ণনা।
১২১. কুর‘আনুল-কারীম আহলে কিতাবের একটি গোষ্ঠীর কথা বর্ণনা দিয়ে বলে যে, তারা নিজেদের কাছে থাকা আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাবাদির উপর আমল করে। এমনকি তারা সেগুলোকে সত্যিকারার্থেই মানে। এরা এ কিতাবগুলোতে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নবুওয়াতের সত্যতার ব্যাপারে কিছু আলামত দেখতে পায়। তাই তারা তাঁর প্রতি দ্রæত ঈমান আনে। আর অন্যরা তাদের কুফরির উপর অটল আছে বিধায় তারা সত্যিকারার্থেই ক্ষতিগ্রস্ত।
১২২. হে বনী ইসরাঈল! তোমরা আমার ধর্মীয় ও জাগতিক সকল নিয়ামতের কথা স্মরণ করো যা আমি তোমাদেরকে দিয়েছি। তেমনিভাবে তোমরা সে কথাও স্মরণ করো যখন আমি তোমাদেরকে নবুওয়াত ও ক্ষমতার মাধ্যমে তোমাদের যুগের সবার উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।
১২৩. তোমরা আল্লাহর বিধানাবলীর অনুসরণ ও তাঁর নিষিদ্ধ কর্মকাÐগুলো থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে নিজেদের ও কিয়ামতের শাস্তির মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করো। কারণ, সে দিন কেউ কারো উপকারে আসবে না। না সে দিন কারো পক্ষ থেকে কোন মুক্তিপণ গ্রহণ করা হবে, তা যতো বড়োই হোক না কেন। না সে দিন কারো কোন সুপারিশ কাজে আসবে, সে যতো মর্যাদাশীলই হোক না কেন। না সে দিন আল্লাহ ছাড়া কেউ তার কোন সহযোগিতা করতে পারবে।
১২৪. তুমি স্মরণ করো সে সময়ের কথা যখন আল্লাহ তা‘আলা ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) কে পরীক্ষা করলেন তাঁর কিছু বিধানের মাধ্যমে। যা বাস্তবায়িত করার জন্য তিনি তাঁকে আদেশ করলেন। ফলে তিনি তা পরিপূর্ণভাবেই আদায় করলেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) কে বললেন: আমি তোমাকে মানুষের জন্য আদর্শ বানিয়ে দিলাম। তাই তারা কথায় ও কাজে তোমারই অনুসরণ করবে। ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) বললেন: হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমার বংশ থেকেও কিছু লোককে নেতৃস্থানীয় বানিয়ে দিন। যাদের অনুসরণ মানুষ করবে। তখন আল্লাহ তা‘আলা এর উত্তরে বললেন: আমার পক্ষ থেকে ধর্মীয় নেতৃত্বের ব্যাপারে কৃত ওয়াদা কিন্তু তোমার বংশের যালিমদের ভাগ্যে জুটবে না।
১২৫. তুমি স্মরণ করো সে সময়ের কথা যখন আল্লাহ তা‘আলা বাইতুল্লাহিল-হারামকে মানুষের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করলেন। যার সাথে মানুষের আত্মার সম্পর্ক। যখন তারা তাকে ছেড়ে যায় তখন তারা আবারো তার দিকে ফিরে আসে। তেমনিভাবে তিনি সে এলাকাকে নিরাপদও বানিয়েছেন। যাতে কারো পক্ষ থেকে তাদের উপর কোন ধরনের আক্রমণ করা না হয়। আল্লাহ তা‘আলা মানুষদেরকে বললেন: তোমরা মাকামে ইব্রাহীম তথা যে পাথরের উপর ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) কা’বা নির্মাণের সময় দাঁড়িয়েছিলেন সে এলাকাকে নামাযের জায়গা বানিয়ে নাও। আর আমি ইব্রাহীম ও তাঁর ছেলে ইসমাঈলকে আদেশ করলাম বাইতুল্লাহিল-হারামকে সকল প্রকারের ময়লা, অপবিত্রতা ও মূর্তি থেকে পবিত্র করতে। উপরন্তু সে এলাকাকে ইবাদাতকারী তথা তাওয়াফকারী, ই’তিকাফকারী, নামাযী ও অন্যান্যদের জন্য প্রস্তুত রাখতে।
১২৬. হে নবী! আপনি স্মরণ করুন সে সময়ের কথা যখন ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) তাঁর প্রতিপালকের নিকট দু‘আ করতে গিয়ে বলেন: হে আমার প্রতিপালক! আপনি মক্কাকে নিরাপদ শহর বানিয়ে দিন। যাতে কারো প্রতি কোন ধরনের অনাচার করা হবে না। আর আপনি এর অধিবাসীদেরকে হরেক রকমের ফল-ফলাদির রিযিক দিন। বিশেষ করে আপনি নিজের প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসীদেরকে বিশেষ রিযিক দিন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আমি এদের মধ্যকার কাফিরদেরকেও সামান্যটুকু দুনিয়া ভোগ করার সুযোগ দেবো। অতঃপর পরকালে তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে বাধ্য করবো। কিয়ামতের দিন তাদের অবস্থানস্থল কতোই না নিকৃষ্ট।
১২৭. হে নবী! আপনি স্মরণ করুন সে সময়ের কথা যখন ইব্রাহীম ও ইসমাঈল (আলাইহিমাস-সালাম) কা’বা শরীফের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছেন। তখন তাঁরা বিনয় ও ন¤্রতার সাথে বলেছিলেন: হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের পক্ষ থেকে আমাদের সকল আমল বিশেষ করে কা’বা ঘর নির্মাণের মতো আমলটুকু গ্রহণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি আমাদের দু‘আ কবুলকারী এবং আমাদের নিয়ত ও আমল সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে জ্ঞাত।
১২৮. হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে আপনার আদেশ মান্যকারী বিনয়ী বানিয়ে দিন। যাতে আমরা আপনার সাথে অন্য কাউকে শরীক না করি। এমনিভাবে আপনি আমাদের বংশধর থেকেও একটি আপনার বাধ্য জাতি তৈরি করুন। উপরন্তু আপনি আমাদেরকে আপনার ইবাদাতের সঠিক পদ্ধতি জানিয়ে দিন। আর আমাদের গুনাহ ও ইবাদাতের ত্রæটিসমূহ ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি আপনার বান্দাদের মধ্যে তাওবাকারীদের তাওবা গ্রহণকারী ও তাদের প্রতি দয়াশীল।
১২৯. হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি তাদের মাঝে বিশেষ করে ইসমাঈল (আলাইহিস-সালাম) এর বংশধরদের মাঝে একজন রাসূল পাঠান। যিনি তাদেরকে আপনার নাযিলকৃত আয়াতসমূহ পড়ে শুনাবেন এবং তাদেরকে কুরআন ও সুন্নাহ শিখাবেন। উপরন্তু তিনি তাদেরকে শিরক ও সকল প্রকারের দোষ থেকে মুক্ত করবেন। নিশ্চয়ই আপনি অপরাজেয় শক্তিধর। নিজ কর্ম ও বিধানে প্রজ্ঞাময়।
১৩০. কেউ ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) এর ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করতে পারে না। তবে সেই পারে যে মূর্খতা ও নির্বুদ্ধিতার দরুন সত্যের পরিবর্তে ভ্রষ্টতাকে গ্রহণ করে নিজের উপর নিজেই যুলুম করেছে। এমনকি সে এজন্য নিজের লাঞ্ছনাও সহ্য করতে রাজি। নিশ্চয়ই আমি তাঁকে দুনিয়াতে আমার রাসূল ও অন্তরঙ্গ বন্ধু হওয়ার জন্য চয়ন করেছি। আর অবশ্যই তিনি পরকালে নেককারদেরই অন্তর্ভুক্ত হবেন। যাঁরা তাঁদের উপর ন্যস্ত সকল দায়িত্ব পালন করে উচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছেন।
১৩১. আত্মসমর্পণের প্রতি তার বিশেষ আগ্রহের কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাকে মনোনীত করেছেন। তিনি তাকে বললেন: একনিষ্ঠভাবে আমার ইবাদাত করো এবং আমার আনুগত্যের ব্যাপারে বিনয়ী হও। তখন তিনি তাঁর প্রতিপালকের আদেশের উত্তরে বললেন: আমি সে আল্লাহর আদেশ মানতে বাধ্য যিনি মানুষের ¯্রষ্টা, রিযিকদাতা ও তাদের সমূহ ব্যাপার নিয়ন্ত্রণকারী।
১৩২. এমনকি ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) তাঁর সন্তানদেরকেও এ বাক্য (আমি সর্ব জগতের প্রতিপালকের সামনে মস্তকাবনত) বলার ওসিয়ত করেছেন। তেমনিভাবে ইয়াক‚ব (আলাইহিস-সালাম)ও তাঁর সন্তানদেরকে এ বাক্য বলার ওসিয়ত করেছেন। তাঁরা নিজেদের সন্তানদেরকে ডেকে বললেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য ইসলাম ধর্মকে চয়ন করেছেন। তাই তোমরা সেটিকে আঁকড়ে ধরো যতক্ষণ না প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য তথা সার্বিকভাবে আল্লাহর সামনে অবনত হয়ে তোমাদের মৃত্যু আসে।
১৩৩. তোমরা কি ইয়াক‚ব (আলাইহিস-সালাম) এর ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলে যখন তাঁর মৃত্যু ঘনিয়ে আসলো, যখন তিনি তাঁর সন্তানদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন: আমার মৃত্যুর পর তোমরা কার ইবাদাত করবে? তারা তাঁর প্রশ্নের উত্তরে বললো: আমরা আপনি ও আপনার বাপ-দাদা তথা ইব্রাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাক (আলাইহিমুস-সালাম) এর মা’বূদের ইবাদাত করবো। যিনি একক মা’বূদ। তাঁর কোন শরীক নেই। আর আমরা একনিষ্ঠভাবে তাঁরই সামনে বিনয়াবনত।
১৩৪. এরা এমন এক জাতি যারা অন্যান্যদের ন্যায় ইতিপূর্বে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। তারা দুনিয়া থেকে যে আমল অগ্রিম পাঠিয়েছে তারা তাই পাবে। তারা ভালো-মন্দ যাই অর্জন করেছে তারা তারই প্রতিদান পাবে। আর তোমরা নিজেদের অর্জনের প্রতিদান পাবে। তোমাদেরকে তাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে না। না তাদেরকে তোমাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। কাউকে অন্যের পাপের জন্য কখনোই পাকড়াও করা হবে না। বরং প্রত্যেককে তার আমলেরই প্রতিদান দেয়া হবে। তাই তোমরা নিজেদের পূর্ববর্তীদের কারো আমল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে নিজেদের আমলের ব্যাপারে চিন্তা করতে ভুলে যেও না। কারণ, আল্লাহর রহমতের পর নেক আমল ছাড়া কেউ কারোই উপকার করতে পারবে না।
১৩৫. ইহুদিরা এ উম্মতকে বলে: তোমরা ইহুদি হয়ে যাও তাহলে তোমরা সঠিক রাস্তার উপর চলতে পারবে। আবার খ্রিস্টানরাও বলে: তোমরা খ্রিস্টান হয়ে যাও তাহলে তোমরা সঠিক রাস্তার উপর চলতে পারবে। হে নবী! আপনি তাদের উত্তরে বলুন: বরং আমরা ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) এর ধর্মের অনুসরণ করবো। যিনি বাতিল সকল ধর্ম পরিত্যাগ করে সত্য ধর্মের অনুসারী হয়েছেন। বস্তুতঃ তিনি আল্লাহর সাথে যারা শরীক করে তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।
১৩৬. হে মু’মিনরা! তোমরা এ বাতিল দাবিদার ইহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে বলো: আমরা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি এবং সে কুর‘আনের উপর যা আমাদের উপর নাযিল করা হয়েছে। আর আমরা ঈমান এনেছি সে কিতাবসমূহের উপরও যা নাযিল করা হয়েছে ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) এবং তাঁর সন্তানসমূহ তথা ইসমাঈল, ইসহাক ও ইয়া’ক‚ব (আলাইহিমুস-সালাম) এর উপর। উপরন্তু আমরা সে কিতাবসমূহের উপরও ঈমান এনেছি যা নাযিল করা হয়েছে ইয়া’ক‚ব (আলাইহিস-সালাম) এর সন্তানদের মধ্যকার অন্যান্য নবীগণের উপর। তেমনিভাবে আমরা ঈমান এনেছি তাওরাতের উপর যা আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আলাইহিস-সালাম) কে দিয়েছেন। আর ইঞ্জীলের উপর যা আল্লাহ তা‘আলা ঈসা (আলাইহিস-সালাম) কে দিয়েছেন। অনুরূপভাবে সে সকল কিতাবের উপর যা আল্লাহ তা‘আলা অন্যান্য সকল নবীকে দিয়েছেন। আমরা তাঁদের কারো মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি করি না যে, কারো উপর ঈমান আনবো আবার কারো সাথে কুফরি করবো। বরং আমরা তাঁদের সকলের উপরই ঈমান এনেছি। আর আমরা এক আল্লাহর সামনে বিনয়ী ও তাঁর বাধ্য।
১৩৭. যদি ইহুদি, খ্রিস্টান ও অন্যান্য কাফিররা তোমাদের মতো ঈমান আনে তাহলেই তারা আল্লাহর পছন্দনীয় সঠিক পথের দিশা পাবে। আর যদি তারা ঈমান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তথা নবীদের সবাইকে অথবা তাঁদের কাউকে অস্বীকার করে তাহলে তারা সত্যিই দ্ব›দ্ব ও বিদ্বেষ করছে। তাই হে নবী! আপনি সে জন্য অস্থির ও চিন্তিত হবেন না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলাই আপনাকে তাদের যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করবেন, তাদের অনিষ্ট থেকে দূরে রাখবেন এবং তাদের উপর আপনাকে জয়ী করবেন। তিনি তাদের সকল কথা শুনছেন এবং তাদের সকল কর্মকাÐ ও নিয়ত সম্পর্কে জানেন।
১৩৮. তোমরা আল্লাহর ধর্মকে আঁকড়ে ধরো যার উপর তিনি তোমাদেরকে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণভাবে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ প্রদত্ত ধর্মের চেয়ে উত্তম আর কোন ধর্ম নেই। কারণ, সেটি হলো মানুষের প্রকৃতি মাফিক। যা সমূহ লাভ নিয়ে আসে এবং সমূহ অকল্যাণ থেকে রক্ষা করে। আর তোমরা বলো: আমরা এক আল্লাহর ইবাদাতকারী। তাঁর সাথে আমরা কখনো অন্যকে শরীক করবো না।
১৩৯. হে নবী! আপনি বলে দিন: হে কিতাবধারীরা! তোমরা কি আমাদের সাথে এ মর্মে ঝগড়া করছো যে, তোমরা আমাদের চেয়ে আল্লাহ এবং তাঁর দ্বীনের ব্যাপারে অতি অগ্রসর। যেহেতু তোমাদের ধর্ম ও কিতাব অতি পুরাতন। না, এটা কোন যুক্তির কথা নয়। বরং আল্লাহ হচ্ছেন আমাদের সকলেরই প্রতিপালক। তিনি এককভাবে তোমাদের নন। বস্তুতঃ আমাদের কর্মফল কেবল আমাদেরই জন্য। তা সম্পর্কে তোমাদেরকে এতটুকুও জিজ্ঞাসা করা হবে না। তেমনিভাবে তোমাদের কর্মফল তোমাদেরই জন্য। যা সম্পর্কে আমাদেরকে এতটুকুও জিজ্ঞাসা করা হবে না। বরং প্রত্যেককে কেবল তার আমলেরই প্রতিদান দেয়া হবে। আর আমরা ইবাদাত ও আনুগত্যে তাঁর প্রতি নিষ্ঠাবান। আমরা তাঁর সাথে কোন কিছুকেই শরীক করবো না।
১৪০. হে আহলে কিতাব! তোমরা কি একথা বলতে চাচ্ছো যে, নিশ্চয়ই ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক ও ইয়াক‚ব (আলাইহিমুস-সালাম) এবং ইয়াক‚ব (আলাইহিস-সালাম) এর সন্তানদের মধ্যকার সকল নবী ইহুদি ও খ্রিস্টান ছিলেন। হে নবী! আপনি তাদের উত্তরে বলুন: তোমরা কি বেশি জানো, না আল্লাহ তা‘আলা! বস্তুতঃ তাদের এ ধারণা মিথ্যা। কারণ, তাঁদের নবী হিসেবে দুনিয়াতে আসা ও তাঁদের মৃত্যু তাওরাত ও ইঞ্জীল নাযিল হওয়ার বহু পূর্বে। তাই বুঝা গেলো, তাদের এ কথা মিথ্যা। বরং তারা সত্যকে লুকিয়ে রেখেছে। যা তাদের উপর নাযিল হয়েছে। সে ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম আর কেউ হতে পারে না যে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রমাণিত সাক্ষ্যকে লুকিয়ে রাখে। অথচ কিতাবধারীরা অধিকহারে তা করে যাচ্ছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাদের কর্মকাÐ সম্পর্কে গাফিল নন। বরং তিনি তাদেরকে অচিরেই এর প্রতিদান দিবেন।
১৪১. এরা এমন এক জাতি যারা অন্যান্যদের ন্যায় ইতিপূর্বে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। তারা দুনিয়া থেকে যে আমল অগ্রিম পাঠিয়েছে তারা তাই পাবে। তারা যাই অর্জন করেছে তারা তারই প্রতিদান পাবে। আর তোমরাও নিজেদের অর্জনেরই প্রতিদান পাবে। তোমাদেরকে তাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে না। না তাদেরকে তোমাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। কাউকে অন্যের পাপের জন্য কখনোই পাকড়াও করা হবে না। না সে অন্যের আমল কর্তৃক লাভবান হবে। বরং প্রত্যেককে তার আমলেরই প্রতিদান দেয়া হবে।
১৪২. মূর্খ ও বেকুব ইহুদিরা এবং তাদের ন্যায় মুনাফিকরা অচিরেই বলবে: কী কারণে মুসলমানরা বাইতুল-মাক্বদিসের কিবলা থেকে নিজেরা সরে গেছে যা ইতিপূর্বে তাদেরই কিবলা ছিলো?! হে নবী! আপনি তাদের উত্তরে বলুন: পূর্ব-পশ্চিম তথা সকল দিকের মালিকানা কেবল এক আল্লাহরই। তাই তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে চাইবেন তাঁর ইচ্ছা মাফিক সে দিকেই ফিরাতে পারেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে চাইবেন তাকেই সঠিক পথ দেখাবেন। যাতে কোন ধরনের বক্রতা ও ভ্রষ্টতা নেই।
১৪৩. আমি যেভাবে তোমাদেরকে আমার মর্জি মাফিক কিবলা দিয়েছি সেভাবেই আমি তোমাদেরকে সকল উম্মতের মাঝে বিশ্বাস, ইবাদাত ও সকল প্রকারের লেনদেনের ক্ষেত্রে একটি শ্রেষ্ঠ ও ইনসাফপরায়ণ জাতি হিসেবে তৈরি করেছি। যেন তোমরা কিয়ামতের দিবসে আল্লাহর রাসূলদের ব্যাপারে এ মর্মে সাক্ষী হতে পারো যে, তাঁরা সত্যিকারার্থেই তাঁদের উম্মতের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিষ্ট ব্যাপারগুলো হুবহু পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। আর যেন রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)ও তোমাদের ব্যাপারে এ মর্মে সাক্ষী হতে পারেন যে, সত্যিই তিনি যা নিয়ে তাঁকে তোমাদের নিকট পাঠানো হয়েছে তা তোমাদেরকে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। আমি বাইতুল-মাক্বদিস থেকে ক্বিবলা শুধু এজন্যই পরিবর্তন করেছি যে, যেন আমি প্রকাশ্যভাবে জানতে পারি, কে আল্লাহর বিধানের উপর সন্তুষ্ট ও তার প্রতি অনুগত, যার ফলে সে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর অনুসরণ করছে। আর কে তাঁর ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করছে। উপরন্তু আল্লাহর শরীয়তকে মেনে নেয়নি। বস্তুতঃ প্রথম কিবলার পরিবর্তনের আদেশটি সত্যিই কঠিন ছিলো। তবে ওদের জন্য নয় যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর উপর ঈমান আনার তাওফীক দিয়েছেন এবং তারা এ কথা জানতে পেরেছে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের জন্য শরীয়ত হিসেবে যা নির্ধারণ করেন তার পেছনে অবশ্যই তাঁর বিশেষ হিকমত রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা কখনো তাঁর প্রতি ঈমান আনার আমলটিকে বিনষ্ট করবেন না। এমনকি তোমাদের সে নামাযগুলোকেও নয় যা তোমরা ক্বিবলা পরিবর্তনের আগে পড়েছিলে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা মানুষের প্রতি অত্যন্ত দয়াশীল কৃপাময়। তাই তিনি কারো উপর কঠিনভাবে কোন কিছু চাপিয়ে দিবেন না। না তিনি তাদের আমলগুলোর সাওয়াবটুকু বিনষ্ট করে দিবেন।
১৪৪. হে নবী! আমি আপনাকে ক্বিবলার ব্যাপারে নতুন ওহি তথা আপনার পছন্দসই ক্বিবলার দিকে মুখ ফিরানোর আদেশের অপেক্ষায় আপনার চেহারা ও দৃষ্টিকে বার বার আকাশের দিকে উঠাতে দেখেছি। তাই আমি বলছি, আমি অবশ্যই আপনাকে বাইতুল-মাক্বদিসের পরিবর্তে আপনার পছন্দসই তথা বাইতুল্লাহিল-হারামের দিকে মুখ ফিরানোর আদেশ করবো। সুতরাং আমি আপনাকে আদেশ করছি, আপনি এখন থেকে নিজ চেহারাকে মক্কার বাইতুল্লাহিল-হারামের দিকে ফিরান। হে মু’মিনরা! তোমরা যেখানেই থাকো না কেন তোমরা অবশ্যই নামায আদায়ের সময় সেদিকেই মুখ ফিরাবে। কিতাবধারী ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা নিশ্চয়ই জানে যে, ক্বিবলা পরিবর্তনের বিধানটি সত্য একটি বিষয় যা তাদের ¯্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রক আল্লাহ তা‘আলার কাছ থেকেই নাযিল করা হয়েছে। যা তাদের কিতাবগুলোতেও বিবৃত হয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সত্যবিমুখী লোকদের কর্মকাÐ সম্পর্কে গাফিল নন। বরং আল্লাহ তা‘আলা সবই জানেন এবং তিনি অচিরেই এর প্রতিদান দিবেন।
১৪৫. হে নবী! আল্লাহর কসম! আপনি যদি কিতাবধারী ইহুদি ও খ্রিস্টানদের নিকট ক্বিবলা পরিবর্তনের ব্যাপারটি সত্য হওয়ার ব্যাপারে সকল প্রমাণ নিয়ে আসেন তারপরও তারা অহঙ্কার ও হঠকারিতা বশতঃ আপনার ক্বিবলার দিকে মুখ ফিরাবে না। আপনিও নতুন ওহি আসার পর তাদের ক্বিবলার দিকে মুখ ফিরাবেন না। আর এ কথাও নিশ্চিত যে, তাদের কেউই কখনো অন্যের ক্বিবলার দিকে মুখ ফিরাবে না। কারণ, তারা একে অপরকে কাফির মনে করে। তাই আপনি যদি ক্বিবলা ও শরীয়তের অন্যান্য বিধি-বিধানের ব্যাপারে আপনার নিকট নিশ্চিত সত্য জ্ঞান আসার পরও তাদের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করেন তাহলে আপনি হিদায়েত প্রত্যাখ্যান ও কুপ্রবৃত্তির অনুসরণের দরুন নিশ্চয়ই অনাচারী যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। এ সম্বোধনটি বস্তুতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ব্যাপারে তাদের অনুসরণের ভয়ানক অপকারিতা বুঝানোর জন্য। নতুবা আল্লাহ তা‘আলা তো তাঁর নবীকে এ সকল অপকর্ম থেকে পবিত্র রেখেছেন। তাহলে এটি মূলতঃ তাঁর পরের উম্মতের জন্য বিশেষ ভীতিপ্রদর্শন।
১৪৬. ইহুদি ও খ্রিস্টানদের মধ্যকার যে আলিমদেরকে আমি কিতাবী জ্ঞান দিয়েছি তারা এ কথা নিশ্চয়ই জানে যে, ক্বিবলা পরিবর্তনের বিষয়টি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নবুওয়াতের একটি বিশেষ প্রমাণ। যেমনিভাবে তারা চিনে নিজের সন্তানকে এমনকি তাদেরকে অন্যদের থেকে পার্থক্য করতে। এতদসত্তে¡ও তাদের একদল হিংসাবশতঃ সত্যকে লুকিয়ে রেখেছে। অথচ তারা জানে যে, এটি নিশ্চিত সত্য।
১৪৭. হে রাসূল! এটি হলো আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে একটি অকাট্য সত্য। অতএব, এটির সত্যতার ব্যাপারে আপনি এতটুকুও সন্দেহ করবেন না।
১৪৮. প্রত্যেক উম্মতেরই একটি দিক রয়েছে যেদিকে তারা ফিরে। চাই সেটি প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য। এ জন্যই তারা ক্বিবলা ও আল্লাহর শরীয়ত নিয়ে মতপার্থক্য করে। তবে এটি কোন দোষের নয়, যদি এটি আল্লাহর আদেশ ও তাঁর শরীয়তের অধীন হয়। হে মু’মিনগণ! তাহলে তোমরা কল্যাণকর কাজের দিকে ধাবিত হও যার আদেশ তোমাদেরকে দেয়া হয়েছে। অচিরেই আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে যে কোন জায়গা থেকে একত্রিত করবেন। অতঃপর তিনি তোমাদের আমলের প্রতিদান দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সব কিছুর উপর ক্ষমতাশীল। তাই কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে একত্রিত করা ও আমলের প্রতিদান দেয়া তাঁর জন্য কোন ব্যাপারই নয়।
১৪৯. হে নবী! আপনি ও আপনার অনুসারীরা যেখান থেকেই বের হোন না কেন কিংবা যেখানেই থাকুন না কেন যখনই নামায আদায় করার ইচ্ছা পোষণ করবেন তখনই মসজিদুল-হারামের দিকে মুখ ফিরাবেন। কারণ, সেটিই সত্য যা আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার নিকট ওহি করা হয়েছে। আর আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের কর্মকাÐ সম্পর্কে গাফিল নন। বরং তিনি তা সবই দেখছেন এবং অচিরেই তার প্রতিদান দিবেন।
১৫০. হে নবী! আপনি যেখান থেকেই বের হোন না কেন। যখনই আপনি নামায পড়ার ইচ্ছা করবেন তখনই আপনি মসজিদুল-হারামমুখী হন। আর হে মু’মিনরা! তোমরা যেখানেই থাকো না কেন যখন তোমরা নামায পড়ার ইচ্ছা করবে তখনই মসজিদুল-হারামের দিকে মুখ ফিরাবে। যেন লোকেরা তোমাদের বিপক্ষে কোন দলীল সাব্যস্ত করতে না পারে। তবে যারা যালিম তারা তো সর্বদা হঠকারিতা দেখাতেই থাকবে। তারা যে কোন দুর্বল দলীলের মাধ্যমে তোমাদেরকে চ্যালেঞ্জ করবে। তাই তোমরা তাদেরকে ভয় পেয়ো না। বরং তোমরা একমাত্র তোমাদের প্রতিপালককেই ভয় করো। তাঁর আদেশ মান্য করো এবং তাঁর নিষেধকৃত বস্তু থেকে দূরে থাকো। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা কা’বার দিকে ফিরার বিধান এ জন্যই করেছেন যেন তিনি তোমাদের উপর তাঁর নিয়ামত পরিপূর্ণ করে দেন। যেন তোমরা বিশেষ ও সম্মানজনক ক্বিবলা পেতে পারো।
১৫১. যেমনিভাবে আমি তোমাদেরকে আরেকটি নিয়ামত দিয়েছি যে, আমি তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল পাঠিয়েছি। যিনি তোমাদেরকে আমার আয়াতসমূহ পড়ে শুনাবেন। তোমাদেরকে নেক ও ফযীলতের আদেশ এবং বদ ও নিকৃষ্ট কাজ থেকে নিষেধের মাধ্যমে পবিত্র করে দিবেন। তেমনিভাবে তিনি তোমাদেরকে কুরআন ও সুন্নাহ শিখাবেন। আর তিনি তোমাদেরকে নিজেদের দুনিয়া ও আখিরাত সম্পর্কে তাও শিখাবেন যা তোমরা জানতে না।
১৫২. তাই তোমরা অন্তর ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মাধ্যমে আমাকে স্মরণ করো। আমিও তোমাদেরকে প্রশংসা ও হিফাযতের মাধ্যমে স্মরণ করবো। কারণ, প্রতিদান আমল মাফিকই হয়ে থাকে। আর তোমরা আমার দেয়া নিয়ামতগুলোর কৃতজ্ঞতা আদায় করো। সেগুলোকে অস্বীকার করে কিংবা হারাম পথে ব্যবহার করে কখনো আমার অকৃতজ্ঞ হয়ো না।
১৫৩. হে ঈমানদাররা! তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে আমার আনুগত্যের উপর অটল থাকো এবং আমার আদেশ মান্য করার ক্ষেত্রে সাহায্য গ্রহণ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা ধৈর্যশীলদের সাথেই রয়েছেন। তিনি তাদেরকে নেক কাজের তাওফীক দিবেন ও তা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবেন।
১৫৪. হে মু’মিনরা! তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ করতে গিয়ে যারা নিহত হয়েছে তাদের ব্যাপারে এমন বলো না যে, তারা অন্যদের ন্যায় মৃত। বরং তারা তাদের প্রভুর নিকট জীবিত। তবে তোমরা তাদের জীবন সম্পর্কে এতটুকুও আন্দায করতে পারো না। কারণ, সেটি হলো এক বিশেষ জীবন। যা আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা ওহীর মাধ্যম ছাড়া কখনোই বুঝা সম্ভবপর নয়।
১৫৫. আমি তোমাদেরকে হরেক রকমের বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করবো। যেমন: শত্রæর ভয়, খাদ্যের ঘাটতি জনিত ক্ষুধা, সম্পদ খুইয়ে যাওয়া কিংবা তা অর্জনে কষ্ট হওয়ার দরুন তার ঘাটতি, মানুষকে ধ্বংসকারী বিপদাপদ কিংবা শাহাদাতের দরুন জনসংখ্যায় ঘাটতি, জমিনে উৎপন্ন ফল-ফলাদির ঘাটতি ইত্যাদি। হে নবী! আপনি এ জাতীয় বিপদাপদে জর্জরিত ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ দিন। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে এমন প্রতিদান দিবেন যাতে তারা দুনিয়া ও আখিরাতে সন্তুষ্ট থাকে।
১৫৬. যারা এ জাতীয় বিপদাপদ আসলে সন্তুষ্ট ও বিনয়ের স্বরে বলে: আমরা আল্লাহরই মালিকানাধীন। তাই আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ব্যাপারে যাই চান তাই করতে পারেন। আর আমরা কিয়ামতের দিন তাঁর দিকেই ফিরে যাবো। কারণ, তিনিই আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং বহু নিয়ামতের মাধ্যমে তিনি আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। তাই আমাদের প্রত্যাবর্তন ও পরিসমাপ্তি তাঁর দিকেই।
১৫৭. যারা এই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বিশিষ্ট ফিরিশতাদের নিকট তাদের প্রশংসা করেন এবং তাদের উপর তাঁর রহমত নাযিল করেন। আর এরাই হলো সঠিক পথপ্রাপ্ত।
১৫৮. কা’বা শরীফের নিকটবর্তী প্রসিদ্ধ সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয় শরীয়তের প্রকাশ্য নিদর্শন। সুতরাং যে ব্যক্তি হজ্জ ও উমরাহ করার উদ্দেশ্যে বাইতুল্লায় যাবে সে যদি এ দু’টির মাঝে সাঈ করতে চায় তাতে তার কোন গুনাহ হবে না। এখানে গুনাহ নেই বলে ওই মুসলমানদেরকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে যারা এ দু’য়ের মাঝে সাঈ করাকে জাহিলী কাজ বলে মনে করতো। তাই আল্লাহ তা‘আলা এখানে সুস্পষ্টভাবে বলে দিচ্ছেন যে, এটি মূলতঃ হজ্জের কর্মকাÐেরই অধীন। বস্তুতঃ যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ও নিষ্ঠার সাথে কোন মুস্তাহাব আমল করবে আল্লাহ তা‘আলা তাতে সন্তুষ্ট হবেন এবং অচিরেই তার প্রতিদান দিবেন। তিনি জানেন কে নেক আমল করছে এবং কে সত্যিকারের সাওয়াবের উপযুক্ত।
১৫৯. যেসব ইহুদি ও খ্রিস্টান তাদের কিতাবে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং তাঁর আনীত বিধানের সত্যতা সম্পর্কে নাযিলকৃত সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহকে গোপন করে তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রহমত থেকে বিতাড়িত করবেন এবং ফিরিশতাগণ, আম্বিয়ায়ে কিরাম ও মানব মÐলী তাদেরকে আল্লাহর রহমত থেকে বিতাড়িত করার বদদু‘আ করবেন।
১৬০. তবে যারা এ সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ লুকানোর পর লজ্জিত হয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে এবং তাদের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল আমল ঠিক করে নিবে উপরন্তু লুক্কায়িত সে সত্য ও হিদায়েত মানুষকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিবে আমি আল্লাহ আমার আনুগত্যের দিকে তাদের প্রত্যাবর্তনকে সাদরে গ্রহণ করবো। নিশ্চয়ই আমি আমার তাওবাকারী বান্দাহর তাওবা গ্রহণকারী এবং তাদের প্রতি বিশেষ দয়ালু।
১৬১. আর যে কাফিররা তাওবা করার পূর্বেই কুফরি অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে তাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ। তিনি তাদেরকে তাঁর রহমত থেকে বিতাড়িত করবেন এবং ফিরিশতাগণ ও মানব মÐলী তাদেরকে আল্লাহর রহমত থেকে বিতাড়িত করা এবং তা থেকে দূরে সরিয়া নেয়ার বদদু‘আ করবেন।
১৬২. এ অভিসম্পাত কখনো তাদের পিছু ছাড়বে না। না তাদের শাস্তি এক দিনের জন্যও কমিয়ে আনা হবে। না তাদেরকে কিয়ামতের দিন কোন সুযোগ দেয়া হবে।
১৬৩. হে মানুষ! তিনিই তোমাদের সত্যিকার মা’বূদ হলেন যিনি তাঁর সত্তা ও বিশেষণে এক ও একক। তিনি ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই। তিনি দয়াময় ও ব্যাপক রহমতের অধিকারী। এমনকি তাঁর বান্দাদের প্রতিও বিশেষ দয়ালু। কারণ, তিনি তাদেরকে সত্যিই অগণিত নিয়ামত দিয়েছেন।
১৬৪. নিশ্চয়ই আকাশ ও জমিন এবং এতদুভয়ের মধ্যকার আল্লাহর আশ্চর্য সৃষ্টিসমূহ, রাত ও দিনের বিবর্তন, মানুষের উপকারী খাদ্য, পোশাক, ব্যবসায়ী পণ্য ও প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী বহনকারী সাগরের পানিতে চলমান জাহাজসমূহ, ঘাস ও শস্য উৎপন্নকারী তথা জমিনে নতুন প্রাণ সঞ্চারকারী আকাশ থেকে নাযিলকৃত বৃষ্টি এবং তাতে বিস্তৃত সকল জীব তেমনিভাবে বাতাসের এদিক ওদিক গমনাগমন, আকাশ ও জমিনের মধ্যকার নিয়ন্ত্রিত মেঘমালা ইত্যাদির মাঝে বুদ্ধিমান ও বিবেকবান লোকদের জন্য আল্লাহর এককত্বের উপর সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
১৬৫. এ সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ থাকা সত্তে¡ও কিছু কিছু মানুষ আল্লাহ ছাড়া অন্যান্যদেরকে তাঁর সমকক্ষ ইলাহ বানিয়ে নেয়। যাদেরকে তারা আল্লাহর মতোই ভালোবাসে। অথচ সত্যিকার ঈমানদাররা আল্লাহ তা‘আলাকে বেশি ভালোবাসে। কারণ, তারা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করে না। বরং তারা তাঁকে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য তথা সর্বাবস্থায় ভালোবাসে। আর ওরা তাদের মা’বূদদেরকে সুখের সময় ভালোবাসে কিন্তু দুঃখের সময় তারা আল্লাহকেই ডাকে। যদি পাপী ও মুশরিক জালিমরা পরকালে তাদের জন্য নির্ধারিত শাস্তির ভয়াবহতা দেখতে পেতো তাহলে তারা বুঝতে পারতো যে, একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই সকল শক্তির আধার এবং তিনি তাঁর অবাধ্যদের শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কঠোর। তারা যদি এ অবস্থা দেখতে পেতো তাহলে তারা আর কখনো আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করতো না।
১৬৬. আর তা যখন হবে তখন অনুসৃত নেতারা কিয়ামতের ভয়াবহতা দেখে তাদের অনুগত দুর্বলদের কোন দায়িত্ব না নেয়ার ঘোষণা দিবে। সে দিন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে এবং তাদের মুক্তির সকল উপায়-উপকরণ ছিন্ন হয়ে যাবে।
১৬৭. তখন তাদের অনুসারীরা বলবে: হায়! আফসোস! আমরা যদি আবার দুনিয়াতে ফিরে যেতে পারতাম তাহলে তারা যেভাবে আজ আমাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে ঠিক সেভাবে আমরাও তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে দেখিয়ে দিতাম। বস্তুতঃ যেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে পরকালের কঠিন শাস্তি দেখাবেন তেমনিভাবে তিনি তাদেরকে তাদের নেতাদের অন্ধভাবে আনুগত্যের পরিণতিও দেখিয়ে দিবেন। যা তখন লজ্জা ও দুশ্চিন্তা হিসেবে দেখা দিবে। তথাপি তারা সে জাহান্নাম থেকে কখনো বের হতে পারবে না।
১৬৮. হে মানুষ! তোমরা জমিনের যে কোন পশু, গাছপালা ও তরুলতা খেতে পারো। যা অর্জন করা তোমাদের জন্য হালাল এবং যা মূলতই পাক; নাপাক নয়। আর তোমরা শয়তানের দেখানো কোন পথের অনুসরণ করো না যেগুলোর মাধ্যমে সে তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে চায়। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রæ। বস্তুতঃ কোন বুদ্ধিমানের কাজ নয় সে শত্রæর অনুসরণ করা যে সর্বদা তাকে কষ্ট দিতে ও পথভ্রষ্ট করতে সচেষ্ট।
১৬৯. শয়তান কেবল তোমাদেরকে নিকৃষ্ট পাপ ও বড় বড় গুনাহের আদেশ করবে। তেমনিভাবে সে তোমাদেরকে সর্বদা প্রবঞ্চনা দিবে যেন তোমরা আক্বীদা-বিশ্বাস ও শরীয়তের ব্যাপারে আল্লাহর উপর এমন কথা বানিয়ে বলো যে ব্যাপারে তোমাদের নিকট আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে কোন দলীল নেই।
১৭০. যখন কাফিরদেরকে বলা হয়, তোমরা আল্লাহর নাযিলকৃত হিদায়েত ও আলোর অনুসরণ করো। তারা তখন হঠকারিতা দেখিয়ে বলে: না, আমরা তা অনুসরণ করবো না। বরং আমরা সে বিশ্বাস ও রেওয়াজেরই অনুসরণ করবো যেগুলোর উপর আমরা নিজেদের বাপ-দাদাকে পেয়েছি। আচ্ছা, তাদের বাপ-দাদারা যদি একটুও বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ না করে থাকে এবং সত্য ও সঠিক পথের সন্ধান না পেয়ে থাকে তাহলেও কি তারা তাদেরই অনুসরণ করে যেতে থাকবে?
১৭১. যে কাফিররা নিজেদের বাপ-দাদার অনুসরণ করে তাদের দৃষ্টান্ত সে রাখালের ন্যায় যে তার চরানো পশুগুলোকে খুব চিৎকার দিয়ে ডাকে। বস্তুতঃ তারা তো তার ডাক শুনতে পায় ঠিকই তবে তারা তার কোন কথাই বুঝতে পারে না। মূলতঃ তারা বধির। তারা মঙ্গলজনক কোন সত্য শুনতে পায় না। তারা মূক। তারা কোন সত্য কথা বলতে পারে না। তারা অন্ধ। তাই আপনি তাদেরকে যে হিদায়েতের দিকে ডাকছেন তা তারা বুঝতে পারে না।
১৭২. হে আল্লাহতে বিশ্বাসী ও নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর অনুসারী ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর দেয়া পবিত্র ও হালাল রিযিক ভক্ষণ করো। যদি তোমরা এককভাবে তাঁরই ইবাদাত করতে চাও এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করা থেকে পবিত্র থাকতে চাও তাহলে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্যভাবে আল্লাহর নিয়ামতসমূহের কৃতজ্ঞতা আদায় করো। আর তাঁর সঠিক কৃতজ্ঞতা আদায় করা হলো তাঁর বিশেষ আনুগত্য করা ও তাঁর বিরুদ্ধাচরণ থেকে দূরে থাকা।
১৭৩. নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা প্রবাহিত রক্ত, শূকরের গোস্ত, এমন পশু-পাখি যা শরীয়তসম্মতভাবে জবাই করা ছাড়া এমনিতেই মারা গেছে এবং যে পশু আল্লাহ তা‘আলার নাম ছাড়া অন্য কারো নামে জবাই করা হয়েছে তোমাদের উপর হারাম করেছেন। তবে কেউ তা খেতে একান্ত বাধ্য হলে তা ভিন্ন কথা। যদি সে প্রয়োজন ছাড়া না খেতে চায় এবং প্রয়োজনের অতিরিক্তও না খায় তাহলে এতে তার কোন পাপ ও শাস্তি হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর তাওবাকারী বান্দাদেরকে ক্ষমাকারী ও তাদের প্রতি অত্যন্ত দয়াশীল। আর তাঁর রহমতের একটি নমুনা হলো কেউ একান্ত বাধ্য হলে তাকে প্রয়োজন মাফিক শর্তসাপেক্ষে হারাম খাওয়ার সুযোগ দেয়া।
১৭৪. যারা আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাবসমূহ এবং তাতে যে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নবুওয়াত ও সত্যের বর্ণনা রয়েছে তা লুকিয়ে রাখে - যেমনটি ইহুদি ও খ্রিস্টানরা করে থাকে - উপরন্তু তা লুকিয়ে রাখার বিনিময়ে দুনিয়ার সামান্যকিছু লাভ করে যেমন: নেতৃত্ব, পদ ও সম্পদ ইত্যাদি গ্রহণ করে তারা মূলতঃ তাদের পেটে এমন কিছু ঢুকায় যা তাদের জাহান্নামের শাস্তির কারণ হবে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তাদের পছন্দসই কোন কথা বলবেন না বরং তিনি সেদিন যা বলবেন তা শুনে শুধু তাদের কষ্টই লাগবে। আর তিনি তাদেরকে পবিত্র ও প্রশংসিত করবেন না। বরং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
১৭৫. এরা যারা মানুষের প্রয়োজনীয় জ্ঞানগুলো লুকিয়ে রেখেছে তারা মূলতঃ সত্য গোপনের মাধ্যমে হিদায়েতের পরিবর্তে ভ্রষ্টতাকে এবং ক্ষমার পরিবর্তে আল্লাহর আযাবকে বেছে নিয়েছে। জাহান্নামে যাওয়ার কারণ সংঘটনে তাদের সাহস কতোই না বিস্ময়কর! তাদেরকে দেখলে মনে হয় তারা যেন জাহান্নামের শাস্তি ভোগের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে।
১৭৬. জ্ঞান ও হিদায়েত লুকানোর উক্ত প্রতিদান এ জন্যই যে, বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ঐশী গ্রস্থগুলো সত্য সহকারে নাযিল করেছেন। আর এর দাবী হলো সেগুলোকে প্রকাশ করা; লুকিয়ে না রাখা। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর ঐশী কিতাবসমূহের ব্যাপারে ভিন্নতা দেখিয়েছে তথা সেগুলোর কোনটির উপর ঈমান এনেছে আর কোনটিকে লুকিয়ে রেখেছে তারা সত্য ও সঠিক থেকে অনেক দূরে।
১৭৭. আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় কল্যাণকর কাজ শুধু পূর্ব বা পশ্চিম দিকে চেহারা ফিরানো বা তা পরিবর্তন নয়। বরং কারো জন্য সর্বাধিক কল্যাণকর কাজ হলো এই যে, সে এক আল্লাহর উপর এবং কিয়ামত দিবস, সকল ফিরিশতা, সকল নাযিলকৃত কিতাব ও সকল নবীদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে। তাঁদের মাঝে কোন ধরনের ভিন্নতা সৃষ্টি করবে না। তেমনিভাবে সে আল্লাহর ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আত্মীয়-স্বজন, ছোট কালে বাপ মরা ইয়াতীম, গরীব, নিজ পরিবার ও দেশ থেকে অনেক দূরে তথা সফরে থাকা ব্যক্তি - যে প্রয়োজনের খাতিরে অন্যের নিকট হাত পাততে বাধ্য - এমন ব্যক্তিদের জন্য নিজ সম্পদ খরচ করে। আর যারা মানুষদেরকে অন্যের গালামী ও বন্দীদশা থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য নিজ সম্পদ ব্যয় করে, আল্লাহর নির্দেশ মাফিক পরিপূর্ণভাবে নামায ও ধার্যকৃত যাকাত আদায় করে, অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করে এবং যারা দুঃখ-কষ্ট, দারিদ্র ও রোগ-ব্যাধির ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করে। উপরন্তু কঠিন যুদ্ধের সময় ধৈর্য ধারণ করে; পালিয়ে যায় না। বস্তুতঃ তারাই নিজেদের কর্ম ও ঈমানে আল্লাহর সাথে সত্যবাদী এবং তারাই আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ মানার ক্ষেত্রে ধর্মভীরু-মুত্তাকী।
১৭৮. হে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ও তাঁর রাসূলের অনুসারীরা! যারা ইচ্ছাকৃতভাবে ও অত্যাচারবশতঃ অন্যকে হত্যা করে তাদের ব্যাপারে তোমাদের উপর হত্যার বদলা তথা অপরাধের সমপরিমাণ শাস্তির বিধান আবশ্যক হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হলো। স্বাধীনকে স্বাধীনের পরিবর্তে, গোলামকে গোলামের পরিবর্তে এবং মহিলাকে মহিলার পরিবর্তে হত্যা করা। যদি হত্যাকৃত ব্যক্তি তার মৃত্যুর পূর্বে ক্ষমা করে দেয় অথবা তার কোন ওয়ারিশ রক্তপাতের বিনিময়মূল্য গ্রহণ করে তাহলে ক্ষমাকারী ব্যক্তিকে অবশ্যই ক্ষমাকৃত ব্যক্তির সাথে সুন্দরভাবে আচরণ করতে হবে। তাকে কোন ধরনের অনুগ্রহের খোঁটা কিংবা কোনভাবে কষ্ট দেয়া যাবে না। আর হত্যাকারী ব্যক্তিকে অবশ্যই সুন্দরভাবে বিনিময়মূল্য আদায় করতে হবে। তাতে কোন ধরনের টালবাহানা কিংবা মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে বিলম্ব করা যাবে না। এ ক্ষমা ও বিনিময়মূল্য আদায়ের সুবিধা তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে সহজীকরণ ও এ উম্মতের উপর বিশেষ দয়া। অতএব, ক্ষমা কিংবা বিনিময়মূল্য নেয়ার পরও কেউ যদি হত্যাকারীর উপর আক্রমণ করে বসে তাহলে তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে কঠিন শাস্তি রয়েছে।
১৭৯. আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য কিসাসের তথা অপরাধের সমপরিমাণ শাস্তির যে বিধান দিয়েছেন তাতে তোমাদের সত্যিকারের জীবন লুকিয়ে আছে। তাতে রয়েছে তোমাদের রক্তের হিফাযত ও পারস্পরিক অত্যাচারের প্রতিরোধ। তবে এটি বুঝবে ওই বুদ্ধিমানরা যারা আল্লাহর শরীয়ত মানা ও তা আমল করার মাধ্যমে তাঁকে ভয় করে।
১৮০. তোমাদের উপর ফরয করা হয়েছে যে, যখন তোমাদের কারো নিকট মৃত্যুর কোন আলামত ও কারণ পরিলক্ষিত হয় এবং তার যদি প্রচুর সম্পদ থাকে তাহলে সে যেন তার মাতা-পিতা ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য শরীয়তের গÐীর ভিতরে থেকে তথা তার সম্পদের এক তৃতীয়াংশ কিংবা তার কমের ওসীয়ত করে। এটি করা মুত্তাকীদের একটি নিশ্চিত অধিকার। বস্তুতঃ মিরাসের আয়াতসমূহ নাযিল হওয়ার পূর্বে এ বিধান বলবৎ ছিলো। অতঃপর যখন মিরাসের আয়াতসমূহ নাযিল হয় তখন কে মিরাস পাবে বা কতটুকু পাবে তা সুস্পষ্টরূপে বলে দেয়া হয়।
১৮১. অতএব, যে ব্যক্তি ওসীয়তে বেশ-কম করবে কিংবা তা জেনেও তাকে নাকচ করবে তাহলে তা পরিবর্তনের গুনাহ পরিবর্তকারীদের উপরই বর্তাবে; ওসীয়তকারীর উপর নয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের সকল কথা শুনেন ও তাদের সকল কর্মকাÐ সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন। তাদের কোন অবস্থাই তাঁর নাগালের বাইরে নয়।
১৮২. কেউ যদি অসীয়তকারীর মাঝে সত্যকে এড়িয়ে যাওয়া কিংবা কারো প্রতি যুলুম করার আশঙ্কা করে অতঃপর ব্যাপারটি সংশোধন করতঃ অসীয়ত নিয়ে দ্ব›দ্বকারীদের মাঝে মীমাংসা করে দেয় তাতে কোন দোষ নেই। বরং সে এ সংশোধনের জন্য পুণ্যপ্রাপ্ত হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের মধ্যকার তাওবাকারীদেরকে ক্ষমা ও তাদের প্রতি দয়া করেন।
১৮৩. হে আল্লাহতে বিশ্বাসী এবং তাঁর রাসূলের অনুসারী ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে রোযা ফরয করা হয়েছে যেমনিভাবে তা তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের উপর ফরয করা হয়েছিলো। আশা করি, তোমরা নেক আমলসমূহ বিশেষ করে রোযার মাধ্যমে আল্লাহর শাস্তি ও তোমাদের মাঝে এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে।
১৮৪. তোমাদের উপর ফরয রোযা হলো তোমরা পুরো বছরে হাতে গণা মাত্র কয়েকদিন রোযা রাখবে। তবে তোমাদের কেউ যদি এমন অসুস্থ হয় যে, রোযা রাখা তার জন্য খুবই কষ্টকর কিংবা কেউ যদি মুসাফির হয় তাহলে সে ওই দিনগুলোতে রোযা না রেখে অন্য সময় তার সমপরিমাণ রোযা কাযা করে নিতে পারবে। আর যারা রোযা রাখতে সক্ষম তারা রোযা না রেখে ফিদিয়াহ দিলেও চলবে। ফিদিয়াহ হলো প্রত্যেক দিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খানা খাওয়ানো। তবে রোযা না রেখে ফিদিয়াহ দেয়ার চেয়ে রোযা রাখা তোমাদের জন্য অনেক উত্তম। তোমরা যদি জানতে রোযার ফযীলত কী? তাহলে তোমরা তাই করতে। মূলতঃ এ বিধানটি প্রযোজ্য ছিলো রোযার বিধান চালু হওয়ার শুরুতে। তখন যে চাইতো রোযা রাখতো, আর যে চাইতো রোযা না রেখে খানা খাওয়াতো। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা সকল শক্তিমান বালিগ পুরুষ ও মহিলার উপর রোযা রাখাই ফরয করে দিয়েছেন।
১৮৫. রোযার মাস হলো এমন মাস যার মাঝে বিশেষ করে কদরের রাতে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর কুর‘আন নাযিল হওয়া শুরু হয়। আল্লাহ তা‘আলা তা নাযিল করেছেন মানব জাতির হিদায়েতের জন্য। তাতে রয়েছে হিদায়েতের সুস্পষ্ট প্রমাণাদি ও সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্যকারী উপকরণ। অতএব, কেউ সুস্থ ও মুকীম (নিজের এলাকায় অবস্থানকারী) অবস্থায় রমযান মাস পেলে সে যেন অবশ্যই রোযা রাখে। আর যে অসুস্থ - যার জন্য রোযা রাখা কষ্টকর - অথবা যে মুসাফির সে এসময় রোযা না রাখলেও চলবে। তবে রোযা না রাখলে তাকে অবশ্যই এ দিনগুলোর পরিবর্তে এর সমপরিমাণ দিন রোযা কাযা করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা রোযার এ বিধানের মাধ্যমে তোমাদের কাজ সহজ করে দিতে চান; কোন ধরনের কষ্ট দিতে চান না। যাতে করে তোমরা পুরো মাসের রোযার সংখ্যা ঠিক রাখতে পারো এবং রমযান মাসের শেষে বিশেষ করে ঈদের দিনে আল্লাহর মহত্ত¡ বর্ণনা করতে পারো। কারণ, তিনিই তো তোমাদেরকে রোযা রাখা ও তা পরিপূর্ণ করার তাওফীক দিয়েছেন। এমনিভাবে তোমরা যেন আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারো। কারণ, তিনিই তো তোমাদেরকে এ পছন্দীয় ধর্মের দিশা দিয়েছেন।
১৮৬. হে নবী! আমার বান্দারা যদি আপনাকে আমার নৈকট্যলাভ ও তাদের দু‘আ কবুল হওয়া বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে তাহলে আপনি বলুন: আল্লাহ নিজেই বলছেন: নিশ্চয়ই আমি তাদের নিকটবর্তী, তাদের অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞাত ও তাদের দু‘আ শ্রবণকারী। তাই তাদের কাউকে মাধ্যম বানানোর কোন প্রয়োজন নেই। এমনকি তাদের আওয়াজকেও সুউচ্চ করার কোন প্রয়োজন নেই। বরং আহŸানকারী যখনই আমাকে নিষ্ঠার সাথে ডাকে তখনই আমি তার ডাকে সাড়া দিয়ে থাকি। তাই তারা যেন সর্বদা আমি ও আমার আদেশের অনুগত হয়। আর নিজেদের ঈমানের উপর অটল থাকে। এটিই হলো মূলতঃ তাদের ডাকে আমার সাড়া দেয়ার একটি বিশেষ উপলক্ষ। আশা করি তারা এর মাধ্যমে নিজেদের ধর্মীয় ও দুনিয়ার সকল বিষয়ে সঠিক পথের সন্ধান পাবে।
১৮৭. ইসলামে রোযার বিধান নাযিলের শুরুর দিকে কেউ যদি রোযার রাতে ঘুমিয়ে পড়তো এবং ফজরের পূর্বে সে জাগতো তখন তার জন্য কোন কিছু খাওয়া ও স্ত্রী সহবাস হারাম ছিলো। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তা রহিত করেছেন। তাই হে মু’মিনগণ! আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য রোযার রাতে স্ত্রী সহবাস করা হালাল করে দিয়েছেন। বস্তুতঃ তারা তোমাদের জন্য আচ্ছাদন ও সাধুতার মাধ্যম আর তোমরাও তাদের জন্য আচ্ছাদন ও সাধুতার মাধ্যম। তোমাদের কেউ কখনো অন্যের প্রতি অমুখাপেক্ষী হতে পারো না। আল্লাহ তা‘আলা জানেন তোমরা তাঁর নিষিদ্ধ কর্মকাÐে জড়িত হয়ে বস্তুতঃ তোমরা নিজেদেরই ক্ষতি করেছো। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা দয়া করেই তোমাদের তাওবা গ্রহণ করেছেন। আর তোমাদের ব্যাপারগুলোকে সহজ করে দিয়েছেন। তাই তোমরা এখন তাদের সাথে সহবাস করতে পারো। আর আল্লাহ কর্তৃক তোমাদের জন্য বরাদ্দকৃত সন্তানাদি গ্রহণ করতে পারো। উপরন্তু তোমরা পুরো রাতই খেতে ও পান করতে পারো যতক্ষণনা ফজরের শুভ্রতা রাতের অন্ধকার থেকে পৃথক হয়ে তথা সুবহে সাদিক পরিষ্কারভাবে দেখা দেয়। অতঃপর তোমরা ফজর উদয়ের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোযা ভঙ্গ করে এমন বস্তুসমূহ থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে রোযাগুলো পরিপূর্ণ করো। তবে তোমরা ই’তিকাফ থাকা অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে সহবাস করো না। কারণ, এটি ই’তিকাফকে নষ্ট করে দেয়। উপরোক্ত বিধানগুলো মূলতঃ হালাল ও হারামের মাঝে দেয়া আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা। অতএব, কখনো তার নিকটবর্তী হয়ো না। কারণ, যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমারেখাগুলোর নিকটবর্তী হবে সে অচিরেই হারামে পতিত হবে। এ বিধানগুলোর পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট বর্ণনার ন্যায় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আয়াতসমূহ মানুষের জন্য বর্ণনা করে থাকেন। যাতে তারা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মানার মাধ্যমে তাঁকে ভয় করতে পারে।
১৮৮. তোমাদের কেউ কারো সম্পদ অবৈধভাবে গ্রাস করো না। যেমন: চুরি, অপহরণ ও ধোঁকা দেয়া ইত্যাদি। উপরন্তু তোমরা সম্পদের লোভ দেখিয়ে বিচারকদের নিকট কোন বিচার নিয়ে যেয়ো না যাতে তোমরা অবৈধভাবে মানুষের কিছু সম্পদ গ্রাস করতে পারো; অথচ তোমরা জানো আল্লাহ তা‘আলা এটিকে হারাম করেছেন। কারণ, হারাম জেনে গুনাহর প্রতি অগ্রসর হওয়া খুবই নিকৃষ্ট কাজ এবং একটি গুরুতর অপরাধ।
১৮৯. হে রাসূল! তারা তোমাকে চাঁদগুলোর গঠন ও সেগুলোর অবস্থার পরিবর্তন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে। তুমি তাদেরকে এর রহস্য সম্পর্কে উত্তর দিতে গিয়ে বলবে যে, এগুলো হলো মানুষের সময় নির্ধারক। যার মাধ্যমে তারা নিজেদের ইবাদাতের সময়গুলো জানতে পারবে। যেমন: হজ্জের মাসসমূহ, রোযার মাস, যাকাতের বছর পরিপূর্ণ হওয়া। তেমনিভাবে তারা এগুলোর মাধ্যমে নিজেদের মধ্যকার লেনদেনসমূহের সময় জানতে পারবে। যেমন: দিয়ত তথা রক্তমূল্য ও ঋণের সময় নির্ধারণ। নিশ্চয়ই হজ্জ ও উমরাহর ইহরামের সময় ঘরের পেছন দিয়ে আসার মাঝে কোন কল্যাণ ও সাওয়াব নিহিত নেই। যা তোমরা জাহিলী যুগে মনে করতে। বরং নিশ্চিত কল্যাণ হলো ওর যে প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে আল্লাহকে ভয় করতে পেরেছে। অথচ ঘরের দরজাগুলো দিয়েই ঘরে প্রবেশ করা তোমাদের জন্য অতি সহজ ও আরামদায়ক। আর আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে এমন কিছু করতে বাধ্য করেননি যা খুব কঠিন ও কষ্টদায়ক। তোমরা নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর আযাব ও তোমাদের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারো। যাতে করে তোমরা নিজেদের পছন্দনীয় জিনিস পেয়ে এবং অপছন্দনীয় জিনিস থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে সফলতা পেতে পারো।
১৯০. আর তোমরা আল্লাহর বাণীকে সুউচ্চ করার মানসে সেই কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করো যারা তোমাদেরকে আল্লাহর দ্বীন থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য তোমাদের সাথে যুদ্ধ করছে। তবে তোমরা শিশু, বৃদ্ধ ও মহিলাদেরকে হত্যা করা অথবা হত্যাকৃতদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে দেয়া ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহর দেয়া সীমারেখা অতিক্রম করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর শরীয়ত ও বিধানের সীমারেখা অতিক্রমকারীদেরকে ভালোবাসেন না।
১৯১. তোমরা তাদেরকে যেখানেই পাও হত্যা করো। তেমনিভাবে তোমরা তাদেরকে সেখান থেকে বের করে দাও যেখান থেকে তারা তোমাদেরকে বের করে দিয়েছে। তথা মক্কা আল-মুকাররামাহ। বস্তুতঃ কোন মু’মিনকে তার ধর্ম থেকে বের করে কুফরির দিকে নিয়ে যাওয়ার ফিতনা তাকে হত্যা করার চেয়েও মারাত্মক। আর তোমরা মসজিদে হারামের সম্মানার্থে সেখানে কোন ধরনের হত্যাকাÐ শুরু করো না যতক্ষণনা তারা সেখানে তোমাদের সাথে হত্যাকাÐ শুরু করে। যদি তারা মসজিদে হারামে হত্যাকাÐ শুরু করে তাহলে তোমরা তাদেরকে হত্যা করবে। আর কাফিরদের প্রতিদান এমনই হবে। তারা মসজিদে হারামে অত্যাচার চালালে তাদেরকে হত্যা করা হবে।
১৯২. তারা যদি তোমাদের সাথে হত্যাকাÐে লিপ্ত হওয়া ও কুফরি কাজ করা থেকে বিরত থাকে তাহলে তোমরাও তাদেরকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাওবাকারীদের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। তাই তিনি তাদেরকে পূর্বের গুনাহর জন্য পাকড়াও করবেন না। বরং তিনি তাদেরকে দ্রæত শাস্তি না দিয়ে তাদের প্রতি দয়া করবেন।
১৯৩. তোমরা কাফিরদের সাথে হত্যাকাÐ চালিয়ে যাও যতক্ষণনা শিরক, আল্লাহর পথে মানুষকে বাধা দেয়া ও কুফরি কাজ নিঃশেষ হয়ে যায়। আর আল্লাহর দ্বীনই একমাত্র বিজয়ী ধর্ম হয়। যদি তারা তাদের কুফরি ও আল্লাহর পথে বাধা দেয়া থেকে ফিরে আসে তাহলে তোমরা তাদের সাথে হত্যাকাÐ চালানো থেকে দূরে থাকো। কারণ, একমাত্র কাফির ও আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টিকারী যালিম ছাড়া আর কারো উপর অত্যাচার করা চলবে না।
১৯৪. ষষ্ঠ হিজরীর যে মাসে মুশরিকরা তোমাদেরকে হারাম এলাকায় প্রবেশে বাধা দিয়েছে সেটির বিনিময় হলো সপ্তম হিজরীর এই হারাম মাস। যে মাসে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে হারামে তথা মক্কায় প্রবেশ করিয়ে উমরা করার সুযোগ দিয়েছেন। সম্মানজনক বস্তুগুলো যেমন: হারাম এলাকা তথা মক্কা, সম্মানিত মাস যেমন: শাওয়াল, যিলকদ, যিলহজ্জ ও রজব এবং ইহরামের সম্মান কোন অত্যাচারীর পক্ষ থেকে তা ক্ষুণœ হলে তাতে কিসাস তথা তার অপরাধের সমপরিমাণ শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা চলবে। সুতরাং কেউ এই সময় ও এলাকায় তোমাদের উপর অত্যাচার করলে তার সাথে তার কাজের সমপরিমাণ আচরণ করবে। তবে এ ক্ষেত্রে তোমরা সমপরিমাণের সীমা অতিক্রম করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সীমাসমূহ অতিক্রমকারীদেরকে পছন্দ করেন না। তোমরা সেই পরিমাপ অতিক্রম করার ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো যার ব্যাপারে তিনি তোমাদেরকে অনুমতি দিয়েছেন। উপরন্তু তোমরা এ কথা জেনে রাখো যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাওফীক ও সহয়োগিতার ক্ষেত্রে মুত্তাকীদের সাথেই রয়েছেন।
১৯৫. আর তোমরা নিজেদের সম্পদ আল্লাহর আনুগত্য তথা জিহাদ ও অনুরূপ ক্ষেত্রে ব্যয় করো। কখনো নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়ো না। অর্থাৎ তোমরা জিহাদ ও জিহাদের পথে সম্পদ ব্যয় করা পরিত্যাগ করো না। এমনিভাবে তোমরা নিজেদেরকে এমন কাজে ঠেলে দিয়ো না যা তোমাদের ধ্বংসের কারণ হবে। তোমরা সুন্দরভাবে নিজেদের ইবাদাত, লেনদেন ও কাজকর্ম চালিয়ে যাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা প্রতিটি ক্ষেত্রে সৎকর্মশীলদেরকেই পছন্দ করেন। তাই তিনি তাদেরকে বেশি সাওয়াব ও সত্যের দিশা দিবেন।
১৯৬. তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় হজ্জ ও উমরাহ পরিপূর্ণভাবে আদায় করো। আর যদি তোমরা রোগ ও শত্রæর দরুন তা পরিপূর্ণ করতে বাধাগ্রস্ত হও তাহলে তোমরা উট, গরু ও ছাগলের মধ্যে যেটি সহজে পাও সেটিই হাদি হিসেবে জবাই করো। যাতে তোমরা নিজেদের ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যেতে পারো। আর তোমরা নিজেদের মাথা মুÐন কিংবা চুল ছোট করো না যতক্ষণনা হাদি এমন জায়গায় পৌঁছাবে যেখানে তাকে জবাই করা জায়িয। যদি হারামে ঢুকতে বাধা দেয়া হয় তাহলে সেখানেই সেটিকে জবাই করবে যেখানে তাকে বাধা দেয়া হয়েছে। আর যদি তাকে হারামে ঢুকতে বাধা না দেয়া হয় তাহলে সে ঈদের দিনে অথবা তার পরের তাশরীকের তিন দিনে তথা যিলহজ্জ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে হারামেই সেটিকে জবাই করবে। তোমাদের কেউ রোগাক্রান্ত হলে অথবা তার মাথার চুল উকুন বা তদ্রƒপ কোন কিছুর দ্বারা কষ্টের কারণে মুÐন করলে তাতে কোন অসুবিধে নেই। তবে তাকে এ জন্য তিনটি রোযা, হারাম এলাকার ছয়জন মিসকীনকে খাওয়ানো কিংবা একটি ছাগল ফিদয়াহ হিসেবে দিতে হবে। তবে ছাগলের ক্ষেত্রে সেটিকে জবাই করে এর গোস্ত হারামের ফকিরদের মাঝে বন্টন করা হবে। অতঃপর তোমরা যদি শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করো তাহলে তোমাদের যে ব্যক্তি হজ্জের মাসগুলোতে উমরার ফায়েদা গ্রহণ করবে এবং ইহরাম অবস্থায় যা নিষিদ্ধ এমন কোন কাজ করবে অতঃপর সে বছরেই হজ্জ করবে সে যেন একটি ছাগল জবাই অথবা সাত জনে মিলে একটি উট বা গরু জবাই তথা যা তার জন্য সহজ তাই করে। আর যদি সে কোন হাদি জবাই করার সক্ষমতা না রাখে তাহলে সে এর পরিবর্তে হজ্জের দিনগুলোতে তিনটি এবং বাড়ি ফিরে সাতটি রোযা রাখবে। যাতে দশটি রোযা একেবারেই পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এ সুবিধাটুকু শুধু তাদের জন্য যাদের ঘর-বাড়ী কা’বা ঘরের নিকটবর্তী নয়। সুতরাং হাদিসহ অথবা তার পরিবর্তে রোযাসহ এ তামাত্তু’ হজ্জটি হারামের অধিবাসী এবং তার নিকটবর্তী লোকদের জন্য নয়। কারণ, তাদের তামাত্তু’ করার কোন প্রয়োজনই নেই। যেহেতু তারা হারামের এলাকাতেই থাকে এবং তাদের জন্য তামাত্তু’ না করে শুধু তাওয়াফ করাই যথেষ্ট। আর তোমরা শরীয়তের অনুসরণ ও তাঁর দেয়া সীমারেখার প্রতি সম্মান দেখানোর মাধ্যমে আল্লাহকে ভয় করো। জেনে রেখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আদেশ লঙ্ঘনকারীদের কঠিন শাস্তিদাতা।
১৯৭. হজ্জের সময় হলো মূলতঃ গুটি কয়েক মাস। যা শাওয়াল মাসে শুরু হয়ে যিল-হজ্জের দশ তারিখে শেষ হয়। সুতরাং কেউ যদি এ মাসগুলোতে নিজের উপর হজ্জকে বাধ্যতামূলক করে নিয়ে ইহরাম বেঁধে ফেলে তাহলে তার জন্য স্ত্রী সহবাস ও তার আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো নিষিদ্ধ। তেমনিভাবে তার জন্য সময় ও স্থানের গুরুত্বের দরুন আল্লাহর আনুগত্য থেকে বের হয়ে এসে যে কোন পাপে লিপ্ত হওয়া সমধিকভাবে নিষিদ্ধ। অনুরূপভাবে তার জন্য এমন তর্কও হারাম যা রাগ ও ঝগড়া পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়। তোমরা যে কল্যাণের কাজগুলো করো তা সবই আল্লাহ জানেন এবং তিনি তার প্রতিদান দিবেন। আর তোমরা হজ্জকর্ম আদায়ের জন্য নিজ ঘর থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য-পানীয় নিয়ে বের হবে। জেনে রাখো, তোমাদের যে কোন কাজের সর্বোত্তম প্রেরণা হলো একমাত্র আল্লাহভীরুতা। তাই হে সুস্থ বিবেকবানরা! তোমরা আমার আদেশ-নিষেধ মানার মাধ্যমে আমাকেই ভয় করো।
১৯৮. হজ্জ মৌসমে ব্যবসা ইত্যাদির মাধ্যমে হালাল রিযিক অনুসন্ধান করায় বস্তুতঃ কোন গুনাহ নেই। তোমরা যিলহজ্জের নয় তারিখে আরাফাতে অবস্থান করার পর সেখান থেকে যিল-হজ্জের দশ তারিখ রাতে মুযদালিফায় যাওয়ার সময় তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ), তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এবং মুযদালিফার মাশআরে হারামের নিকট দু‘আর মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করো। তোমরা আল্লাহকে স্মরণ করো যেহেতু তিনি তোমাদেরকে তাঁর ধর্মের নিদর্শনসমূহ এবং তাঁর ঘরের হজ্জের নিয়মকানুন শিখিয়েছেন। কারণ, তোমরা ইতিপূর্বে তাঁর শরীয়ত সম্পর্কে অবগত ছিলে না।
১৯৯. অতঃপর তোমরা আরাফাত থেকে রওয়ানা করো যা ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) এর অনুসারী লোকেরা করতো। জাহিলী যুগের লোকদের ন্যায় করো না যারা সেখানে অবস্থান করতো না। আর তোমরা শরীয়ত পালনে যে কোন ত্রæটির জন্য আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর তাওবাকারী বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
২০০. যখন তোমরা হজ্জের কাজগুলো শেষ করে অবসর হবে তখন আল্লাহকে স্মরণ করো আর তাঁর বেশি বেশি প্রশংসা করো। যেমনিভাবে তোমরা নিজেদের বাপ-দাদাকে নিয়ে গর্ব করো এবং তাদের প্রশংসা করো কিংবা তোমাদের বাপ-দাদাকে স্মরণ করার চাইতে আল্লাহকে আরো বেশি স্মরণ করো। কারণ, তোমরা যে নিয়ামতগুলো ভোগ করছো তা সবই তাঁর কাছ থেকেই আসা। অথচ মানুষ এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকৃতির। তাদের কেউ তো মুশরিক ও কাফির যে এ দুনিয়ার জীবন ছাড়া অন্য কিছুতে বিশ্বাসী নয়। তাই সে তার প্রভুর নিকট দুনিয়ার নিয়ামত ও সৌন্দর্য তথা শারীরিক সুস্থতা, সম্পদ ও সন্তানই কামনা করে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মু’মিন বান্দাদের জন্য পরকালে যা তৈরি করে রেখেছেন তার কিছুই তারা পাবে না। কারণ, তারা তো কেবল দুনিয়াই চেয়েছে এবং আখিরাত থেকে নিজেদের মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
২০১. মানুষের আরেকটি দল হলো আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী। তাই তারা নিজেদের প্রভুর নিকট দুনিয়ার নিয়ামত ও নেক আমল কামনা করে। তেমনিভাবে তারা আল্লাহর নিকট জান্নাত পাওয়ার সফলতা এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি কামনা করে।
২০২. যারা সর্বদা দুনিয়া ও আখিরাতের সমূহ কল্যাণের দু‘আ করে তাদের জন্য রয়েছে সাওয়াবের একটি মহৎ ভাÐার। কারণ, তারা দুনিয়াতে প্রচুর নেক আমল করেছে। আর আল্লাহ তা‘আলা নেক আমলের দ্রæত হিসাব গ্রহণকারী।
২০৩. তোমরা কিছু দিন তাকবীর (আল্লাহু আকবার) ও তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এর মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করো। সে দিনগুলো হলো যিল-হজ্জের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ। সুতরাং কেউ যদি ১২ তারিখে পাথর নিক্ষেপ করে মিনা থেকে দ্রæত বের হয়ে যেতে চায় তাহলে সে যেতে পারে। তাতে কোন প্রকারের গুনাহ নেই। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা ব্যাপারটিকে হালকা করে দিয়েছেন। আর যে ১৩ তারিখের পাথর মারা পর্যন্ত দেরী করবে সেও তা করতে পারে। তাতে কোন অসুবিধে নেই। বরং সে পরিপূর্ণ আমলটাই করলো এবং সে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পুরো কর্মেরই অনুসারী হলো। এ সবই ওই ব্যক্তির জন্য যে হজ্জের সময় আল্লাহকে ভয় করে তাঁর আদেশসমূহ পালন করেছে। তোমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মান্য করে তাঁকেই ভয় করো। এ কথা সুনিশ্চিত যে, তোমরা সবাই তাঁর নিকটই ফিরে যাবে অতঃপর তিনি তোমাদের আমলসমূহের প্রতিদান দিবেন।
২০৪. হে নবী! মানুষের মাঝে কিছু আছে মুনাফিক। যার কথাবার্তা এ দুনিয়াতে আপনার খুব ভালোই লাগবে। দেখবেন, সে খুব সুন্দর কথাই বলছে। এমনকি আপনি তাকে সত্যবাদী এবং কল্যাণকামীই মনে করবেন। অথচ তার মূল উদ্দেশ্য হলো শুধুমাত্র তার জীবন ও সম্পদ রক্ষা করা। উপরন্তু সে মিথ্যাবশতঃ আল্লাহকে তার অন্তরের ঈমান ও কল্যাণের সাক্ষী বানাচ্ছে। আর সে মুসলমানদের কঠিন শত্রæ এবং মারাত্মক ঝগড়াটে।
২০৫. যখন সে আপনার নিকট থেকে ফিরে চলে যায় তখন সে গুনাহর মাধ্যমে জমিনে ফাসাদ সৃষ্টির চেষ্টা করে। তেমনিভাবে সে ফসলের হানি করে এবং গৃহপালিত পশুগুলোকে হত্যা করে। আর আল্লাহ তা‘আলা জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করা ও সৃষ্টিকারীকে কখনোই পছন্দ করেন না।
২০৬. যখন এ ফাসাদ সৃষ্টিকারীকে নসীহত করতে গিয়ে বলা হয়, তুমি আল্লাহকে ভয় করে তাঁর দেয়া সীমারেখাকে সম্মান করো এবং তাঁর নিষিদ্ধ কর্মকাÐ থেকে দূরে থাকো তাঁকে ভয় করো তখন তার অহঙ্কারবোধ ও নিজের সম্মান রক্ষার চিন্তা তাকে সত্যের দিকে ফিরে আসার পথে বাধার সৃষ্টি করে। তখন সে লাগাতার গুনাহই করতে থাকে। তাই তার উপযুক্ত প্রতিদান হলো জাহান্নামে প্রবেশ করা। আর জাহান্নাম হলো তার অধিবাসীদের জন্য অত্যন্ত নিকৃষ্ট একটি গন্তব্যস্থল।
২০৭. আবার মানুষের মাঝে কিছু রয়েছে সত্যিকার ঈমানদার। যারা নিজেদের জীবনকে আল্লাহর নিকট বিকিয়ে দিয়ে প্রভুর আনুগত্যে সেটিকে ব্যয় করে। তারা তাঁর পথে জিহাদ করে ও সর্বদা তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে। আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের প্রতি অতি করুণাময় অতীব দয়ালু।
২০৮. হে আল্লাহতে বিশ্বাসী ও তাঁর রাসূলের অনুসারী ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো; তার কোন কিছুই ছেড়ে দিয়ো না। যা আহলে কিতাবদের চরিত্র। তারা কিতাবের কিছু অংশকে বিশ্বাস করে আর কিছু অংশের সাথে কুফরি করে। আর তোমরা শয়তানের পথের অনুসরণ করো না। কারণ, সে তোমাদের প্রকাশ্য ও সুস্পষ্ট শত্রæ।
২০৯. তোমাদের নিকট অবিমিশ্র ও সুস্পষ্ট প্রমাণাদি আসার পরও যদি তোমাদের পদস্খলন হয় তাহলে জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর শক্তি ও সামর্থ্যে পরাক্রমশালী; তাঁর শরীয়ত রচনা ও বিশ্ব পরিচালনায় প্রজ্ঞাময়। তাই তোমরা তাঁকে সম্মান ও ভয় করে চলো।
২১০. এতো কিছুর পরও যারা সত্যকে পাশ কাটিয়ে শয়তানের পথ অনুসরণ করেছে তারা কি এখনো এই অপেক্ষাই করছে যে, আল্লাহ তা‘আলা মেঘমালার ছায়াতলে নিজেই তাদের নিকট এসে উপস্থিত হবেন এবং ফেরেশতাগণ তাদেরকে চতুর্দিক থেকে বেষ্টন করে রাখবেন? কিন্তু তখনই তো আল্লাহর চ‚ড়ান্ত ফায়সালা ঘোষিত হয়ে যাবে এবং তাদের ব্যাপারসমূহের পরিসমাপ্তি ঘটবে। বস্তুতঃ একমাত্র আল্লাহর দিকেই তাঁর সৃষ্টির সকল ব্যাপার ও কর্মকাÐ প্রত্যাবর্তিত হয়।
২১১. হে নবী! আপনি বনী ইসরাঈলকে তিরস্কার করতঃ জিজ্ঞাসা করুন যে, রাসূলগণের সত্যতা প্রমাণে আমি আল্লাহ তাদের সামনে কতো নিদর্শনাবলী পেশ করেছি। অথচ তারা তা মিথ্যা বলে অগ্রাহ্য করেছে। যারা আল্লাহ তা‘আলার নিয়ামতগুলোকে ভালোভাবে জেনেশুনে তা মিথ্যা বলে অস্বীকার করে আল্লাহ তা‘আলা মূলতঃ এ জাতীয় মিথ্যুক কাফিরদের কঠিন শাস্তিদাতা।
২১২. কাফিরদের জন্য দুনিয়ার জীবন এবং তাতে যে অস্থায়ী ভোগবিলাসের সামগ্রী রয়েছে তা খুব প্রিয় ও লোভনীয় করে দেয়া হয়েছে। তারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসীদেরকে নিয়ে ঠাট্টা করে। অথচ যারা আল্লাহর বিধি-নিষেধ মেনে তাঁকে ভয় করে তারাই পরকালে মর্যাদার ক্ষেত্রে কাফিরদের অনেক উপরে অবস্থান করবে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে আদন নামক জান্নাত দিবেন। তবে দুনিয়ায় রিযিকদানের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টির যাকে চান তাকে বিনা হিসাবে অপরিমিত দিয়ে থাকেন।
২১৩. মানুষজন তো তাদের পিতা আদমের ধর্ম তথা হিদায়েতের উপর এক জাতি- সত্তারূপেই বিদ্যমান ছিলো। অতঃপর শয়তান তাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে। তাই তারা মু’মিন ও কাফিরে বিভক্ত হয়েছে। এ জন্যই আল্লাহ তা‘আলা রাসূলদেরকে পাঠিয়েছেন। যাতে তাঁরা ঈমান ও আনুগত্যকারীদেরকে আল্লাহর প্রস্তুতকৃত রহমতের সুসংবাদ দিতে পারেন আর কাফিরদেরকে আল্লাহর প্রস্তুতকৃত কঠিন শাস্তির ভয় দেখাতে পারেন। তেমনিভাবে তিনি তাঁর রাসূলদের সাথে কিতাবও নাযিল করেছেন যা নিঃসন্দেহ সত্যকে ধারণ করে আছে। যদ্বারা তাঁরা মানুষের দ্ব›দ্বপূর্ণ বিষয়ে ফায়সালা করতে পারেন। বস্তুতঃ তাওরাত নিয়ে ওই ইহুদিরাই দ্ব›দ্ব করেছে যাদেরকে তার সম্যক জ্ঞান দেয়া হয়েছে। অথচ তাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে তার সত্যতার উপর এমন প্রমাণ এসেছে যা নিয়ে মতভেদ করার কোন সুযোগই নেই। মূলতঃ এটি ছিলো তাদের পক্ষ থেকে এক ধরনের অত্যাচার ও হঠকারিতামাত্র। তবে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ইচ্ছায় মু’মিনদেরকে ভ্রষ্টতা থেকে হিদায়েত পার্থক্য করে বুঝার তাওফীক দিয়েছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা যাকে চান তাকে এমন সোজা পথ দেখান যাতে কোন ধরনের বক্রতা নেই। সেটি হলো মূলতঃ ঈমানের পথ।
২১৪. হে মু’মিনরা! তোমরা কি মনে করছো যে, তোমরা এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের উপর এখনো তোমাদের পূর্ববর্তীতের ন্যায় কোন পরীক্ষা তথা বিপদাপদ নেমে আসেনি। তাদেরকে কঠিন দরিদ্রতা ও রোগ-বালাই দেয়া হয়েছিলো। এমনিভাবে প্রচÐ ভয়ভীতি তাদের ভীতকে নাড়িয়ে দিয়েছিলো। তাদের উপর বিপদাপদ এমনভাবে এসেছে যে, তারা দ্রæত আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে বাধ্য হয়েছে। তখন রাসূল ও তাঁর মু’মিন সাথীরা হতাশ হয়ে বলেছে: আল্লাহর সাহায্য কোথায়? জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য মু’মিন ও আল্লাহর উপর নির্ভরশীলদের অতি নিকটেই।
২১৫. হে নবী! আপনার সাথীরা আপনাকে জিজ্ঞাসা করবে, তারা নিজেদের রকমারি সম্পদের কতটুকু ও কোথায় ব্যয় করবে? আপনি তাদের উত্তরে বলুন, তোমরা যে হালাল সম্পদটুকু ব্যয় করতে চাচ্ছো তা যেন প্রয়োজনানুসারে নিজ মাতা-পিতা, নিকটাত্মীয়, গরিব ইয়াতীম, নিঃস্ব ব্যক্তিবর্গ এবং নিজ পরিবার ও দেশ থেকে অনেক দূরে সফরে আটকে পড়া লোকের জন্য ব্যয় করা হয়। হে মু’মিনরা! তোমরা কম-বেশী যে কল্যাণকর কাজই করো না কেন তা নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা জানেন। কোন কিছুই তাঁর নিকট গোপনীয় নয়। তাই তিনি অচিরেই সেগুলোর প্রতিদান দিবেন।
২১৬. হে মু’মিনরা! তোমাদের উপর ফরয করা হয়েছে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করা। সেটি স্বভাবতঃ তোমাদের মনের বিরুদ্ধে। কারণ, তাতে রয়েছে জীবন ও সম্পদহানীর আশঙ্কা এবং তা অকাতরে ব্যয় করা। বস্তুতঃ তোমরা যা অপছন্দ করছো তা কিন্তু তোমাদের জন্য বাস্তবে অতি লাভজনক ও খুবই উত্তম। যেমন: আল্লাহর পথে যুদ্ধ করা। এতে প্রচুর সাওয়াবের পাশাপাশি শত্রæ পক্ষের উপর বিজয় এবং আল্লাহর বাণীকে সুউচ্চ করার ব্যাপারটি অবশ্যই রয়েছে। তেমনিভাবে তোমরা যা পছন্দ করছো তা কিন্তু বাস্তবে তোমাদের জন্য অতি নিকৃষ্ট ও বিপদের কারণ হিসেবে দেখা দিতে পারে। যেমন: আল্লাহর পথে জিহাদ না করে ঘরে বসে থাকা। কারণ, তাতে লাঞ্ছনার পাশাপাশি শত্রæ পক্ষের প্রতিপত্তিও রয়েছে। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলাই পরিপূর্ণভাবে জানেন, কোন জিনিসটি আমাদের জন্য অতি লাভজনক এবং কোন জিনিসটি আমাদের জন্য অতি ক্ষতিকর। তোমরা কিন্তু তা জানো না। তাই তাঁরই আদেশ মান্য করো। তাতেই তোমাদের জন্য অনেক কল্যাণ রয়েছে।
২১৭. হে নবী! মানুষ আপনাকে হারাম মাসগুলো তথা যুল-কি’দাহ, যুল-হিজ্জাহ, মুহাররাম ও রজব মাসে যুদ্ধ করার বিধান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে। আপনি তাদের উত্তরে বলুন: এ মাসগুলোতে যুদ্ধ করা আল্লাহর নিকট খুবই ভয়ানক ও অত্যন্ত অপছন্দনীয়। এমনিভাবে মুশরিকরা যে আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে তাও অতি নিকৃষ্ট। তাছাড়া মু’মিনদেরকে মসজিদে হারামে ঢুকতে নিষেধ করা এবং মসজিদে হারামের অধিবাসীদেরকে সেখান থেকে বের করে দেয়া আল্লাহর নিকট হারাম মাসে যুদ্ধ করার চেয়েও অতি ভয়ানক। আর যে শিরকের উপর তারা বিদ্যমান তা মানব হত্যার চেয়েও অতি ভয়ঙ্কর। হে মু’মিনগণ! মুশরিকরা যতক্ষণনা তোমাদেরকে সত্য ধর্ম থেকে বের করে মিথ্যা ধর্মে ফিরিয়ে আনতে পেরেছে ততক্ষণ অন্যায়ভাবে তোমাদের সাথে যুদ্ধ চালিয়েই যাবে। যদিও তা করা তাদের পক্ষে সম্ভবপর হয়। বস্তুতঃ তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি নিজ ধর্ম থেকে ফিরে এসে আল্লাহর সাথে কুফরি অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে তার সকল নেক আমলই ধ্বংস হয়ে যাবে এবং পরিণতিতে সে পরকালে জাহান্নামের চিরস্থায়ী অধিবাসী হবে।
২১৮. যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান এনেছে, যারা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের দিকে হিজরত করার উদ্দেশ্যে নিজ এলাকা ছেড়েছে এবং যারা আল্লাহর বাণীকে বিজয়ী করার জন্য তাঁর পথে যুদ্ধ করেছে তারাই মূলতঃ আল্লাহর রহমত ও তাঁর ক্ষমালাভের ন্যায়সঙ্গত প্রত্যাশী। আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের গুনাহ ক্ষমাকারী এবং তাদের প্রতি অতি দয়ালু।
২১৯. আল্লাহ তা‘আলা বলেন: হে নবী! আপনার সাথীরা আপনাকে মদপান এবং তা ক্রয়-বিক্রয় করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে। মদ বলতে এমন সকল বস্তুকে বুঝানো হয় যা সেবনের পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মস্তিষ্কের উপর পর্দা পড়ে যায় এবং সে তার বোধশক্তি তাৎক্ষণিক হারিয়ে ফেলে। এমনিভাবে তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করবে জুয়া খেলার বিধান সম্পর্কে। জুয়া বলতে এমন সম্পদকে বুঝানো হয় যা পারস্পরিক প্রতিযোগায় চুক্তিমাফিক বিজয়ী হওয়ার মাধ্যমে সকল প্রতিযোগীর নিকট থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়। তাই আপনি তাদের উত্তরে বলুন: এ দু’টিতে ধর্মীয় ও বৈষয়িক অনেকগুলো ক্ষতিকর দিক রয়েছে। যেমন: মেধা ও সম্পদ নষ্ট এবং পারস্পরিক বিদ্বেষ ও শত্রæতা ইত্যাদি। অন্যদিকে তাতে মানুষের জন্য কিছু উপকারিতাও আছে। যেমন: দুনিয়ার স্বার্থ হাসিল ও কিছু অর্থ উপার্জন। তবে এগুলোর ক্ষতি ও পাপ উপকারিতার চেয়ে অনেক বেশি। আর যে কাজে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি তা করতে পারে না। মূলতঃ এ বর্ণনাটি মদপান হারাম করার ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি ভ‚মিকা স্বরূপ বিবৃতি। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন: হে নবী! আপনার সাথীরা আপনাকে জিজ্ঞাসা করবে কতটুকু সম্পদ সাধারণ সাদকা ও দান হিসেবে আল্লাহর পথে ব্যয় করা যায়? আপনি তাদের উত্তরে বলুন: তোমরা নিজেদের সম্পদ থেকে যা প্রয়োজনাতিরিক্ত তাই ব্যয় করবে। এটি ইসলামের শুরু যুগে ছিলো। পরবর্তীতে আল্লাহ তা‘আলা বিশেষ বিশেষ সম্পদের নির্দিষ্ট পরিমাণের ভিত্তিতে যাকাত ফরয করেন। এ সুস্পষ্ট বর্ণনার মতোই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য শরীয়তের অন্যান্য বিধি-বিধানগুলো বর্ণনা করে থাকেন। যাতে তোমরা তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে পারো।
২২০. আল্লাহ তা‘আলা উক্ত বিধানগুলো নাযিল করেছেন যেন তোমরা দুনিয়া ও আখিরাতে লাভজনক এমন বস্তু নিয়ে চিন্তা করে দেখতে পারো। হে নবী! আপনার সাথীরা আপনাকে প্রশ্ন করবে ইয়াতীমের পৃষ্ঠপোষকতার ব্যাপারে। কীভাবে তারা ওদের সাথে সম্পদের লেনদেন করবে? তারা কি খাদ্য, বাসস্থান ও অন্যান্য খরচাদির ক্ষেত্রে নিজেদের সম্পদকে ওদের সম্পদের সাথে মিশিয়ে ফেলবে? আপনি তাদের উত্তরে বলুন: তোমরা যদি দয়া করে কোন বিনিময় কিংবা তোমাদের সম্পদগুলোকে ওদের সম্পদগুলোর সাথে মিশানো ছাড়া তাদের সম্পদগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করো তাহলে তা তোমাদের জন্য অতি কল্যাণকর ও বেশি সাওয়াবের কারণ হবে। এমনকি তাদের সম্পদগুলোর জন্যও তা অতি লাভজনক হবে। কারণ, তাতে করে তাদের সম্পদগুলো পুরোপুরিভাবে রক্ষা পাবে। আর যদি তোমরা জীবন যাপন ও বাসস্থান ইত্যাদির ক্ষেত্রে নিজেদের সম্পদগুলোর সাথে ওদের সম্পদগুলো মিশিয়ে নাও তাতেও কোন অসুবিধে নেই। কারণ, তারা তোমাদের ধর্মীয় ভাই। আর ভাইতো ভাইয়ের সাহায্য-সহযোগিতা এবং তার কাজের দায়িত্ব পালন করবেই। উপরন্তু আল্লাহ তা‘আলা তো জানেনই অভিভাবকদের মধ্যকার কে ইয়াতীমদের সম্পদগুলোকে নিজের সম্পদগুলোর সাথে মিশিয়ে তা ধ্বংস করার ইচ্ছা পোষণ করে। আর কে তা সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য করে। আল্লাহ চাইলে ইয়াতীমদের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কঠিন বিধান নাযিল করে তোমাদেরকে কষ্ট দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তাদের সাথে তোমাদের লেনদেনের ব্যাপারটি অতি সহজ করে দিয়েছেন। কারণ, তাঁর শরীয়ত সহজ-সরল নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা পরাক্রমশালী; তাকে কেউ পরাজিত করতে পারবে না। এমনকি তিনি তাঁর সৃষ্টি, পরিচালনা ও শরীয়তের ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়।
২২১. হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহর সাথে শিরককারিণী কোন মেয়েকে বিবাহ করো না যতক্ষণনা তারা এক আল্লাহর উপর ঈমান আনে এবং ইসলামের ছায়াতলে প্রবেশ করে। বস্তুতঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে বিশ্বাসী একজন দাসী মূর্তিপূজারী একজন স্বাধীনা মেয়ের চেয়েও অনেক উত্তম। যদিও তার সৌন্দর্য ও সম্পদ তোমাদেরকে অভিভ‚ত করে। তেমনিভাবে তোমরা মুসলিম মেয়েদেরকে মুশরিক পুরুষদের নিকট বিবাহ দিও না। বস্তুতঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে বিশ্বাসী একজন গোলাম একজন মুশরিক স্বাধীন পুরুষের চেয়েও অনেক উত্তম। যদিও সে তোমাদেরকে কোনভাবে অভিভূত করে। মূলতঃ এ জাতীয় মুশরিক পুরুষ ও মহিলারা নিজেদের কথা ও কাজের মাধ্যমে তোমাদেরকে এমন কিছুর দিকে ডাকে যা তোমাদেরকে জাহান্নামের দিকে পৌঁছিয়ে দিবে। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর ইচ্ছা ও অনুগ্রহে এমন কিছু নেক আমলের দিকে ডাকেন যা তোমাদের জন্য জান্নাতে প্রবেশ ও গুনাহ থেকে মুক্তির কারণ হবে। তিনি মানুষের জন্য তাঁর আয়াতগুলো সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন যেন তারা তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে তার উপর আমল করতে পারে।
২২২. হে নবী! আপনার সাথীরা আপনাকে ঋতু¯্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে। “ঋতু¯্রাব বলতে এমন স্বাভাবিক রক্ত¯্রাবকে বুঝানো হয় যা মেয়েদের জরায়ু থেকে নির্দিষ্ট সময়ে বের হয়”। আপনি তাদের উত্তরে বলুন: ঋতু¯্রাব মূলতঃ একটি কদর্য বিষয়। তাই তোমরা এ সময় স্ত্রী সহবাস থেকে দূরে থাকো। তাদের সাথে সহবাস করো না যতক্ষণনা ¯্রাব বন্ধ এবং ঋতু¯্রাবী মহিলা গোসল করে পবিত্র হয়। যখন ¯্রাব বন্ধ হয়ে যাবে এবং ঋতু¯্রাবী মহিলা গোসল করে পবিত্র হবে তখন তোমরা হালাল পন্থায় তথা সামনের পথ দিয়ে তাদের সাথে সহবাস করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা গুনাহ থেকে বেশি বেশি তাওবাকারী এবং ভালোভাবে অপবিত্রতা থেকে প্রবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে পছন্দ করেন।
২২৩. তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের শস্যক্ষেত্র তথা সন্তান প্রসবকারিণী। ক্ষেতে যেমন ফল-ফলাদি হয় তেমনিভাবে তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্য সন্তান জন্ম দেয়। তাই তোমরা নিজেদের শস্যক্ষেতে সামনের পথ দিয়ে আসতে পারো। তা যে দিক থেকেই হোক না কেন এবং যেভাবেই হোক না কেন। তোমরা নেক কাজের মাধ্যমে নিজেদের অগ্রিম পুঁজির ব্যবস্থা করো। আর সেটা এও হতে পারে যে, তোমরা সাওয়াবের নিয়তে এবং নেক সন্তানের আশায় স্ত্রী সহবাস করবে। তোমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মানার মাধ্যমে তাঁকেই ভয় করো। আর তা স্ত্রীদের ক্ষেত্রেও হতে পারে। উপরন্তু তোমরা এ কথা নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো যে, কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে অবশ্যই আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ দিতে হবে। তাঁর সামনে দাঁড়াতে হবে। তখন তিনি তোমাদেরকে তোমাদের আমলের প্রতিদান দিবেন। হে নবী! আপনি মু’মিনদেরকে এ ব্যাপারে সুসংবাদ দিন যে, তারা নিজেদের প্রভুর সাক্ষাতে সে দিন স্থায়ী নিয়ামত ও তাঁর মর্যাদাপূর্ণ চেহারা দর্শনে আনন্দিত হবে।
২২৪. তোমরা আল্লাহর নামে কসম খাওয়াকে নেক কাজ, আল্লাহভীরুতা এবং মানুষের মাঝে সংশোধনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক প্রমাণ হিসেবে দাঁড় করাইও না। বরং তোমরা কোন নেক কাজ না করার কসম খেলে সেই নেক কাজটি করবে এবং নিজেদের কসমের কাফফারাটুকু দিয়ে দিবে। আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের সকল কথা শুনছেন এবং তিনি তোমাদের সকল কর্মকাÐ সম্পর্কে জানেন। তাই তিনি অচিরেই তোমাদেরকে সেগুলোর প্রতিদান দিবেন।
২২৫. যে কসমগুলো এমনিতেই তোমাদের মুখে প্রকাশ পায় সেজন্য আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের হিসাব নিবেন না। যেমন: তোমরা বলে থাকো, লা ওয়াল্লাহি (না, আল্লাহর কসম! ব্যাপারটি এমন নয়), বালা ওয়াল্লাহ (হাঁ, আল্লাহর কসম! ব্যাপারটি এমনই)। তাই এ ক্ষেত্রে কোন কাফফারা বা শাস্তি নেই। তবে তোমরা ইচ্ছাকৃতভাবে যে কসমগুলো খাচ্ছো তিনি সেগুলোরই হিসাব নিবেন। আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের গুনাহগুলো ক্ষমাকারী। তিনি ধৈর্যশীল; কাউকে দ্রæত শাস্তি দেন না।
২২৬. যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস না করার কসম খায় তাদেরকে অবশ্যই অনূর্ধ্ব চার মাস অপেক্ষা করতে হবে। যা কসমের শুরু থেকেই হিসাব করা হবে। যা শরীয়তের ভাষায় “ঈলা” নামে পরিচিত। তবে তারা যদি সহবাস না করার কসমের পর চার মাস পূর্ণ হলে অথবা তার আগে নিজেদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করে তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমাশীল। তিনি তাদের অতীত অপরাধ ক্ষমা করে দিবেন। তিনি দয়ালু। তাই তিনি এ কসম থেকে বের হওয়ার জন্য কাফফারার ব্যবস্থা করেছেন।
২২৭. আর যদি তারা কসম থেকে ফিরে না এসে নিজেদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস না করার মাধ্যমে তাদেরকে তালাক দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করে তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাদের তালাক দেয়ার কথাটি শুনেছেন। তিনি তাদের অবস্থা ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানেন। তাই তিনি অচিরেই তাদেরকে এর প্রতিদান দিবেন।
২২৮. তালাকপ্রাপ্তারা তিন ঋতু¯্রাব পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। ইতিমধ্যে তারা কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে না। এমনকি এ সময় তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা তাদের জরায়ুতে যে সন্তান সৃষ্টি করেছেন তা গোপন রাখা বৈধ হবে না। যদি তারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসের দাবিতে সত্যবাদিনী হয়ে থাকে। তবে ইদ্দত চলাকালীন সময়ে তাদের তালাকদাতা স্বামীরা তাদেরকে আবারো ফেরত নেয়ার অধিকার রাখে যদি তারা ফেরত নেয়ার মাধ্যমে তালাকের সমস্যাগুলো দূর করা এবং ভালোবাসার ইচ্ছা পোষণ করে। বস্তুতঃ স্বামীদের উপর স্ত্রীদের সে অধিকার ও দায়িত্ব রয়েছে যা স্বামীদের জন্য তাদের উপর রয়েছে। তবে তা হবে প্রচলিত নিয়মানুযায়ী। তেমনিভাবে কর্তৃত্ব ও তালাকের অধিকারের ক্ষেত্রে মহিলাদের উপর পুরুষদের মর্যাদা রয়েছে। আর আল্লাহ তা‘আলা পরাক্রমশালী; তাঁকে কেউ পরাজিত করতে পারবে না। তেমনিভাবে তিনি তাঁর শরীয়ত ও পরিচালনায় অতি প্রজ্ঞাময়।
২২৯. যে তালাকে স্বামী তার স্ত্রীকে ফেরত নিতে পারে তা হলো দু’ তালাক। তথা একবার তালাক দিবে আবার ফেরত নিবে। আবার তালাক দিবে আবার ফেরত নিবে। এরপর দু’ তালাক শেষে স্বামী তার স্ত্রীকে ভালোভাবে তার অধীনে রাখবে না হয় তাকে তার প্রতি দয়া ও তার অধিকার আদায় করে তৃতীয় তালাক দিবে। হে স্বামীরা! তোমাদের জন্য হালাল হবে না তোমরা নিজেদের স্ত্রীদেরকে যে মোহরানা দিয়েছো তা থেকে কোন কিছু ফেরত নেয়া। তবে স্ত্রী যদি তার স্বামীকে তার চরিত্র ও গঠনের দরুন অপছন্দ করে আর এ অপছন্দের দরুন তাদের উভয় জনই নিজেদের পরস্পর অধিকার আদায় না করার আশঙ্কা করে তাহলে তারা যেন নিজেদের ব্যাপারগুলো এমন ব্যক্তির নিকট উপস্থাপন করে যার সাথে তাদের আত্মীয়তা ইত্যাদির সম্পর্ক রয়েছে। অভিভাবকরাও যদি তাদের মধ্যকার দাম্পত্য অধিকার আদায় না হওয়ার আশঙ্কা করে তাহলে তাদের এ ব্যাপারে কোন অসুবিধে নেই যে, স্ত্রী তার স্বামীকে তালাকের বিনিময়ে কিছু সম্পদ দিয়ে নিজকে তার অধীনতা থেকে বের করে আনবে। এ শরয়ী বিধানগুলো হালাল ও হারামের মাঝে পার্থক্য সৃষ্টিকারী। তাই তোমরা তা অতিক্রম করবে না। যারা হালাল ও হারামের মধ্যকার আল্লাহর দেয়া সীমারেখা অতিক্রম করবে তারা মূলতঃ নিজেদের উপর নিজেরাই যুলুম করবে। কারণ, তারা এর মাধ্যমেই নিজেরা ধ্বংসের দ্বারে উপনীত হবে এবং নিজেদেরকে আল্লাহর ক্রোধ ও তাঁর শাস্তির সম্মুখীন করবে।
২৩০. যদি কোন মহিলার স্বামী তাকে তৃতীয় তালাক দিয়ে দেয় তখন তার স্বামীর জন্য তাকে নতুন করে বিবাহ করা জায়িয হবে না যতক্ষণনা সে স্বেচ্ছায় তথা হালাল করার জন্য নয় এমন মানসে অন্য পুরুষের সাথে বিশুদ্ধভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। উপরন্তু সে পুরুষ তার সাথে সে বিবাহের ভিত্তিতে সহবাস করে। এরপর যদি তার দ্বিতীয় স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দেয় অথবা মারা যায় তখন তার ও তার পূর্ব স্বামীর কোন গুনাহ হবে না যদি তারা নতুন মোহরে নতুনভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। যদি তাদের ধারণা হয় যে, তারা শরীয়তের বাধ্যতামূলক বিধি-বিধান মানতে পারবে। এ শরয়ী বিধানগুলো আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্যই বর্ণনা করছেন যারা তাঁর বিধি-বিধান ও সীমারেখা সম্পর্কে অবগত। কারণ, তারাই তো এর দ্বারা লাভবান হতে পারবে।
২৩১. যদি তোমরা নিজেদের স্ত্রীদেরকে তালাক দেয়ার পর তাদের ইদ্দত শেষ হওয়ার উপক্রম হয় তখন তোমরা ইচ্ছা করলে তাদেরকে ফেরত নিতে পারবে অথবা ফেরত না নিয়ে তাদেরকে সুন্দরভাবে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দিবে যাতে তাদের ইদ্দতটুকু পরিপূর্ণ হয়ে যায়। তবে তোমরা অত্যাচার কিংবা কোন ধরনের ক্ষতি করার জন্য তাদেরকে ফিরিয়ে নিবে না যা একদা জাহিলী যুগে করা হতো। যে ব্যক্তি তাদের ক্ষতি করার জন্য এমনটি করবে সে যেন নিজেই নিজের উপর যুলুম করলো। কারণ, সে এর মাধ্যমে বস্তুতঃ নিজেকে গুনাহ ও শাস্তির সম্মুখীন করেছে। আর তোমরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে ঠাট্টার পাত্র বানিয়ে নিয়ো না। অর্থাৎ তা নিয়ে তামাশাও করবে না এবং তার সাথে হঠকারিতাও দেখাবে না। বরং তোমরা আল্লাহর নিয়ামসমূহের কথা স্মরণ করো। যার মধ্যকার বিশেষ একটি হলো আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের উপর কুর‘আন ও সুন্নাহ নাযিল করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি তোমাদেরকে উৎসাহ দিচ্ছেন ও ভীতি প্রদর্শন করছেন। তোমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মানার মাধ্যমে তাঁকেই ভয় করো। জেনে রেখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সবকিছু জানেন। তাঁর নিকট কোন জিনিস গোপন থাকে না। তাই অচিরেই তিনি তোমাদের আমলের প্রতিদান দিবেন।
২৩২. যখন তোমরা নিজেদের স্ত্রীদেরকে তিনের কম তালাক দিয়ে দিয়েছো এবং ইতিমধ্যে তাদের ইদ্দতও শেষ হয়ে গেছে তখন হে অভিভাবকরা! তোমরা তাদেরকে তাদের ইচ্ছা ও সন্তুষ্টির ভিত্তিতে তাদের পূর্বের স্বামীদের নিকট নতুন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে বাধা দিয়ো না। তিনি যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী তাদেরকে এ বাধা না দেয়ার আদেশটি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। এটি তোমাদের জন্য অধিক কল্যাণজনক এবং তোমাদের ইজ্জত ও আমলকে অপরিচ্ছন্নতা থেকে বেশি পরিচ্ছন্ন করে। আল্লাহ তা‘আলা সকল বস্তুর মূল রহস্য ও পরিণতি সম্পর্কে সম্যকভাবে অবগত। অথচ তোমরা তা জানো না।
২৩৩. সন্তান প্রসবকারিণী মহিলারা তাদের সন্তানদেরকে পুরো দু’ বছর দুধ পান করাবে। এ নির্দিষ্ট সময়সীমা ওদের জন্য যারা দুধ পান করানোর সময়টুকু পুরো কাজে লাগাতে চায়। বাচ্চার জন্মদাতাকে অবশ্যই তালাকপ্রাপ্তা দুধ পানকারিণী মায়েদের খাবার-দাবার ও পোশাকের খরচ চালাতে হবে। তবে তা হবে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী যার সাথে শরীয়তের কোন সংঘর্ষ নেই। আল্লাহ তা‘আলা কাউকে তার সাধ্য ও সক্ষমতার বেশি কোন কিছু চাপিয়ে দেন না। মাতা-পিতা কারো জন্যই সন্তানটিকে অন্যের ক্ষতির মাধ্যম বানানো জায়িয হবে না। বাচ্চার বাপ ও সম্পদ না থাকলে বাচ্চার ওয়ারিশকেই তার পিতার দায়িত্ব আদায় করতে হবে। মাতা-পিতা যদি চায় দু’ বছর পুরো হওয়ার আগেই সন্তানের দুধ খাওয়া বন্ধ করে দিবে তবে তাতে তাদের কোন গুনাহ হবে না। যদি তারা সন্তানের সুবিধার কথা বিবেচনা করে নিজেদের পরামর্শ ও সন্তুষ্টির ভিত্তিতে তা করে। আর যদি তোমরা নিজেদের সন্তানদের জন্য তাদের মায়েদের ছাড়া অন্য কোন দুধ পানকারিণীদের অনুসন্ধান করো তবে তাতেও কোন পাপ নেই যখন তোমরা দুধ পানকারিণীর সাথে চুক্তিকৃত পাওনা তালবাহানা ছাড়া সুন্দরভাবে হস্তান্তর করবে। আর তোমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকেই ভয় করো। উপরন্তু তোমরা এ কথা জেনে রাখো যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের সকল কর্মকাÐই দেখেন । তাঁর নিকট কোন জিনিসই গোপন থাকে না। তাই তিনি অচিরেই তোমাদের আমলের প্রতিদান দিবেন।
২৩৪. যারা মৃত্যুর সময় গর্ভবতী মহিলা বিহীন সাধারণ স্ত্রীদেরকে রেখে গেছে তারা অবশ্যই বাধ্যতামূলকভাবে চার মাস দশ দিন অপেক্ষা করবে এবং সে সময় তারা স্বামীর ঘর থেকে বের হওয়া, সৌন্দর্য গ্রহণ করা ও বিবাহ-শাদি থেকে বিরত থাকবে। যখন এ সময় পার হয়ে যাবে তখন হে অভিভাবকরা! তাদের জন্য সে সময় যা নিষিদ্ধ ছিলো তা তারা করলে তোমাদের কোন অসুবিধে নেই। যদি তা শরীয়ত ও প্রচলিত নিয়মানুসারে সুন্দরভাবে করা হয়। আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের সকল কর্মকাÐ সম্পর্কে ভালোই খবর রাখেন। তোমাদের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কোন কিছুই তাঁর নিকট গোপন নয়। তাই অচিরেই তিনি তোমাদেরকে তার প্রতিদান দিবেন।
২৩৫. নিজেদের বিবাহের ইচ্ছার কথা পরিষ্কারভাবে না বলে বায়েন তালাক ও মৃত্যুর ইদ্দত পালনকারিণী মহিলার প্রতি ইঙ্গিতপূর্ণ বিয়ের প্রস্তাব দিতে তোমাদের কোন অসুবিধে নেই। যেমন: বলবে, তোমার ইদ্দত শেষ হলে আমাকে খবর দিবে। তেমনিভাবে ইদ্দত পূরণ হওয়ার পর কোন ইদ্দত পালনকারিণী মহিলাকে বিবাহ করার ইচ্ছা নিজেদের মনে লুকিয়ে রাখলে তাতেও কোন অসুবিধে নেই। আল্লাহ তা‘আলা জানেন, তাদের ব্যাপারে তোমাদের অতি উৎসাহের দরুন তোমরা অচিরেই তাদেরকে স্মরণ করবে। তাই তিনি তোমাদের জন্য পরিষ্কার না বলে ইঙ্গিত করাকে জায়িয করেছেন। তবে তোমরা ইঙ্গিতপূর্ণ সুন্দর কথাবার্তা ছাড়া তাদের ইদ্দতের সময় তাদের সাথে গোপনে বিবাহের ওয়াদা করো না। এমনকি তোমরা ইদ্দতের সময় বিবাহ বন্ধনও চ‚ড়ান্ত করো না। আর তোমরা জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা জানেন, হালাল ও হারামের ব্যাপারে তোমরা নিজেদের মনের ভেতরে যা লুকিয়ে রেখেছো। তাই তোমরা সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। কখনো তাঁর কোন আদেশ লঙ্ঘন করবে না। আরো তোমরা জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের মধ্যকার সত্যিকার তাওবাকারীর সকল গুনাহ ক্ষমাকারী। তিনি ধৈর্যশীল। তাই তিনি দ্রæত শাস্তি দেন না।
২৩৬. তোমাদের কোন গুনাহ হবে না যদি তোমরা নিজেদের সে স্ত্রীদেরকে বিনা সহবাসে তালাক দাও যাদেরকে তোমরা ইতিমধ্যেই বিবাহ করেছো। অথচ তাদের জন্য কোন নির্দিষ্ট মোহরানা ঠিক করোনি। যখন তোমরা তাদেরকে এমতাবস্থায় তালাক দিবে তখন তাদের জন্য তোমাদের উপর কোন মোহরানা ওয়াজিব হবে না। তবে তাদের অন্তরে কিছুটা হলেও সান্ত¦না পায় এবং তারা কিছুটা উপকৃত হতে পারে এমন কিছু তাদেরকে দেওয়া ওয়াজিব। কিন্তু তা হবে প্রত্যেকের সাধ্যানুযায়ী। চাই সে সম্পদশালী স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ব্যক্তি হোক কিংবা সম্পদহীন কোণঠাসা ব্যক্তি হোক। এ দান মূলতঃ কাজে-কর্মে নিষ্ঠাশীল এমন ব্যক্তির উপরই নিশ্চিতভাবে বর্তায়।
২৩৭. আর যদি তোমরা বিনা সহবাসে এমন স্ত্রীদেরকে তালাক দাও যাদেরকে তোমরা ইতিমধ্যেই বিবাহ করেছো। অথচ তোমরা তাদের জন্য নির্দিষ্ট একটি মোহরানা ঠিক করে ফেলেছো। তখন তোমাদেরকে নির্দিষ্ট মহরের অর্ধ্বেক দিতে হবে। তবে যদি তারা বুদ্ধিমতী ও নেকপন্থী হওয়ার দরুন তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেয় অথবা স্বামীরা তাদেরকে নিজ থেকেই পূর্ণ মোহরানা দিয়ে দেয় তাহলে অনেক ভালো। বস্তুতঃ নিজেদের অধিকারের ব্যাপারে একে অপরকে ক্ষমা করে দেয়া আল্লাহভীতি ও তাঁর আনুগত্যের নিকটবর্তী হওয়াই প্রমাণ করে। আর হে মানুষ! তোমরা একে অপরের প্রতি দয়া করতে এবং অন্যের জন্য নিজেদের অধিকার ছাড়তে ভুলো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের সকল কর্মকাÐ দেখেন। তাই তোমরা বেশি বেশি ভালো কাজ করতে চেষ্টা করো যেন তোমরা অচিরেই আল্লাহর প্রতিদান পেতে পারো।
২৩৮. তোমরা আল্লাহর আদেশ মাফিক পরিপূর্ণভাবে নামায আদায়ের প্রতি যতœবান হও। বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামায তথা আসরের নামাযের প্রতি। আর তোমরা আল্লাহর প্রতি বিনয়ী ও অনুগত হয়ে নামাযে তাঁর জন্য দাঁড়াও।
২৩৯. তোমরা যদি শত্রæ ইত্যাদির ভয় করে তা পরিপূর্ণভাবে আদায় করতে না পারো তাহলে তোমরা পায়ে হেঁটে অথবা উট, ঘোড়া ইত্যাদির উপর সাওয়ার হয়ে কিংবা যেভাবেই পারো তা পড়ে নাও। তবে যখন ভয় কেটে যাবে তখন তোমরা সেভাবেই আল্লাহকে স্মরণ করো যেভাবে করতে তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। পরিপূর্ণ নামাযে তাঁকে স্মরণ করো। তোমরা তাঁকে আরো স্মরণ করো এ জন্য যে, তিনি তোমাদেরকে এমন নূর ও হিদায়েতের শিক্ষা দিয়েছেন যা তোমরা ইতিপূর্বে জানতে না।
২৪০. তোমাদের মধ্য থেকে যারা মৃত্যু মুখে পতিত হয় এবং পশ্চাতে স্ত্রীদেরকে রেখে যায় নিজেদের স্ত্রীদের ব্যাপারে তারা অবশ্যই এ অসিয়ত করে যাবে যে, তাদেরকে যেন এক বছর যাবত খাবার ও বাসস্থান দেয়া হয়। তাদের ওয়ারিশরা যেন ওদেরকে ঘর থেকে বের করে না দেয়। এটিই হবে তাদের বিপদের সামান্যটুকু ক্ষতিপূরণ এবং মৃত ব্যক্তির সাথে সদাচরণ। তবে তারা যদি এক বছর পূর্ণ না করে নিজেরাই ঘর থেকে বের হয়ে যায় তাহলে তাতে তোমাদের কোন ধরনের গুনাহ নেই। উপরন্তু তারাও যদি কোন ধরনের সুগন্ধি ও সৌন্দর্য গ্রহণ করে তাতেও তাদের কোন অসুবিধে নেই। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা অতি পরাক্রমশালী। তাঁকে কেউ পরাজিত করতে পারবে না। উপরন্তু তিনি তাঁর শরীয়ত, তাকদীর ও পরিচালনায় অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়। তবে অধিকাংশ মুফাসসিরীনদের মতে উক্ত বিধানটি সূরা বাকারাহর ২৩৪ নং আয়াত কর্তৃক রহিত হয়ে গেছে। যাতে বলা হয়েছে, “যারা মৃত্যুর সময় গর্ভবতী মহিলা বিহীন সাধারণ স্ত্রীদেরকে রেখে গেছে তারা অবশ্যই বাধ্যতামূলকভাবে চার মাস দশ দিন অপেক্ষা করবে”।
২৪১. আর তালাকপ্রাপ্তাদেরকে কিছু সম্পদ ও পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি দেয়া হবে যাতে তারা কিছুটা হলেও লাভবান হতে পারে। এটি হবে তালাকের দরুন তাদের ভগ্ন হৃদয়ের প্রতি কিছুটা হলেও সান্ত¦না মাত্র। তবে তা স্বামীর অবস্থা ভেদে প্রচলিত নিয়মানুযায়ী কম-বেশি হতে পারে। মূলতঃ এ বিধানটি ওদের নিশ্চিত দায়িত্বের অধীনে পড়ে যারা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে একমাত্র তাঁকেই ভয় করে।
২৪২. পূর্ববর্তী বর্ণনার ন্যায় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য তাঁর বিধান ও সীমারেখা সম্বলিত আয়াতগুলো বর্ণনা করেন। হে মু’মিনরা! আশা করি তোমরা তা বুঝবে ও সে অনুযায়ী আমল করবে। ফলে তোমরা দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ পাবে।
২৪৩. হে নবী! আপনি কি ওদের বিষয়টি চিন্তা করে দেখেছেন? যারা অনেকেই মহামারী ইত্যাদির কারণে মৃত্যুর ভয়ে নিজেদের বাড়ি-ঘর ছেড়েছে। তারা ছিলো বনী ইসরাঈলের একটি গোষ্ঠী। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে বললেন: তোমরা মরে যাও। ফলে তারা মারা গেলো। অতঃপর তিনি আবার তাদেরকে জীবিত করলেন এ কথা জানানোর জন্য যে, সকল ব্যাপার একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই হাতে। নিশ্চয়ই তারা নিজেদের কোন লাভ-ক্ষতির মালিক নয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা মানুষের উপর অত্যন্ত দয়াবান ও দানশীল। তবুও অধিকাংশ মানুষ তাঁর নিয়ামতের কোন কৃতজ্ঞতা আদায় করে না।
২৪৪. হে মু’মিনরা! তোমরা আল্লাহর ধর্মের সহযোগিতা ও তাঁর বাণীকে বিজয়ী করার জন্য তাঁর শত্রæর সাথে যুদ্ধ করো। আর এ কথা জেনে রাখো যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের সকল কথা শুনেন এবং তিনি তোমাদের সকল নিয়ত ও কর্ম সম্পর্কে জানেন। তাই অচিরেই তিনি তোমাদেরকে তার প্রতিদান দিবেন।
২৪৫. তোমাদের মধ্যে কে আছে যে, আল্লাহকে করযে হাসানাহ বা ভালো ঋণ দিতে প্রস্তুত? সে ভালো মনে ও নেক নিয়তে আল্লাহর পথে তার সম্পদ বিলিয়ে দিবে। তাহলে তিনি তা বেশি গুণে ফিরিয়ে দিবেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কৌশল ও ইনসাফের ভিত্তিতে কারো রিযিক ও সুস্থতা ইত্যাদি কমিয়ে দেন। আবার কারো বাড়িয়ে দেন। আখিরাতে তোমাদেরকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। অতঃপর তিনি তোমাদের আমলের প্রতিদান দিবেন।
২৪৬. হে নবী! আপনি কি ওই ব্যাপারটি সম্পর্কে চিন্তা করে দেখেছেন? মূসা (আলাইহিস-সালাম) এর পরে বনী ইসরাঈলদের মধ্যকার নেতৃস্থানীয়দের মাঝে ঘটেছিলো। তারা তাদের নবীকে বললো: আপনি আমাদের জন্য একজন রাষ্ট্রপতি ঠিক করুন যার সাথে আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবো। তখন তাদের নবী তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন: আমার তো মনে হয়, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করে দিলে তোমরা তাঁর পথে যুদ্ধ করবে না। তখন তারা নবীর ধারণাকে অস্বীকার করে বললো: কেন আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবো না অথচ যুদ্ধ করার পরিস্থিতি ইতিমধ্যে আমাদের জন্য তৈরি হয়ে গেছে। কারণ, আমাদের শত্রæরা আমাদেরকে নিজেদের এলাকা থেকে বের করে দিয়েছে। উপরন্তু তারা আমাদের সন্তানদেরকে বন্দী করেছে। তাই আমরা নিজেদের মাতৃভ‚মি ফিরিয়ে নেয়া এবং আমাদের বন্দীদেরকে মুক্ত করার জন্য তাদের সাথে যুদ্ধ করবো। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা যখন তাদের উপর যুদ্ধ ফরয করে দিলেন তখন তারা মুখ ফিরিয়ে নিলো। তাদের মধ্যকার সামান্য লোক ছাড়া তাদের অনেকেই তাদের কৃত ওয়াদা পূরণ করেনি। তবে আল্লাহর আদেশ থেকে যারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং তাঁর সাথে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করেছে এ রকম যালিমদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা ভালোই জানেন। তাই অচিরেই তিনি এদেরকে এর প্রতিদান দিবেন।
২৪৭. তাদের নবী তখন তাদেরকে বলেছিলেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তালূতকে তোমাদের রাষ্ট্রপতি বানিয়েছেন যেন তোমরা তাঁর ঝাÐাতলে যুদ্ধ করতে পারো। তখন তাদের নেতৃস্থানীয়রা এ মনোনয়নকে অপছন্দ করে তাঁর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে বললো: সে কীভাবে আমাদের রাষ্ট্রপতি হয়ে গেলো অথচ আমরা তাঁর চেয়েও রাষ্ট্রপতি হওয়ার বেশি উপযুক্ত। কারণ, তিনি রাষ্ট্রপতিদের সন্তানাদির কেউ নন। এমনকি তাঁকে এতো বেশি সম্পদও দেয়া হয়নি যা কর্তৃক তিনি রাষ্ট্র পরিচালনায় বিশেষ সহযোগিতা পাবেন। তখন তাদের নবী তাদেরকে বললেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে তোমাদের উপর বাদশা হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন। অধিকন্তু তিনি তাঁকে প্রচুর জ্ঞান ও শারীরিক শক্তি দিয়েছেন। আর আল্লাহ তা‘আলা যাঁকে চান তাঁকেই তাঁর রহমত ও হিকমতের ভিত্তিতে রাষ্ট্র ক্ষমতা দিয়ে থাকেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা অতি দয়ালু তিনি যাকে চান তাকেই দয়া করেন। তিনি জানেন তাঁর সৃষ্টির মধ্যকার কে তাঁর অনুগ্রহের উপযুক্ত।
২৪৮. তাদের নবী তাদেরকে আরো বললেন: নিশ্চয়ই তাঁকে তোমাদের উপর রাষ্ট্রপতিরূপে মনোনয়ন দিয়েছেন এবং এর প্রমাণ হলো আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তাবূত নামক সিন্দুকটি ফিরিয়ে দিবেন। যা ফিরিশতারা বহন করে আনবে। তারা সিন্দুকটিকে খুবই সম্মান করতো। কিন্তু এক সময় তা তাদের কাছ থেকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিলো। তার মাঝে এক ধরনের প্রশান্তি লুক্কায়িত ছিলো। এমনকি তাতে মূসা ও হারূন (আলাইহিমাস-সালাম) এর রেখে যাওয়া কিছু জিনিসও ছিলো। যেমন: লাঠি ও তাওরাতের কিছু লেখা ফলক। নিশ্চয়ই তাতে রয়েছে তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট নিদর্শন যদি তোমরা সত্যিকারার্থে মু’মিন হয়ে থাকো।
২৪৯. যখন তালূত নিজ সৈন্য-সামন্ত নিয়ে এলাকা থেকে বের হলেন তখন তিনি তাদেরকে বললেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে একটি নদীর মাধ্যমে পরীক্ষা করবেন। সুতরাং যে ব্যক্তি সেখান থেকে পানি পান করবে সে আমার আদর্শপন্থী নয়। উপরন্তু সে যেন আমার সাথে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ না করে। আর যে ব্যক্তি সেখান থেকে পানি পান করবে না সে আমার আদর্শপন্থী এবং সে যেন আমার সাথে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। তবে যে ব্যক্তি বাধ্য হয়ে সেখান থেকে এক অঞ্জলি সমপরিমাণ পানি পান করবে তার কথা ভিন্ন। কিন্তু সবাই পানি পান করেছে। তবে কিছু সংখ্যক সৈন্য তা করেনি। তারা অত্যন্ত পিপাসা সত্তে¡ও পানি পান না করে ধৈর্য ধরেছে। অতঃপর যখন তালূত ও তাঁর মু’মিন সঙ্গীরা নদী অতিক্রম করে তখন কিছু সংখ্যক সৈন্য বলে উঠলো: জালূত ও তার সেনা বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার ক্ষমতা আজ আমাদের কারো নেই। তখন যারা কিয়ামতের দিবসে আল্লাহর সাক্ষাতে বিশ্বাসী তারা বললো: অনেকবারই দেখা গেছে যে, মু’মিনদের একটি ক্ষুদ্রতম দল আল্লাহর ইচ্ছায় ও তাঁর সহযোগিতায় কাফির সম্প্রদায়ের বৃহত্তম দলের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছে। সুতরাং কেবল ঈমানই জয়ের ক্ষেত্রে ধর্তব্য; বেশি সংখ্যক সৈন্য নয়। আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ধৈর্যশীল বান্দাদের সাথেই রয়েছেন। তিনি তাদেরকে সাহায্য ও জয়যুক্ত করবেন।
২৫০. যখন তারা জালূত ও তার সেনা বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার জন্য বের হলো তখন তারা আল্লাহ অভিমুখী হয়ে তাঁর নিকট দু‘আ করতে গিয়ে বললো: হে আমাদের প্রভু! আপনি আমাদের হৃদয়গুলোর উপর ধৈর্য ঢেলে দিন এবং আমাদের পাগুলো দৃঢ় করুন। যাতে আমরা শত্রæর সামনে থেকে পালিয়ে না যাই এবং পরাজিত না হই। আর আপনি আমাদেরকে আপনার নিজ শক্তি ও ক্ষমতা দিয়ে কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সাহায্য করুন।
২৫১. অতঃপর তারা আল্লাহর ইচ্ছায় শত্রæ পক্ষকে পরাজিত করে এবং দাঊদ তাদের সেনাপতি জালূতকে হত্যা করে। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমতা ও নবুওয়াত দিয়েছেন এবং তাকে তাঁর ইচ্ছা মতো হরেক রকমের জ্ঞান দিয়েছেন। তিনি তাঁর মধ্যে দুনিয়া ও আখিরাতে উপকারে আসে এমন সব কিছুই একত্রিত করেছেন। যদি আল্লাহ তা‘আলার এ নিয়ম না থাকতো যে, তিনি একদলকে দিয়ে অন্য দলের ফাসাদ প্রতিহত করে থাকেন তাহলে ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের দাপটে পুরো পৃথিবীই নষ্ট হয়ে যেতো। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সকল সৃষ্টির প্রতিই দয়াশীল।
২৫২. হে নবী! এগুলো হলো আল্লাহ তা‘আলার পরিষ্কার ও সুস্পষ্ট আয়াত যা আমি আপনাকে তিলাওয়াত করে শুনাচ্ছি। যাতে সত্য সংবাদ ও ন্যায়পূর্ণ বিধান রয়েছে। আর আপনি নিশ্চয়ই সর্ব জগতের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসূলদেরই একজন।
২৫৩. এ রাসূলগণ যাদের কথা আমি ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি তাদের কিছু সংখ্যককে আমি অন্যের উপর ওহী, অনুসারী ও মর্যাদার ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। তাদের কারো সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন যেমন: মূসা। আর কারো মর্যাদা সুউচ্চ করেছেন যেমন: মুহাম্মাদ। তাঁকে আল্লাহ তা‘আলা সকল মানুষের নিকট পাঠিয়েছেন এবং তাঁর মাধ্যমেই নবুওয়াত সমাপ্তি লাভ করে। উপরন্তু তাঁর উম্মতকে সকল উম্মতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে। আর আমি ঈসা বিন মারইয়ামকে সুস্পষ্ট মু’জিযাহ দিয়েছি যা তাঁর নবুওয়াত প্রমাণ করে। যেমন: মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করা এবং জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে সুস্থ করে দেয়া। তেমনিভাবে আমি তাঁকে জিব্রীলের মাধ্যমে শক্তিশালী করেছি যাতে তিনি আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব আদায় করতে পারেন। আল্লাহ চাইলে রাসূলদের পরের লোকেরা হত্যাকাÐ চালাতে পারতো না। কারণ, তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ এসেছে। তারা দ্ব›দ্ব করে পরস্পর বিভক্ত হয়ে গেছে। তাদের কেউ আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে। আবার কেউ তাঁর সাথে কুফরি করেছে। মূলতঃ আল্লাহ চাইলে তারা কখনো হত্যাকাÐ চালাতে পারতো না। তবে আল্লাহ তা‘আলা যা চান তাই করেন। তিনি যাকে চান তাকে তাঁর দয়া ও করুণায় ঈমানের দিশা দেন। আর যাকে চান তাকে তাঁর ইনসাফ ও হিকমতের ভিত্তিতে পথভ্রষ্ট করেন।
২৫৪. হে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুসারী ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে হরেক রকমের হালাল রিযিক দিয়েছি কিয়ামত আসার আগেই তা থেকে আল্লাহর পথে কিছুটা ব্যয় করো। সে দিন কোন ক্রয়-বিক্রয় থাকবে না। যার মাধ্যমে মানুষ কিছু লাভজনক বস্তু সংগ্রহ করতে পারে। না কোন বন্ধুত্ব থাকবে যা বিপদের সময় কাজে আসবে। না সে দিন কোন সুপারিশ চলবে যদ্বারা কেউ কোন প্রকার লাভবান হতে পারবে কিংবা ক্ষতি থেকে বাঁচতে পারবে। তবে আল্লাহ যার ব্যাপারে চাইবেন ও তার উপর সন্তুষ্ট থাকবেন শুধু তারই কাজে আসতে পারে। বস্তুতঃ কাফিররা তাদের কুফরির দরুন সত্যিই যালিম।
২৫৫. তিনি আল্লাহ। তিনি ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই। তিনি চিরঞ্জীব তথা তিনি চির অবিনশ্বর। তাঁর কোন মৃত্যু নেই এবং তাঁর মাঝে কোন ত্রæটিও নেই। তিনি শাশ্বত সত্তা, চিরস্থায়ী সংরক্ষক। তিনি একাই বিদ্যমান। সৃষ্টির প্রতি তাঁর কোন প্রয়োজন নেই। বরং সকল সৃষ্টি তাঁকে দিয়েই বিদ্যমান। তারা সর্বাবস্থায় তাঁর মুখাপেক্ষী। তাঁকে কোন তন্দ্রা ও নিদ্রা পায় না। কারণ, তিনি পরিপূর্ণ জীবনের মালিক, চিরঞ্জীব ও চির সংরক্ষক। আকাশ ও জমিনে যা কিছু রয়েছে তা সবই তাঁর একক মালিকানাধীন। তাঁর অনুমতি ও সন্তুষ্টি ব্যতিরেকে কেউ কারো জন্য তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে না। তিনি তাঁর সৃষ্টির অতীতে সংঘটিত সকল ব্যাপারের পূর্বাপর জানেন। এমনকি যা এখনো ঘটেনি তবে ভবিষ্যতে ঘটবে তাও জানেন। তাঁর জ্ঞানের কিয়দংশও তারা আয়ত্ব করতে পারে না। তবে আল্লাহ তা‘আলা যদি তাদেরকে কোন কিছু জানাতে চান সেটা ভিন্ন কথা। তাঁর কুরসী তথা প্রভুর পায়ের জায়গা এতো বড় ও প্রশস্ত যা একাই আকাশ ও জমিনকে বেষ্টন করে আছে। এতদুভয়ের সংরক্ষণ করা এমন দুষ্কর বা কষ্টকর নয় যে, তাঁকে ক্লান্ত করে দিতে পারে। বস্তুতঃ তিনি তাঁর সত্তা, পরিচালনা ও অপরাজেয় শক্তিতে সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী। তাঁর ক্ষমতা ও প্রতিপত্তিতে তিনি সুমহান।
২৫৬. ইসলাম ধর্মে প্রবেশের ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নেই। কারণ, এটি হলো একটি সত্য ও সুস্পষ্ট ধর্ম। তাই তা কবুল করতে কাউকে বাধ্য করার কোন প্রয়োজন নেই। সত্যভ্রষ্টতা থেকে এটা একেবারেই ভিন্ন। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া যার ইবাদাত করা হয় তার সাথে কুফরি করে ও তা থেকে সম্পর্কচ্ছিন্ন করে এবং এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে তাহলে সে কিয়ামতের দিন মুক্তির জন্য এমন এক শক্তিশালী ধর্মীয় অবলম্বনকে আঁকড়ে ধরলো যা কখানো ছিঁড়ে যাবে না। আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের সকল কথা শুনছেন এবং তাদের সকল কর্মকাÐ সম্পর্কে অবগত আছেন। তাই তিনি অচিরেই তাদেরকে এর প্রতিদান দিবেন।
২৫৭. নিশ্চয়ই মু’মিনরা আল্লাহরই বন্ধু। তাই তিনি তাদেরকে ভালো কাজের তাওফীক দেন এবং সহযোগিতা করেন। উপরন্তু তিনি তাদেরকে কুফরি ও মূর্খতার অন্ধকার থেকে ঈমান ও জ্ঞানের আলোর দিকে বের করে আনেন। আর কাফিরদের বন্ধু হলো মূর্তি ও শরীকরা। যারা তাদের সামনে কুফরিকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে তাদেরকে ঈমান ও জ্ঞানের আলো থেকে কুফরি ও মূর্খতার অন্ধকারের দিকে বের করে আনে। এরা মূলতঃ জাহান্নামী। তারা চিরকাল সেথায় অবস্থান করবে। যখন আল্লাহ তা‘আলা উভয় পক্ষের কথা এখানে উল্লেখ করেছেন তখন তিনি উভয় পক্ষের দু’টি দৃষ্টান্তও উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেন:
২৫৮. হে নবী! আপনি কি সেই গাদ্দারের দুঃসাহসিকতার চেয়ে আরো আশ্চর্য কোন কিছু দেখেছেন যে ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) এর সাথে আল্লাহর রাজত্ব ও কর্মকাÐ বিষয়ে ঝগড়া করেছে? আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমতা দিয়েছেন। আর সে গাদ্দারি করতে শুরু করলো। ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) তাঁর প্রভুর বৈশিষ্ট্যাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন: আমার প্রভু সকল সৃষ্টির জীবন ও মৃত্যু দিয়ে থাকেন। তখন গাদ্দারটি হঠকারিতা দেখিয়ে বললো: আমিও তো জীবন-মৃত্যু দিতে পারি। আমি যাকে চাইবো হত্যা করবো। আর যাকে চাইবো ক্ষমা করবো। তখন ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) আরো একটি বড় প্রমাণ দাঁড় করিয়ে বললেন: আমার প্রভু যাঁর ইবাদাত আমি করছি তিনি তো সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে উদিত করেন। তোমার সাধ্য থাকলে তুমি তা পশ্চিম দিক থেকে উদিত করে দেখাও। গাদ্দারটি তখন অস্থির হয়ে পড়লো এবং তার কথা একেবারেই বন্ধ হয়ে গেলো। উপরন্তু সে শক্তিশালী প্রমাণের সামনে পরাজিত হলো। আর আল্লাহ তা‘আলা যালিমদেরকে তাদের যুলুম ও হঠকারিতার দরুন তাঁর সঠিক পথে চলার তাওফীক দেন না।
২৫৯. তেমনিভাবে আপনি কি তার মতোও কাউকে দেখেছেন যে এমন একটি জনপদের পাশ দিয়ে রওয়ানা করলো যার ছাদগুলো ভেঙ্গে পড়েছে এবং তার দেয়ালগুলোও ধ্বংস হয়ে গিয়েছে? উপরন্তু তার অধিবাসীরাও দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। ফলে তা এক ভীতিকর শূন্য ভুমিতে পরিণত হয়েছে। লোকটি তখন আশ্চর্য হয়ে বললো: কীভাবে আল্লাহ তা‘আলা এ জনপদের লোকদেরকে মৃত্যুর পর আবারো জীবিত করবেন?! তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে এক শত বছরের জন্য মৃত্যু দিলেন। এরপর তিনি তাকে আবারো জীবিত করে জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কতো বছর মৃত অবস্থায় ছিলে? তার উত্তরে সে বললো: আমি এমতাবস্থায় একদিন বা অর্ধ দিন ছিলাম। আল্লাহ তা‘আলা তাকে বললেন: বরং তুমি পূর্ণ এক শত বছর এমতাবস্থায় ছিলে। তুমি নিজের সাথে থাকা খাদ্য ও পানীয়ের দিকে তাকাও। সেগুলো এখনো অপরিবর্তিতভাবে নিজ অবস্থায়ই বিদ্যমান। অথচ খাদ্য ও পানীয় সবচেয়ে দ্রæত নষ্ট হয়ে যায়। তেমনিভাবে তুমি নিজের মরা গাধার দিকে তাকাও। আমি এটি এ জন্য করেছি যে, তা যেন মানুষের জন্য সুস্পষ্ট আলামত হিসেবে বিদ্যমান থাকে। যা তাদের পুনরুত্থানের ব্যাপারে আল্লাহর ক্ষমতার ব্যাপারটি প্রমাণ করবে। তুমি তোমার নিজের গাধার হাড়গুলোর দিকে তাকাও যা বিক্ষিপ্ত ও একটি থেকে অপরটি অনেক দূরে সরে গেছে। কীভাবে আমি সেগুলোকে যথাস্থানে উঠিয়ে একটিকে অপরটির সাথে জোড়া লাগিয়ে সেগুলোর উপর গোস্ত জড়িয়ে তাতে পুনর্জীবন দেবো। যখন সে এগুলো দেখলো তখন তার নিকট মূল ব্যাপারটি সুস্পষ্ট হয়ে গেলো। আর সে আল্লাহর ক্ষমতার কথা স্বীকার করে বললো: আমি জানি নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
২৬০. হে নবী! আপনি স্মরণ করুন সে সময়ের কথা যখন ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) বললেন: হে আমার প্রভু! আপনি কীভাবে মৃতকে জীবিত করেন সেটা আমাকে দেখান! আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে বললেন: তুমি কি এ ব্যাপারটিকে বিশ্বাস করো না? ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) বললেন: হাঁ, অবশ্যই করি। তবে আমি নিজ অন্তরের আরো প্রশান্তির জন্য চাচ্ছি। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে আদেশ করে বললেন: তুমি চারটি পাখীকে নিজের কাছে নিয়ে সেগুলোকে টুকরো টুকরো করে ফেলো। এরপর সেগুলোর অংশ বিশেষকে তোমার আশপাশের সবগুলো পাহাড়ের উপর রাখো। অতঃপর সেগুলোকে ডাকলে দেখবে সেগুলো জীবিত হয়ে খুব দ্রæত তোমার দিকে ধেয়ে আসছে। হে ইব্রাহীম! তুমি জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা নিজ ক্ষমতায় পরাক্রমশালী। তিনি তাঁর আদেশ, শরীয়ত ও সৃষ্টির ব্যাপারে অত্যন্ত প্রজ্ঞাবান।
২৬১. যারা আল্লাহর পথে নিজেদের সম্পদগুলো ব্যয় করছে এমন মু’মিনদের পুণ্যের দৃষ্টান্ত হলো যেন একটি দানা। যা একজন চাষী উর্বর ভ‚মিতে রাখলে তা সাতটি শীষ উৎপন্ন করে। প্রত্যেক শীষে একশতটি দানা রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের যাকে চান আরো বেশি করে পুণ্য দেন। তিনি তাদেরকে বিনা হিসাবে সাওয়াব দিয়ে থাকেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা অতি দানশীল ও দয়ালু। তিনি জানেন কে বেশি পাওয়ার উপযুক্ত।
২৬২. যারা আল্লাহর আনুগত্য ও সন্তুষ্টির কাজে নিজেদের সম্পদসমূহ ব্যয় করে এবং তার সাওয়াবকে বাতিল করতে পারে এমন কথা ও কাজ করে না। যেমন: খরচ করে প্রতিদান চায় না এবং দান গ্রহণকারীকে কষ্টও দেয় না তাদের জন্য রয়েছে তাদের প্রভুর নিকট সুনিশ্চিত প্রতিদান। তারা ভবিষ্যতের ব্যাপারে আতঙ্কিত হবে না এবং তারা গত জীবনের উপর চিন্তিতও হবে না। কারণ, তাদের উপর আল্লাহর অসীম অনুগ্রহ রয়েছে।
২৬৩. সুন্দর কথা বলে কোন মু’মিনের অন্তরকে খুশি করা এবং অসদাচরণকারীকে ক্ষমা করা অনেক উত্তম এমন সদকার চেয়ে যার পেছনে আসে কষ্ট ও তিক্ততা। যেমন: সদকা গ্রহণকারীকে খোঁটা দিয়ে কষ্ট দেয়া। আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি অমুখাপেক্ষী। তিনি অত্যন্ত ধৈর্যশীল। দ্রæত কাউকে শাস্তি দেন না।
২৬৪. হে আল্লাহতে বিশ্বাসী ও তাঁর রাসূলের অনুসারী ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের সদকার সাওয়াবকে সদকা গ্রহণকারীকে খোঁটা ও কষ্ট দিয়ে ওই ব্যক্তির ন্যায় নষ্ট করে দিয়ো না যে তার সম্পদগুলো লোক দেখানো এবং তাদের প্রশংসা পাওয়ার জন্য ব্যয় করে। উপরন্তু সে কাফির। যে আল্লাহ ও পরকাল এবং সেখানকার সাওয়াব ও শাস্তিতে বিশ্বাসী নয়। এর দৃষ্টান্ত হলো এমন মসৃণ পাথর যার উপর মাটির আস্তর রয়েছে। এর উপর যখন ভারী বৃষ্টি হলো তখন তা ওই আস্তর ধুয়ে ফেলে পাথরটিকে আবারো পরিষ্কার ও মসৃণ করে তোললো। যার উপর আর কোন কিছুই রইলো না। তেমনিভাবে লোক দেখানো আমল ও সদকার সাওয়াবগুলো নষ্ট হয়ে যায়। আল্লাহর নিকট তার কিছুই জমা থাকে না এবং অবশেষে তারা কিছুই পাবে না। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদেরকে এমন কাজের দিশা দেন না যা তাঁকে সন্তুষ্ট করে এবং তাদেরকে তাদের আমল ও সদকায় লাভবান করে।
২৬৫. যারা আল্লাহর ওয়াদায় বিশ্বাসী হয়ে কোন ধরনের চাপাচাপি ছাড়া স্বেচ্ছায় আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিজেদের সম্পদগুলো ব্যয় করে তাদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে এমন এক বাগান যা উর্বর উঁচু জায়গায় অবস্থিত এবং যার উপর ভারী বর্ষণ হলে তা দ্বিগুণ ফল উৎপন্ন করে। আর যদি ভারী বর্ষণ না হয়ে তার উপর হালকা বর্ষণ হয় তাহলেও তা তার জন্য যথেষ্ট। কারণ, জমিনটি তো উর্বর। এভাবেই আল্লাহ তা‘আলা নিষ্ঠাবানদের সদকা গ্রহণ করে তার সাওয়াব দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেন। যদিও তা যৎসামান্যই হোক না কেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের সকল কর্মকাÐ দেখছেন। তাই তাঁর নিকট নিষ্ঠাবান ও লোক দেখানো মানুষের অবস্থা গোপন নয়। তিনি অচিরেই প্রত্যেককে তাঁর উপযুক্ত প্রতিদান দিবেন।
২৬৬. তোমাদের কেউ কি চায় তার একটি বাগান হবে যাতে থাকবে খেজুর ও আঙ্গুর গাছ। যার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হবে প্রচুর সুমিষ্ট পানি। আরো থাকবে সব রকমের মজাদার ফলফলাদি। আর ইতিমধ্যে সে বুড়োও হয়ে গেলো। এমন বুড়ো যে সে আর এখন উপার্জনক্ষম নয়। তদুপরি তার রয়েছে ছোট ছোট কয়েকটি সন্তান। যারা দুর্বল ও কর্মক্ষম নয়। কিন্তু হঠাৎ করে তার সেই বাগানের উপর দিয়ে বয়ে গেলো কঠিন উত্তপ্ত দমকা বায়ু। যার ফলে পুরো বাগানটিই পুড়ে গেলো। অথচ এ সময় বাগানটির তার খুবই প্রয়োজন ছিলো। কারণ, সে নিজে বৃদ্ধ এবং তার সন্তানরাও কর্মক্ষম নয়। সুতরাং যে ব্যক্তি লোক দেখানো সদকা করে সে এ লোটির মতোই। সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে কোন সাওয়াব ছাড়াই। এমন সময়ে যখন তার সাওয়াবের খুবই প্রয়োজন হবে। এ বর্ণনার ন্যায় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে যাই লাভজনক তা সবই বর্ণনা করে থাকেন। যাতে তোমরা তা নিয়ে একটু চিন্তা-ভাবনা করতে পারো।
২৬৭. হে আল্লাহতে বিশ্বাসী ও তাঁর রাসূলের অনুসারী ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের হালাল ও পবিত্র কামাই এবং আমি জমিনের উদ্ভিদ থেকে যা উৎপন্ন করি তা থেকে তোমরা উৎকৃষ্ট অংশ আল্লাহর পথে খরচ করো। তোমরা কখনো সেগুলোর মধ্যকার খারাপটি সদকা হিসেবে দিয়ো না। তোমাদেরকে যদি এমন কিছু দেয়া হয় তাহলে তোমরা হয়তো এমন অপছন্দীয় বস্তু কেবল বাধ্য হয়েই চোখ বন্ধ করে নিবে। তাই তোমরা কেন আল্লাহর জন্য এমন কিছু পছন্দ করো যা নিজেদের জন্য পছন্দ করো না?! তোমরা জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের এ সদকার প্রতি অবশ্যই অমুখাপেক্ষী। তিনি নিজ ব্যক্তিত্ব ও কাজে সত্যিই প্রসংশিত।
২৬৮. শয়তান তোমাদেরকে দরিদ্রতার ভয় দেখায়, কার্পণ্যের প্রতি উৎসাহি করে এবং তোমাদেরকে গুনাহ ও পাপে লিপ্ত হওয়ার জন্য আহŸান করে। আর আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের সাথে ওয়াদা করছেন মহৎ ক্ষমা ও প্রশস্ত রিযিকের। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা খুবই দয়াবান এবং তিনি তাঁর বান্দাদের অবস্থা সম্পর্কে ভালোই জানেন।
২৬৯. তিনি যাকে চান তাকে সত্য কথা ও সঠিক কাজের তাওফীক দান করেন। যাকে এমন কিছু দেয়া হয়েছে তাকে নিশ্চয়ই অনেক কল্যাণই দেয়া হয়েছে। আল্লাহর আয়াতসমূহ থেকে কেবল তারাই উপদেশ গ্রহণ করে যাদের মূলতঃ পরিপূর্ণ বিবেক-বুদ্ধি রয়েছে। যারা সর্বদা আল্লাহর নূরে আলোকিত এবং তাঁর হিদায়েতে হিদায়েতপ্রাপ্ত।
২৭০. তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কম-বেশি যাই সদকা করো অথবা কোন বাধ্যবাধকতা ছাড়াই আল্লাহর যে আনুগত্য তোমরা নিজেরা নিজেদের উপর বাধ্যতামূলক করে নাও আল্লাহ তা‘আলা তা সবই জানেন। তাই তাঁর নিকট কোন কিছু বিনষ্ট হবে না বরং তিনি অচিরেই এর মহৎ প্রতিদান দিবেন। বস্তুতঃ যারা জালিম এবং যারা নিজেদের কর্তব্যসমূহ আদায় করে না উপরন্তু আল্লাহর দেয়া সীমারেখাকে অতিক্রম করে তাদের এমন কোন সাহায্যকারী থাকবে না যারা তাদেরকে কিয়ামতের শাস্তি থেকে রক্ষা করবে।
২৭১. তোমরা নিজেদের সম্পদের যে সদকাটুকু প্রকাশ্যে আদায় করো তা উত্তম। আর যদি তোমরা ফকিরদেরকে তা গোপনে দিতে পারো তাহলে তা প্রকাশ্যের চেয়ে আরো উত্তম। কারণ, সেটি ইখলাস ও নিষ্ঠার নিকটবর্তী। সত্যিকারার্থে নিষ্ঠাবানদের সদকায় রয়েছে তাদের গুনাহগুলোকে লুকিয়ে রাখা ও তা ক্ষমা করে দেয়ার ব্যবস্থা। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের সকল কর্মকাÐ সম্পর্কে সার্বিক অবগত। তাঁর নিকট তোমাদের কোন অবস্থাই গোপন নয়।
২৭২. হে নবী! তাদেরকে সত্য গ্রহণ ও তা মেনে নিতে বাধ্য করা বিশেষ করে তাদেরকে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত করা আপনার কোন দায়িত্ব নয়। বরং আপনার দায়িত্ব হলো শুধু তাদেরকে সত্যের দিশা দেয়া এবং তা তাদের সামনে বর্ণনা করা মাত্র। কারণ, সত্য গ্রহণের তাওফীক এবং হিদায়েতের উপর পরিচালনার ক্ষমতা কেবলমাত্র আল্লাহরই হাতে। তিনি যাকে চান তাকে হিদায়েত দেন। তোমরা যে সম্পদই ব্যয় করবে তা মূলতঃ তোমাদেরই উপকারে আসবে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি অমুখাপেক্ষী। তবে তোমাদের ব্যয় যেন এক আল্লাহর জন্যই হয়। কারণ, সত্যিকারের মু’মিনরা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই ব্যয় করে। তোমরা কম-বেশি যে সম্পদটুকু ব্যয় করবে তার প্রতিফল তোমাদেরকে পরিপূর্ণভাবেই দেয়া হবে। তাতে কোন ধরনের কমতি করা হবে না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা কারো উপর যুলুম করেন না।
২৭৩. যারা ফকির এবং যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করার দরুন রিযিক অনুসন্ধানের জন্য সফর করতে পারে না তোমরা সে সম্পদগুলো তাদেরকে দিবে। তাদের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে যে জানে না সে মনে করে এরা সত্যিই ধনী। কারণ, তারা মানুষের কাছে হাত পাতে না। যে তাদের সম্পর্কে কিছুটা জানে সে তাদের শরীর ও পোশাক-পরিচ্ছদ দেখলেই বুঝতে পারবে এরা গরিব। তাদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো তারা অন্য ফকিরদের ন্যায় ভিক্ষাবৃত্তি করে না। বস্তুতঃ তোমরা সম্পদ ইত্যাদি যাই ব্যয় করো তা সবই আল্লাহ তা‘আলা জানেন। তাই তিনি অচিরেই এর মহা প্রতিদান দিবেন।
২৭৪. যারা নিজেদের সম্পদগুলো কাউকে দেখানো কিংবা শুনানোর জন্য নয় বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দিনে ও রাতে এবং প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে ব্যয় করে তারা কিয়ামতের দিন নিজেদের প্রভুর নিকট এর পূর্ণ প্রতিদান পাবে। ভবিষ্যত সম্পর্কে তাদের কোন আশঙ্কা থাকবে না এবং গত জীবনের উপরও তাদের কোন আপসোস থাকবে না। তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে কেবল নিয়ামত ও অনুগ্রহই পাবে।
২৭৫. যারা সুদের লেনদেন ও তা গ্রহণ করে তারা কিয়ামতের দিন নিজেদের কবর থেকে এমনভাবে উঠে দাঁড়াবে যেন একজন জিনে ধরা ব্যক্তি। তখন সে নিজ কবর থেকে টালমাটাল অবস্থায় উঠবে যেন তাকে কোন জিন আপন স্পর্শ দ্বারা তাকে পাগল ও জ্ঞানশূন্য করে দিয়েছে। তাই সে একবার দাঁড়ায় আবার পড়ে যায়। অর্থাৎ সুদীকারবারীদের অবস্থাও ঠিক এরূপই। কারণ, তারা সুদ খাওয়াকে হালাল মনে করেছে এবং তারা সুদ ও আল্লাহর হালালকৃত ব্যবসায়িক লাভের মাঝে কোন পার্থক্য করেনি। বরং তারা বললো, ব্যবসায়িক লাভ তো সুদের মতোই। তা সবই হালাল। কারণ, এ দু’য়ের উভয়টিই সম্পদ বাড়িয়ে দেয় এবং তাতে সমৃদ্ধি নিয়ে আসে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের এ তুলনাকে বাতিল ও তাদেরকে মিথ্যুক বললেন। তিনি আরো বললেন যে, তিনি ব্যবসাকে হালাল করেছেন। কারণ, তাতে ব্যাপক ও বিশেষ লাভ রয়েছে। আর তিনি সুদকে হারাম করেছেন। কারণ, তাতে যুলুম ও বিনা বিনিময়ে অন্যের সম্পদ বাতিল পন্থায় খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সুতরাং যার নিকট তার প্রভুর পক্ষ থেকে সুদ সম্পর্কীয় সতর্কবাণী ও নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত উপদেশ এসেছে অতঃপর সে তা থেকে বিরত থেকে আল্লাহর নিকট তাওবা করেছে তার জন্য তার এ নিষেধাজ্ঞার পূর্বেকার সকল সুদই হালাল। তা ভক্ষণ করলে তাতে তার কোন পাপ হবে না। তবে তার ভবিষ্যতের ব্যাপারটি একমাত্র আল্লাহর কাছেই ন্যস্ত। আর যার নিকট আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা এবং তাঁর প্রমাণ আসার পরও সে আবারো সুদ গ্রহণ করবে সে জাহান্নামের উপযুক্ত ও সেখানে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে। এ চিরস্থায়িত্বের মানে হলো সেখানে দীর্ঘকালীন সময় অবস্থান করা। কারণ, নিশ্চিত চিরস্থায়িত্ব কেবল কাফিরদের জন্যই। তাওহীদপন্থীরা কখনো সেখানে চিরস্থায়ী হবে না।
২৭৬. আল্লাহ তা‘আলা সুদমিশ্রিত সম্পদ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ উভয়ভাবেই নষ্ট করে দেন। প্রত্যক্ষ নষ্ট করা মানে তা সমূলে ধ্বংস করে দেয়া আর পরোক্ষভাবে নষ্ট করা মানে তার বরকত উঠিয়ে নেয়া। পক্ষান্তরে তিনি দানের সাওয়াবকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দেন। দশ থেকে শুরু করে সাত শত গুণ, এমনকি ততোধিক বাড়িয়ে দেন। উপরন্তু তিনি দানকারীদের সম্পদে বরকত দেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা কোন হঠকারী কাফিরকেই ভালোবাসেন না। যে কাফির হারমকে হালাল মনে করে এবং লাগাতার গুনাহে লিপ্ত থাকে।
২৭৭. যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে এবং তাঁর রাসূলের অনুসরণ করেছে। উপরন্তু নেক আমল করেছে এবং আল্লাহর শরীয়ত মাফিক পরিপূর্ণভাবে নামায আদায় করেছে ও হকদার মানুষদেরকে সম্পদের যাকাত দিয়েছে তাদের জন্য রয়েছে তাদের প্রভুর নিকট বিশেষ সাওয়াব। এমনকি পরকালীন জীবনের ব্যাপারে তাদের কোন ভয় থাকবে না এবং তারা দুনিয়া ও তার নিয়ামত হাতছাড়া হওয়ার বিষয়ে কোন ধরনের চিন্তিতও হবে না।
২৭৮. হে আল্লাহতে বিশ্বাসী ও তাঁর রাসূলের অনুসারী ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে একমাত্র তাঁকেই ভয় করো। আর তোমরা মানুষের নিকট থাকা তোমাদের সুদী সম্পদগুলো পুনরায় তলব করো না যদি তোমরা আল্লাহ এবং তাঁর নিষিদ্ধ সুদ সম্পর্কে সত্যিকারার্থে বিশ্বাসী হয়ে থাকো।
২৭৯. তোমাদেরকে সুদ সম্পর্কে যা আদেশ করা হয়েছে তা যদি তোমরা না মানো তাহলে তোমরা নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমাদের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করছেন। আর যদি তোমরা তাওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসো এবং সুদী কাজ-কারবার একেবারেই ছেড়ে দাও তাহলে তোমরা কেবল ঋণ দেয়া মূল সম্পদটিরই মালিক হবে। তোমরা নিজেদের পূঁজির বাড়তি কোন কিছু নিয়ে কারো উপর যুলুম করো না। আর পূঁজির কম নিয়েও যুলুমের শিকার হয়ো না।
২৮০. যদি ঋণ গ্রহণকারী ব্যক্তি বিপদগ্রস্ত হয়ে থাকে যার দরুন সে ঋণটুকু পরিশোধ করতে পারছে না তাহলে তার হাতে সম্পদ তথা ঋণ পরিশোধ করার সুযোগ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো। আর যদি তোমরা তার এ করুণ অবস্থা দেখে ঋণের পুরোটুকুই সদকা করে দাও অথবা তার কিছুটা কমিয়ে দাও তাহলে তা তোমাদের জন্য অনেক কল্যাণকর হবে। যদি তোমরা আল্লাহর নিকট এর ফযীলতের কথা জেনে থাকো।
২৮১. তোমরা সেদিনের শাস্তির কথা ভয় করো যেদিন তোমাদের সবাইকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে নেয়া হবে আর তোমরা তাঁর সামনে দাঁড়াবে অতঃপর তোমাদের প্রত্যেককে তার অর্জিত ভালো ও খারাপের প্রতিদান দেয়া হবে। সে দিন কারো নেক কাজের সাওয়াব কমিয়ে তার উপর যুলুমও করা হবে না। আবার কারো অপকর্মের শাস্তিও বাড়িয়ে দেয়া হবে না।
২৮২. হে আল্লাহতে বিশ্বাসী ও তাঁর রাসূলের অনুসারী মু’মিনগণ! যখন তোমরা ঋণের লেনদেন করবে তথা একজন অন্যজনকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঋণ দিবে তখন সে ঋণের চুক্তিটি লিখে রাখো। তোমাদের মধ্যকার লেখক ব্যক্তি যেন শরীয়তসম্মতভাবে সত্য ও ইনসাফের কথাই লেখে। কোন লেখক যেন আল্লাহর শেখানো নিয়মে ইনসাফ ভিত্তিক ঋণের ব্যাপারটি লিখতে অস্বীকার না করে। সে যেন ঋণগ্রহীতা বা ঋণের বোঝা যার উপর অর্পিত হতে যাচ্ছে তার বক্তব্য মোতাবিক লেখে। যা মূলতঃ তার পক্ষ থেকে স্বীকারোক্তি স্বরূপ। উপরন্তু লেখক যেন নিজ প্রভু আল্লাহকে ভয় করে এবং ঋণের পরিমাণ, ধরন ও আদায়ের পদ্ধতি লিপিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে কোন প্রকারের ঘাটতি না করে। তবে ঋণগ্রহীতা যদি আর্থিক লেনদেন ভালোভাবে না জানে অথবা ছোট কিংবা পাগল হওয়ার দরুন তার মাঝে কোন ধরনের দুর্বলতা থাকে অথবা বোবা হওয়ার দরুন লিখাতে না পারে তাহলে তার অভিভাবক সত্য ও ইনসাফের ভিত্তিতে তার পক্ষ থেকে লেখানোর দায়িত্ব গ্রহণ করবে। আর তোমরা লেখার সময় ন্যায়পরায়ণ দু’ জন জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ করবে। যদি দু’ জন পুরুষ না পাওয়া যায় তাহলে যাদের ধার্মিকতা ও আমানতদারিতার উপর তোমরা সন্তুষ্ট এমন একজন পুরুষ ও দু’ জন মহিলার সাক্ষ্য গ্রহণ করবে। যাতে দু’ জন মহিলার কোন একজন যদি সাক্ষ্যের বিষয়টি অথবা তার কিয়দংশ ভুলে যায় তাহলে তার সহযোগী দ্বিতীয়জন তাকে সে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিতে পারে। সাক্ষীরা যেন তাদের কাছ থেকে ঋণের ব্যাপারে সাক্ষ্য চাওয়া হলে তা দিতে অস্বীকার না করে। বরং তাদেরকে সে জন্য ডাকা হলে তা দেয়া তাদের উপর বাধ্যতামূলক। এদিকে নির্দিষ্ট মেয়াদের ঋণ কম হোক বা বেশি হোক তা লিখে নিতে যেন তোমাদের অলসতা না লাগে। কারণ, ঋণের ব্যাপারটি লিখে রাখা আল্লাহর শরীয়তে একটি বড় ন্যায়নীতির কাজ। তেমনিভাবে তা সাক্ষ্য দেয়া ও তা প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারেও অতি সহায়ক। এমনকি তা ঋণের ধরন, পরিমাণ ও সময়ের ব্যাপারে নিঃসন্দেহ থাকার মাধ্যম। তবে তোমাদের মধ্যকার কোন চুক্তি যদি নগদ মূল্য ও উপস্থিত পণ্যের ব্যবসার ব্যাপারে হয়ে থাকে তাহলে তা না লিখলেও কোন অসুবিধে নেই। যেহেতু এখানে তার তেমন কোন প্রয়োজন নেই। তবে দ্ব›দ্ব থেকে দূরে থাকার জন্য সে ব্যাপারেও সাক্ষী বানিয়ে রাখা যুক্তিযুক্ত। কখনো সাক্ষী ও লেখকদেরকে কষ্ট দেয়া জায়িয হবে না। তেমনিভাবে তাদের জন্যও জায়িয হবে না ওদেরকে কষ্ট দেয়া যারা তাদেরকে দিয়ে লিখাতে চায় এবং তাদের সাক্ষ্য কামনা করে। তারপরও যদি তোমরা কারো ক্ষতি করো তাহলে তা হবে আল্লাহর আনুগত্য থেকে বের হয়ে তাঁর অবাধ্যতার দিকে চলে যাওয়া। হে মু’মিনরা! তোমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মানার মাধ্যমে তাঁকে ভয় করো। ফলে তিনি তোমাদের দুনিয়া ও আখিরাত ঠিক থাকে এমন সব কিছু তোমাদেরকে শিক্ষা দিবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা সর্ব বিষয়ে জ্ঞাত। তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপন নয়।
২৮৩. তোমরা যদি মুসাফির হও আর সেখানে তোমাদের ঋণ সংক্রান্ত চুক্তি লেখার জন্য কাউকে না পাও তাহলে ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধ করা পর্যন্ত পাওনাদারের নিকট কোন কিছু জামানত স্বরূপ বন্ধক রাখলেই চলবে। আর যদি একে অপরের উপর বিশ্বস্ত থাকে তাহলে সেখানে কোন কিছুরই দরকার নেই। না লেখার, না সাক্ষীর, না বন্ধকের। তখন শুধু ঋণটুকু ঋণগ্রহীতার জিম্মায় আমানত স্বরূপই থাকবে। যা তাকে অবশ্যই ঋণদাতার নিকট পৌঁছিয়ে দিতে হবে। উপরন্তু সে যেন এ আমানতের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে এবং তা থেকে কোন কিছু অস্বীকার না করে। আর যদি সে কোন কিছু অস্বীকার করে বসে তাহলে যে ব্যক্তি উক্ত লেনদেনের সময় উপস্থিত ছিলো তাকে অবশ্যই এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিতে হবে। সে যেন কখনো এ ব্যাপারে সাক্ষ্য গোপন না করে। তবে যে ব্যক্তি তা গোপন রাখবে তার অন্তর নিশ্চয়ই পাপীর অন্তর। আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের কর্মকাÐ সবই জানেন। তাঁর নিকট কোন কিছু গোপন নয়। তাই তিনি অচিরেই তোমাদের কর্মকাÐের প্রতিদান দিবেন।
২৮৪. আকাশ ও জমিনের সবকিছুর মালিকই একমাত্র আল্লাহ। তিনি তা সৃষ্টি করেছেন। তার মালিকও তিনি। পরিচালকও তিনি। তোমরা নিজেদের অন্তরে যা কিছু লুকিয়ে রাখো অথবা প্রকাশ করো তা সবই আল্লাহ জানেন। তাই অচিরেই তিনি তোমাদের কাছ থেকে এর হিসাব নিবেন। অতঃপর তিনি দয়া ও অনুগ্রহ করে যাকে চান তাকে ক্ষমা করবেন। আর যাকে চান তাকে ইনসাফ ও হিকমতের ভিত্তিতে শাস্তি দিবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ সব কিছুর উপরই ক্ষমতাবান।
২৮৫. রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর যা নাযিল করা হয়েছে তিনি নিজেও তার উপর ঈমান এনেছেন এবং মু’মিনরাও ঈমান এনেছেন। আসলে তারা সবাই আল্লাহ, তাঁর সকল ফিরিশতা, নবীদের উপর নাযিলকৃত সকল কিতাব ও তাঁর প্রেরিত সকল রাসূলের উপর ঈমান এনেছে। তারা রাসূলদের সকলের উপর ঈমান এনেছে এই বলে যে, আমরা আল্লাহর প্রেরিত রাসূলদের মাঝে কোন পার্থক্য সৃষ্টি করবো না। তারা আরো বলে: আমরা আপনার আদেশ-নিষেধ শুনেছি এবং আপনার সকল আদেশ-নিষেধ কর্মে বাস্তবায়ন করে আপনার আনুগত্য করেছি। হে আমাদের প্রভু! আমরা আপনার ক্ষমা কামনা করছি। আমাদেরকে সকল বিষয়ে কেবলমাত্র আপনার দিকেই ফিরে যেতে হবে।
২৮৬. আল্লাহ তা‘আলা কখনো কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজ চাপিয়ে দেন না। কারণ, আল্লাহর দ্বীন সহজ ও সরলতার উপর প্রতিষ্ঠিত। তাতে কোন কষ্ট ও কঠোরতা নেই। সুতরাং যে ব্যক্তি কোন কল্যাণের কাজ করবে তাকে তার কর্মের সাওয়াব দেয়া হবে। তাতে কোন ধরনের কমতি করা হবে না। আর যে কোন অকল্যাণকর কাজ করবে তাকে তার অর্জিত পাপের কুফল অবশ্যই ভোগ করতে হবে। কেউ তার পক্ষ থেকে কখনো তা বহন করবে না। হে ঈমানদারগণ! তোমরা এই বলে দু‘আ করো: হে আমাদের প্রভু! যদি আমরা অনিচ্ছাকৃত কোন কথা ও কাজে ভুল করে ফেলি তাহলে আপনি আমাদেরকে শাস্তি দিবেন না। হে আমাদের প্রভু! আপনি আমাদেরকে এমন কোন কিছু করতে বাধ্য করবেন না যা করতে আমরা অক্ষম ও আমাদের জন্য তা করা খুবই কষ্টকর। যেমন আপনি বাধ্য করেছেন আমাদের পূর্ববর্তী ইহুদিদেরকে। যা ছিলো মূলতঃ তাদের যুলুমের শাস্তি। আর আপনি আমাদের উপর এমন কোন আদেশ ও নিষেধ চাপিয়ে দিবেন না যা পালন করা আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর অথবা আমরা তা করতে পারবো না। আর আপনি আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দিন এবং নিজ অনুগ্রহে আপনি আমাদেরকে দয়া করুন। আপনিই তো আমাদের অভিভাবক ও সাহায্যকারী। তাই আপনি আমাদেরকে কাফির সম্প্রদায়ের উপর বিজয়ী করুন।
سورة البقرة
معلومات السورة
الكتب
الفتاوى
الأقوال
التفسيرات

سورةُ (البقرةِ) هي أطولُ سورةٍ في القرآنِ العظيم، وفيها أطولُ آيةٍ؛ وهي آيةُ (الدَّين)، وكذلك فيها أعظمُ آيةٍ؛ وهي آيةُ (الكُرْسيِّ)، وإنما جاءت كذلك - لا سيَّما وهي ثاني سورةٍ في القرآن الكريم -؛ لأنها أبانت عن مقصدِ القرآن الأعظم، وفصَّلتْ في أحكامِ الدِّينِ وشرائعه ومعاملاته؛ فافتُتحت ببيانِ مقصدِ هذا الكتاب العظيم؛ وهو {هُدٗى لِّلْمُتَّقِينَ}؛ فهذا الكتابُ إنما نزَل للهداية والإرشاد. ثم أوضَحتِ السُّورةُ ردودَ أفعال الناس تُجاهَ هذا الكتاب، مقسِّمةً إياهم إلى (مؤمن، وكافر، ومنافق)، كما فصَّلتِ الكثيرَ من الشرائع المتعلقة بالصَّدَقات، والطلاق، والمعاملات. ولهذه السُّورةِ فضلٌ عظيم؛ فلا يستطيعها السَّحَرةُ والبَطَلة، كما قُدِّمَ حافظُها على غيره، وكانت تُعطَى له القيادةُ والرياسة؛ لعظيم شأنها، ولِما اشتملت عليه من أحكامٍ. وفيها قصةُ (بقرةِ بني إسرائيل) التي سُمِّيتِ السورة باسمها.

ترتيبها المصحفي
2
نوعها
مدنية
ألفاظها
6140
ترتيب نزولها
87
العد المدني الأول
285
العد المدني الأخير
285
العد البصري
287
العد الكوفي
286
العد الشامي
285

* قوله تعالى: ﴿فَوَيْلٞ لِّلَّذِينَ يَكْتُبُونَ اْلْكِتَٰبَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هَٰذَا مِنْ عِندِ اْللَّهِ لِيَشْتَرُواْ بِهِۦ ثَمَنٗا قَلِيلٗاۖ فَوَيْلٞ لَّهُم مِّمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٞ لَّهُم مِّمَّا يَكْسِبُونَ﴾ [البقرة: 79]:

عن ابنِ عباسٍ رضي الله عنهما: {فَوَيْلٞ لِّلَّذِينَ يَكْتُبُونَ اْلْكِتَٰبَ بِأَيْدِيهِمْ}، قال: «نزَلتْ في أهلِ الكتابِ». "خلق أفعال العباد" (ص 54).

* قوله تعالى: ﴿وَلَمَّا جَآءَهُمْ كِتَٰبٞ مِّنْ عِندِ اْللَّهِ مُصَدِّقٞ لِّمَا مَعَهُمْ وَكَانُواْ مِن قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى اْلَّذِينَ كَفَرُواْ﴾ [البقرة: 89]:

عن عاصمِ بن عُمَرَ بن قتادةَ، عن رجالٍ مِن قومِه، قالوا: «إنَّ ممَّا دعانا إلى الإسلامِ  مع رحمةِ اللهِ تعالى وهُدَاه لنا: لَمَا كنَّا نَسمَعُ مِن رجالِ يهُودَ، وكنَّا أهلَ شِرْكٍ أصحابَ أوثانٍ، وكانوا أهلَ كتابٍ، عندهم عِلْمٌ ليس لنا، وكانت لا تزالُ بيننا وبينهم شرورٌ، فإذا نِلْنا منهم بعضَ ما يَكرَهون، قالوا لنا: إنَّه قد تقارَبَ زمانُ نبيٍّ يُبعَثُ الآنَ، نقتُلُكم معه قَتْلَ عادٍ وإِرَمَ، فكنَّا كثيرًا ما نَسمَعُ ذلك منهم، فلمَّا بعَثَ اللهُ رسولَه ﷺ، أجَبْناه حين دعانا إلى اللهِ تعالى، وعرَفْنا ما كانوا يَتوعَّدوننا به، فبادَرْناهم إليه، فآمَنَّا به، وكفَروا به؛ ففينا وفيهم نزَلَ هؤلاء الآياتُ مِن البقرةِ: ﴿وَلَمَّا جَآءَهُمْ كِتَٰبٞ مِّنْ عِندِ اْللَّهِ مُصَدِّقٞ لِّمَا مَعَهُمْ وَكَانُواْ مِن قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى اْلَّذِينَ كَفَرُواْ فَلَمَّا جَآءَهُم مَّا عَرَفُواْ كَفَرُواْ بِهِۦۚ فَلَعْنَةُ اْللَّهِ عَلَى اْلْكَٰفِرِينَ﴾ [البقرة: 89]». سيرة ابن هشام (1/213).

* قوله تعالى: ﴿مَن ‌كَانَ ‌عَدُوّٗا ‌لِّلَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَرُسُلِهِۦ وَجِبْرِيلَ وَمِيكَىٰلَ فَإِنَّ اْللَّهَ عَدُوّٞ لِّلْكَٰفِرِينَ﴾ [البقرة: 98]:

عن عبدِ اللهِ بن عباسٍ رضي الله عنهما، قال: «أقبَلتْ يهُودُ إلى النبيِّ ﷺ، فقالوا: يا أبا القاسمِ، نسألُك عن أشياءَ، فإن أجَبْتَنا فيها اتَّبَعْناك، وصدَّقْناك، وآمَنَّا بك.

قال: فأخَذَ عليهم ما أخَذَ إسرائيلُ على بَنِيهِ إذ قالوا: ﴿اْللَّهُ ‌عَلَىٰ ‌مَا نَقُولُ وَكِيلٞ﴾ [يوسف: 66].

قالوا: أخبِرْنا عن علامةِ النبيِّ ﷺ، قال: «تنامُ عيناه، ولا ينامُ قلبُه».

قالوا: أخبِرْنا كيف تُؤنِثُ المرأةُ، وكيف تُذكِرُ؟ قال: «يلتقي الماءانِ؛ فإذا علا ماءُ المرأةِ ماءَ الرَّجُلِ آنثَتْ، وإذا علا ماءُ الرَّجُلِ ماءَ المرأةِ أذكَرتْ»، قالوا: صدَقْتَ.

قالوا: فأخبِرْنا عن الرَّعْدِ؛ ما هو؟ قال: «مَلَكٌ مِن الملائكةِ موكَّلٌ بالسَّحابِ، معه مَخاريقُ مِن نارٍ، يسُوقُ بها السَّحابَ حيث شاء اللهُ»، قالوا: فما هذا الصوتُ الذي يُسمَعُ؟ قال: «زَجْرُه بالسَّحابِ إذا زجَرَه، حتى ينتهيَ إلى حيث أُمِرَ»، قالوا: صدَقْتَ.

قالوا: أخبِرْنا ما حرَّم إسرائيلُ على نفسِه؟ قال: «كان يسكُنُ البَدْوَ، فاشتكى عِرْقَ النَّسَا، فلم يَجِدْ شيئًا يلاوِمُه إلا لحومَ الإبلِ وألبانَها؛ فلذلك حرَّمها»، قالوا: صدَقْتَ.

قالوا: أخبِرْنا مَن الذي يأتيك مِن الملائكةِ؛ فإنَّه ليس مِن نبيٍّ إلا يأتيه مَلَكٌ مِن الملائكةِ مِن عندِ ربِّهِ بالرسالةِ وبالوحيِ، فمَن صاحبُك؛ فإنَّما بَقِيَتْ هذه حتى نُتابِعَك؟ قال: «هو جِبْريلُ»، قالوا: ذلك الذي يَنزِلُ بالحربِ وبالقتلِ، ذاك عدوُّنا مِن الملائكةِ، لو قلتَ: ميكائيلُ، الذي يَنزِلُ بالقَطْرِ والرحمةِ؛ تابَعْناك.

فأنزَلَ اللهُ تعالى: ﴿ ‌مَن ‌كَانَ ‌عَدُوّٗا ‌لِّلَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَرُسُلِهِۦ وَجِبْرِيلَ وَمِيكَىٰلَ فَإِنَّ اْللَّهَ عَدُوّٞ لِّلْكَٰفِرِينَ﴾ [البقرة: 98]». أخرجه أحمد (2514).

* قولُه تعالى: {وَدَّ كَثِيرٞ مِّنْ أَهْلِ اْلْكِتَٰبِ لَوْ يَرُدُّونَكُم مِّنۢ بَعْدِ إِيمَٰنِكُمْ كُفَّارًا حَسَدٗا مِّنْ عِندِ أَنفُسِهِم مِّنۢ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ اْلْحَقُّۖ فَاْعْفُواْ وَاْصْفَحُواْ} [البقرة: 109]:

جاء عن كعبِ بن مالكٍ رضي الله عنه: «أنَّ كعبَ بنَ الأشرَفِ اليهوديَّ كان شاعرًا، وكان يهجو النبيَّ ﷺ، ويُحرِّضُ عليه كفَّارَ قُرَيشٍ في شِعْرِه، وكان المشركون واليهودُ مِن المدينةِ حين قَدِمَها رسولُ اللهِ ﷺ يُؤذُون النبيَّ ﷺ وأصحابَه أشَدَّ الأذى، فأمَر اللهُ تعالى نبيَّهُ بالصَّبْرِ على ذلك، والعفوِ عنهم؛ وفيهم أُنزِلتْ: {وَدَّ كَثِيرٞ مِّنْ أَهْلِ اْلْكِتَٰبِ} إلى قولِه: {فَاْعْفُواْ وَاْصْفَحُواْ} [البقرة: 109]». أخرجه أبو داود (رقم ٣٠٠٠).

* قولُه تعالى: ﴿وَلِلَّهِ ‌اْلْمَشْرِقُ ‌وَاْلْمَغْرِبُۚ فَأَيْنَمَا تُوَلُّواْ فَثَمَّ وَجْهُ اْللَّهِۚ إِنَّ اْللَّهَ وَٰسِعٌ عَلِيمٞ﴾ [البقرة: 115].

عن عبدِ اللهِ بن عُمَرَ - رضي الله عنهما -، قال: «كان رسولُ اللهِ ﷺ يُصلِّي وهو مُقبِلٌ مِن مكَّةَ إلى المدينةِ على راحلتِهِ حيث كان وجهُهُ، قال: وفيه نزَلتْ: ﴿فَأَيْنَمَا تُوَلُّواْ فَثَمَّ وَجْهُ اْللَّهِۚ﴾». أخرجه مسلم (700).

* قولُه تعالى: ﴿وَإِذْ ‌جَعَلْنَا ‌اْلْبَيْتَ مَثَابَةٗ لِّلنَّاسِ وَأَمْنٗا وَاْتَّخِذُواْ مِن مَّقَامِ إِبْرَٰهِـۧمَ مُصَلّٗىۖ وَعَهِدْنَآ إِلَىٰٓ إِبْرَٰهِـۧمَ وَإِسْمَٰعِيلَ أَن طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّآئِفِينَ وَاْلْعَٰكِفِينَ وَاْلرُّكَّعِ اْلسُّجُودِ﴾ [البقرة: 125].

سببُ نزولِها: ما جاء عن أنسٍ - رضي الله عنه -، قال: «قال عُمَرُ بنُ الخطَّابِ - رضي الله عنه -: وافَقْتُ ربِّي في ثلاثٍ، فقلتُ: يا رسولَ اللهِ، لو اتَّخَذْنا مِن مقامِ إبراهيمَ مُصلًّى؛ فنزَلتْ: ﴿ ‌وَاْتَّخِذُواْ ‌مِن ‌مَّقَامِ إِبْرَٰهِـۧمَ مُصَلّٗىۖ ﴾ [البقرة: 125].

وآيةُ الحجابِ، قلتُ: يا رسولَ اللهِ، لو أمَرْتَ نساءَك أن يَحتجِبْنَ؛ فإنَّه يُكلِّمُهنَّ البَرُّ والفاجرُ؛ فنزَلتْ آيةُ الحجابِ.

واجتمَعَ نساءُ النبيِّ ﷺ في الغَيْرةِ عليه، فقلتُ لهنَّ: ﴿ ‌عَسَىٰ ‌رَبُّهُۥٓ إِن طَلَّقَكُنَّ أَن يُبْدِلَهُۥٓ أَزْوَٰجًا خَيْرٗا مِّنكُنَّ ﴾؛ فنزَلتْ هذه الآيةُ». أخرجه البخاري (٤٠٢).

* قوله تعالى: {سَيَقُولُ اْلسُّفَهَآءُ مِنَ اْلنَّاسِ مَا وَلَّىٰهُمْ عَن قِبْلَتِهِمُ اْلَّتِي كَانُواْ عَلَيْهَاۚ} [البقرة: 142]:
عن البراءِ رضي الله عنه، قال: كان رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُصلِّي نحوَ بيتِ المقدسِ، ويُكثِرُ النظرَ إلى السماءِ ينتظِرُ أمرَ اللهِ؛ فأنزَلَ اللهُ: {قَدْ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي اْلسَّمَآءِۖ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةٗ تَرْضَىٰهَاۚ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ اْلْمَسْجِدِ اْلْحَرَامِۚ} [البقرة: 144]،  فقال رجالٌ مِن المسلمين: وَدِدْنا لو عَلِمْنا عِلْمَ مَن مات قبل أن نُصرَفَ إلى القِبْلةِ؛ فأنزَلَ اللهُ: {وَمَا كَانَ اْللَّهُ لِيُضِيعَ إِيمَٰنَكُمْۚ} [البقرة: 143]، وقال السُّفهاءُ مِن الناسِ: ما ولَّاهم عن قِبْلتِهم التي كانوا عليها؟ فأنزَلَ اللهُ: {سَيَقُولُ اْلسُّفَهَآءُ مِنَ اْلنَّاسِ} [البقرة: 142] إلى آخرِ الآيةِ. "الصحيح المسند من أسباب النزول" (ص 25، 26).

* قولُه تعالى: ﴿ وَمَا كَانَ اْللَّهُ لِيُضِيعَ إِيمَٰنَكُمْۚ ﴾ [البقرة: 143].

ممَّا صحَّ: ما جاء عن عبدِ اللهِ بن عباسٍ - رضي الله عنهما -، قال: «لمَّا وُجِّهَ النبيُّ ﷺ إلى الكعبةِ، قالوا: يا رسولَ اللهِ، كيف بإخوانِنا الذين ماتوا وهم يُصَلُّون إلى بيتِ المقدسِ؟ فأنزَلَ اللهُ: ﴿وَمَا كَانَ اْللَّهُ لِيُضِيعَ إِيمَٰنَكُمْۚ﴾ [البقرة: 143]». أخرجه أبو داود (٤٦٨٠)، والترمذي (٢٩٦٤).

* قولُه تعالى: ﴿ لَآ إِكْرَاهَ فِي اْلدِّينِۖ ﴾ [البقرة: 256].

جاء عن عبدِ اللهِ بن عباسٍ - رضي الله عنهما - أنَّه قال: «كانت المرأةُ مِن الأنصارِ تكونُ مِقْلاةً، لا يكادُ يعيشُ لها ولَدٌ، فتَجعَلُ على نفسِها إن عاش لها ولَدٌ أن تُهوِّدَهُ، فلمَّا أُجلِيَتْ بنو النَّضيرِ، كان فيهم مِن أبناءِ الأنصارِ، فقالوا: لا ندَعُ أبناءَنا؛ فأنزَلَ اللهُ: ﴿ لَآ إِكْرَاهَ فِي اْلدِّينِۖ ﴾ [البقرة: 256]». أخرجه أبو داود (٢٦٨٢).

* قولُه تعالى: ﴿لَا يُكَلِّفُ اْللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَاۚ لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اْكْتَسَبَتْۗ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَآ إِن نَّسِينَآ أَوْ أَخْطَأْنَاۚ ﴾ [البقرة: 286].

سببُ نزولِ هذه الآيةِ: ما جاء عن أبي هُرَيرةَ - رضي الله عنه -، قال: «لمَّا نزَلتْ على رسولِ اللهِ ﷺ: ﴿ لِّلَّهِ مَا فِي اْلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي اْلْأَرْضِۗ وَإِن تُبْدُواْ مَا فِيٓ أَنفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ يُحَاسِبْكُم بِهِ اْللَّهُۖ فَيَغْفِرُ لِمَن يَشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَن يَشَآءُۗ وَاْللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٖ قَدِيرٌ ﴾ [البقرة: 284]، قال: فاشتَدَّ ذلك على أصحابِ رسولِ اللهِ ﷺ، فأتَوْا رسولَ اللهِ ﷺ، ثم برَكُوا على الرُّكَبِ، فقالوا: أيْ رسولَ اللهِ، كُلِّفْنا مِن الأعمالِ ما نُطِيقُ؛ الصَّلاةَ، والصِّيامَ، والجهادَ، والصَّدقةَ، وقد أُنزِلتْ عليك هذه الآيةُ ولا نُطِيقُها، قال رسولُ اللهِ ﷺ: «أتُريدون أن تقولوا كما قال أهلُ الكتابَينِ مِن قَبْلِكم: سَمِعْنا وعصَيْنا؟! بل قُولوا: سَمِعْنا وأطَعْنا، غُفْرانَكَ ربَّنا وإليك المَصِيرُ»، قالوا: سَمِعْنا وأطَعْنا، غُفْرانَكَ ربَّنا وإليك المَصِيرُ، فلمَّا اقترَأَها القومُ، ذَلَّتْ بها ألسنتُهم؛ فأنزَلَ اللهُ في إثرِها: ﴿ ءَامَنَ اْلرَّسُولُ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيْهِ مِن رَّبِّهِۦ وَاْلْمُؤْمِنُونَۚ كُلٌّ ءَامَنَ بِاْللَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٖ مِّن رُّسُلِهِۦۚ وَقَالُواْ سَمِعْنَا وَأَطَعْنَاۖ غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ اْلْمَصِيرُ ﴾ [البقرة: 285]، فلمَّا فعَلوا ذلك، نسَخَها اللهُ تعالى؛ فأنزَلَ اللهُ عز وجل: ﴿ لَا يُكَلِّفُ اْللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَاۚ لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اْكْتَسَبَتْۗ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَآ إِن نَّسِينَآ أَوْ أَخْطَأْنَاۚ ﴾ [البقرة: 286]، قال: نَعم. ﴿ رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَآ إِصْرٗا كَمَا حَمَلْتَهُۥ عَلَى اْلَّذِينَ مِن قَبْلِنَاۚ ﴾ [البقرة: 286]، قال: نَعم. {رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِۦۖ}، قال: نَعم. {وَاْعْفُ عَنَّا وَاْغْفِرْ لَنَا وَاْرْحَمْنَآۚ أَنتَ مَوْلَىٰنَا فَاْنصُرْنَا عَلَى اْلْقَوْمِ اْلْكَٰفِرِينَ}، قال: نَعم». صحيح مسلم (125).

* ثبَت لسورة (البقرة) اسمٌ آخَرُ؛ وهو (الزَّهراء):

لِما جاء في حديث أبي أُمامةَ الباهليِّ رضي الله عنه، قال: سَمِعْتُ رسولَ اللهِ ﷺ يقول: «اقرَؤُوا الزَّهْراوَينِ: البقرةَ، وسورةَ آلِ عمرانَ». أخرجه مسلم (804).

«والزَّهْراوانِ: أي: المُنِيرتانِ المُضيئتان، واحدتُها: زَهْراءُ». "لسان العرب" (4 /332).

وقد عَدَّ بعضُ العلماء أنَّ ذِكْرَ (الزَّهْراوَينِ) في هذا الحديثِ هو مِن باب الوصف، لا التسمية. انظر: "التحرير والتنوير" لابن عاشور (3 /143)، "التفسير الموضوعي لسور القرآن الكريم" لمجموعة من العلماء (1 /20).

* أمَرنا النبيُّ ﷺ أن نقرأَها في بيوتِنا؛ فإنَّ الشيطانَ يَنفِرُ منها:

كما جاء عن أبي هُرَيرةَ رضي الله عنه، أنَّ رسولَ الله ﷺ قال: «لا تَجعَلوا بيوتَكم مقابرَ؛ إنَّ الشيطانَ يَنفِرُ مِن البيتِ الذي تُقرأُ فيه سورةُ البقرةِ». أخرجه مسلم (780).

* هي السُّورة التي لا يستطيعها البَطَلةُ:

فعن بُرَيدةَ بن الحُصَيب الأَسْلمي رضي الله عنه، قال: كنتُ جالسًا عند النبيِّ ﷺ، فسَمِعْتُه يقول: «تَعلَّموا سورةَ البقرةِ؛ فإنَّ أَخْذَها برَكةٌ، وتَرْكَها حَسْرةٌ، ولا يستطيعُها البَطَلةُ». أخرجه أحمد (٢٢٩٥٠).

* آخِرُ آيتَينِ منها تكفيانِ قارئَهما:

فعن عبدِ الرحمنِ بن يَزيدَ، قال: لَقِيتُ أبا مسعودٍ رضي الله عنه عند البيتِ، فقلتُ: حديثٌ بلَغني عنك في الآيتَينِ في سورةِ (البقرة)، فقال: نعم، قال رسولُ الله ﷺ: «الآيتانِ مِن آخِرِ سورةِ البقرةِ، مَن قرَأهما في ليلةٍ كَفَتَاهُ». أخرجه مسلم (807).

* سورة (البقرة) تُحاجُّ عن صاحبها يومَ القيامة:

فعن أبي أُمامةَ الباهليِّ رضي الله عنه، قال: سَمِعْتُ رسولَ الله ﷺ يقول: «اقرَؤوا القرآنَ؛ فإنَّه يأتي يومَ القيامةِ شفيعًا لأصحابِه؛ اقرَؤوا الزَّهْراوَينِ: البقرةَ، وسورةَ آلِ عِمْرانَ؛ فإنَّهما تأتيانِ يومَ القيامةِ كأنَّهما غَمامتانِ، أو كأنَّهما غَيَايتانِ، أو كأنَّهما فِرْقانِ مِن طيرٍ صوافَّ، تُحاجَّانِ عن أصحابِهما، اقرَؤوا سورةَ البقرةِ؛ فإنَّ أَخْذَها برَكةٌ، وتَرْكَها حَسْرةٌ، ولا يستطيعُها البَطَلةُ». أخرجه مسلم (804).

* لحافِظِها فضلٌ خاصٌّ وشأن عظيم:

فعن أنسٍ رضي الله عنه، قال: «كان الرَّجُلُ إذا قرأ البقرةَ وآلَ عِمْرانَ، جَدَّ فينا - يعني: عظُمَ -»، وفي روايةٍ: «يُعَدُّ فينا عظيمًا»، وفي أخرى: «عُدَّ فينا ذا شأنٍ». أخرجه أحمد (3/120) (12236).

وعن أبي هُرَيرةَ رضي الله عنه، قال: بعَث رسولُ اللهِ ﷺ بَعْثًا، وهم ذو عَدَدٍ، فاستقرَأهم، فاستقرَأ كلَّ رجُلٍ منهم ما معه مِن القرآنِ، فأتى على رجُلٍ منهم - مِن أحدَثِهم سنًّا -، فقال: «ما معك يا فلانُ؟!»، قال: معي كذا وكذا، وسورةُ البقرةِ، قال: «أمعك سورةُ البقرةِ؟!»، فقال: نعم، قال: «فاذهَبْ؛ فأنت أميرُهم»، فقال رجُلٌ مِن أشرافِهم: واللهِ يا رسولَ اللهِ، ما منَعني أن أتعلَّمَ سورةَ البقرةِ إلا خشيةُ ألَّا أقُومَ بها! فقال رسولُ اللهِ ﷺ: «تعلَّموا القرآنَ، واقرَؤوه؛ فإنَّ مثَلَ القرآنِ لِمَن تعلَّمَه، فقرَأه وقام به: كمثَلِ جرابٍ محشوٍّ مِسْكًا، يفُوحُ رِيحُه في كلِّ مكانٍ، ومثَلَ مَن تعلَّمَه، فيرقُدُ وهو في جوفِه: كمثَلِ جرابٍ وُكِئَ على مِسْكٍ». أخرجه الترمذي (٢٨٧٦).

* لها نزَلتِ الملائكةُ مستمِعةً:

فعن أُسَيدِ بن حُضَيرٍ رضي الله عنه، قال: يا رسولَ اللهِ، بينما أنا أقرأُ الليلةَ سورةَ البقرةِ، إذ سَمِعْتُ وَجْبةً مِن خَلْفي، فظنَنْتُ أنَّ فَرَسي انطلَقَ، فقال رسولُ اللهِ ﷺ: «اقرَأْ يا أبا عَتِيكٍ»، فالتفَتُّ فإذا مِثْلُ المِصباحِ مُدَلًّى بين السماءِ والأرضِ، ورسولُ اللهِ ﷺ يقولُ: «اقرَأْ يا أبا عَتِيكٍ»، فقال: يا رسولَ اللهِ، فما استطعتُ أن أمضيَ، فقال رسولُ اللهِ ﷺ: «تلك الملائكةُ؛ نزَلتْ لقراءةِ سورةِ البقرةِ، أمَا إنَّك لو مضَيْتَ، لرأيْتَ العجائبَ». أخرجه ابن حبان (779).

* فيها أعظَمُ آيةٍ في كتابِ الله؛ وهي آيةُ (الكُرْسيِّ):

عن أُبَيِّ بن كعبٍ رضي الله عنه، قال: قال رسولُ الله ﷺ: «يا أبا المُنذِرِ، أتدري أيُّ آيةٍ مِن كتابِ اللهِ معك أعظَمُ؟»، قال: قلتُ: اللهُ ورسولُه أعلَمُ، قال: «يا أبا المُنذِرِ، أتدري أيُّ آيةٍ مِن كتابِ اللهِ معك أعظَمُ؟»، قلتُ: {اْللَّهُ ‌لَآ ‌إِلَٰهَ ‌إِلَّا ‌هُوَ ‌اْلْحَيُّ ‌اْلْقَيُّومُۚ}، قال: فضرَب في صدري، وقال: «واللهِ، لِيَهْنِكَ العِلْمُ أبا المُنذِرِ». أخرجه مسلم (٨١٠).

* لعلَّ رسولَ الله ﷺ قرَأها في صلاةِ الكسوف:

فقد جاء عن عائشةَ أمِّ المؤمنين رضي الله عنها أنها قالت: «لمَّا كسَفتِ الشمسُ على عهدِ رسولِ اللهِ ﷺ، توضَّأَ، وأمَرَ فنُودي: إنَّ الصَّلاةَ جامعةٌ، فقام، فأطال القيامَ في صلاتِهِ، قالت: فأحسَبُه قرَأَ سورةَ البقرةِ، ثم ركَعَ، فأطال الرُّكوعَ، ثم قال: سَمِعَ اللهُ لِمَن حَمِدَه، ثم قام مِثْلَ ما قام، ولم يسجُدْ، ثم ركَعَ، فسجَدَ، ثم قام، فصنَعَ مِثْلَ ما صنَعَ، ثم ركَعَ ركعتَينِ في سَجْدةٍ، ثم جلَسَ، وجُلِّيَ عن الشمسِ». أخرجه البخاري (١٠٤٦).

* وكذا كان يَقرَؤُها ﷺ في قيامِهِ بالليل:

فعن حُذَيفةَ بن اليمانِ رضي الله عنهما، قال: «صلَّيْتُ مع رسولِ اللهِ ﷺ ذاتَ ليلةٍ، فاستفتَحَ بسورةِ البقرةِ، فقرَأَ بمائةِ آيةٍ لم يَركَعْ، فمضى، قلتُ: يَختِمُها في الرَّكعتَينِ، فمضى، قلتُ: يَختِمُها ثمَّ يَركَعُ، فمضى حتى قرَأَ سورةَ النِّساءِ، ثم قرَأَ سورةَ آلِ عِمْرانَ، ثم ركَعَ نحوًا مِن قيامِهِ، يقولُ في ركوعِهِ: سبحانَ ربِّيَ العظيمِ، سبحانَ ربِّيَ العظيمِ، سبحانَ ربِّيَ العظيمِ، ثم رفَعَ رأسَهُ، فقال: سَمِعَ اللهُ لِمَن حَمِدَه، ربَّنا لك الحمدُ، وأطال القيامَ، ثم سجَدَ، فأطال السُّجودَ، يقولُ في سجودِهِ: سبحانَ ربِّيَ الأعلى، سبحانَ ربِّيَ الأعلى، سبحانَ ربِّيَ الأعلى، لا يمُرُّ بآيةِ تخويفٍ أو تعظيمٍ للهِ عزَّ وجلَّ إلا ذكَرَهُ». أخرجه النسائي (١١٣٢). وقد ورَد نحوُ هذا الحديث عن عوفِ بن مالك الأشجَعيِّ. انظر: النسائي (١١٣١).

حوَتْ سورةُ (البقرةِ) كثيرًا من الموضوعات المتنوِّعة، وقد جاءت على هذا الترتيبِ:

هداية القرآن وخلافة الإنسان (١-٣٩).

هداية القرآن وموقف الناس منها (١-٢٠).

أمر الناس باتِّباع المنهج، ونموذج الاستخلاف الأول (٢١- ٣٩).

بنو إسرائيل ومسوِّغات عزلِهم عن الخلافة (٤٠-١٦٢).

تذكير وعتاب (٤٠-٤٨).

ثم ذِكر أحوال بني إسرائيل ومسوِّغات عزلِهم عن الخلافة (٤٩-٧٤).

وبعد ذلك ذِكر مواقفِ اليهود المعاصرين للنبيِّ عليه السلام (٧٥-١٢٣).

دعوة إبراهيم وتبرئتها من انتساب اليهود والنصارى إليها (١٢٤-١٤١).

انتقال القِبْلة والإمامة في الدِّين لأمَّة محمد عليه السلام (١٤٢-١٦٢).

مقوِّمات استحقاقِ أمَّة الإسلام للخلافة (١٦٣-٢٨٣).

الشرائع التفصيلية للدِّين الإسلامي (١٦٣-١٧٧).

تفصيل بعض أمور البِرِّ (١٧٨-٢٠٣).

نماذجُ بشرية ومواعظُ إلهية (٢٠٤-٢٢٠).

تفصيل أحكام الأُسرة (٢٢١-٢٤٢).

قِصص الإحياء والإماتة (٢٤٣-٢٦٠).

الإنفاق؛ آدابه والمستحِقون له (٢٦١-٢٧٤).

حفظ الأموال عن الحرام والإضاعة (٢٧٥-٢٨٣).

دعاءٌ وإجابة (٢٨٤-٢٨٦).

ينظر: "التفسير الموضوعي لسُوَر القرآن الكريم" لمجموعة من العلماء (1 /19).

جاءت هذه السُّورةُ الكريمة ببيانِ منهج خلافة الله في الأرض بين مَن أضاعوه ومَن أقاموه، وسُمُوِّ هذا الدِّين على ما سبَقه، وعُلُوِّ هَدْيِه، وأصولِ تطهيره النفوسَ بعد تبيينِ شرائعِ هذا الدِّين لأتباعه، وإصلاحِ مجتمَعِهم بعد إقامة الدليل على أنَّ الكتابَ هدًى؛ ليُتَّبعَ في كلِّ حال. وأعظَمُ ما يَهدِي إليه: الإيمانُ بالغيب؛ ومَجمَعُه: الإيمان بالآخرة، ومدارُه: الإيمان بالبعث، الذي أعرَبتْ عنه قصةُ (البقرة)، التي مدارها: الإيمانُ بالغيب؛ فلذلك سُمِّيتْ بها السورةُ. ينظر: "مصاعد النظر" للبقاعي (2 /10)، و"التحرير والتنوير" لابن عاشور (1 /203).